শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন

বিশিষ্ট ইরানি কবি তলেব-এ অমোলির জীবনী ও তার সাহিত্য-কর্ম

খবরপত্র ডেক্স:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২

আজ আমরা হিজরি ১১ শতকের তথা খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতকের প্রখ্যাত ইরানি কবি তলেব-এ অমোলি-এর জীবন ও রচনা সম্পর্কে কথা বলব। কবি ত’লেব-এ অমোলি ছিলেন হিজরি ১১ শতকের তথা খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতকের একজন প্রথম শ্রেণীর ইরানি কবি। তার জন্ম হয়েছিল ইরানের মজান্দারান প্রদেশের অমোল গ্রামে এক সভ্রান্ত ও শিক্ষিত পরিবারে। জন্মের সন ৯৯১ হিজরি বা ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দ। তার মূল নাম ছিল সাইয়্যিদ মোহাম্মাদ এবং বাবার নাম ছিল আবদুল্লাহ। ত’লেব তার উপাধি বা ছদ্মনাম। ১৫-১৬ বছর বয়সেই তিনি গণিত ও সুলেখন-শিল্পসহ প্রচলিত নানা বিদ্যায় পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। কোনো কোনো সূত্রে বলা হয় ত’লেব-এ অমোলি যৌবনে কোনো এক নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়েও পরিণয়ে ব্যর্থ হয়ে অমোল ছেড়ে অন্যত্র বা ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য অন্য সূত্রে বলা হয় ভারতে আসার আগে তিনি কাশানে আসেন এবং এখানে তিনি বিয়ে করেছিলেন। অমোলির দুই কন্যা সন্তানের বাবা ছিলেন। অমোলি কবি হিসেবে যৌবনেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। ত’লেব-এ অমোলি হিজরি ১০১৬ সন থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভারতেই ছিলেন। তিনি খুবই সুদর্শন ছিলেন এবং ভারতের লাহোর ও দিল্লিতে তার অনেক বন্ধু-বান্ধব ছিল। অমোলি ভারতে চলে আসার পর প্রথমে রাজকীয় সিলমোহর বিভাগের প্রধান হন। কিন্তু এ কাজে অদক্ষ হওয়ায় তাকে দিল্লির দরবারের রাজকবি করা হয়। তার বোন সতিউন্নিসা মোগল রাজদরবারে নারী বিভাগে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন ও পরে এই বিভাগে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী হয়ে সাদরুন্নিসা খেতাব পেয়েছিলেন। ১০২৮ হিজরতি অমোলি মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজদরবারের রাজকবির মুকুট পান। সম্রাজ্ঞী নুরজাহান ছিলেন ত’লেব-এ অমোলির কবিতার মুগ্ধ অনুরাগী। তাই তিনি প্রতিভাবান এই কবির যথেষ্ট সমাদর করতেন। সম্রাজ্ঞী নুরজাহান নিজেও ছিলেন একজন প্রতিভাদীপ্ত কবি। অমোলি নুরজাহানের প্রতি গভীর প্রশংসা বা অনুরাগ ব্যক্ত করে কবিতা লিখেছেন বলে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন। কবি অমোলিকে খুব স্নেহ করতেন তার বোন সতিউন্নিসা। অমোলিও তাকে মায়ের মত মনে করতেন। শুধু অমোলিকে দেখার জন্য সতিউন্নিসা ইরান থেকে ভারতে এসেছিলেন। অমোলি এ সময় সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ভ্রমনে ব্যস্ত ছিলেন। বোন আসার খবর পেয়ে তিনি বোনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে জাহাঙ্গীরের কাছে অনুমতি চান একটি কবিতা লিখে। অধ্যাপক ই জি ব্রাউন এ কবিতাটিকে ভালবাসার অনন্য কবিতা বলে মন্তব্য করেছেন। ত’লেব-এ অমোলির কবিতা ফার্সি কবিতায় কথিত নব্য-ধারা বা ভারতীয় রীতির আদর্শ দৃষ্টান্ত। কবি নাজিরি এবং ওরফিও এই স্টাইলে কবিতা লিখে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন অমোলির আগেই। আর এই ধারাকে জনপ্রিয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন অমোলি। তার রচনা ফার্সি কবিতায় কল্পনার প্রাধান্যকে বাড়িয়ে দিয়েছিল।
ত’লেব-এ অমোলি ক্বাসিদা লেখার ক্ষেত্রে খক্বানি এবং গজল রচনার ক্ষেত্রে সা’দি, আমির খসরু ও হাফেজকে অনুসরণ করতেন। কিন্তু এর পাশাপাশি তিনি প্রচলিত চিত্রময়তা ও সাধারণ বাগধারাকে নতুন জীবন দান করেন পরিপূর্ণ প্রতীকি চিত্রময়তার মাধ্যমে। বিচিত্রময় বাগধারা ও যৌগিক শব্দ-যুগল তৈরিতে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন অমোলি। তিনি তার কবিতায় সাধারণ জনগণের ব্যবহৃত শব্দ খুব ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহার করেছেন। অমোলি অতীতের কবিদের কবিতা খুব ভালোভাবে পড়েছিলেন এবং সেসব ভালোভাবেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতেন। অমোলির কবিতায় নব্য বা আধুনিক ভাবধারাও স্পষ্ট। একটি কবিতায় তিনি লিখেছেন:
সকালে গোলাব কুড়ি কেমন হাসছে চোখ মেলে
ইসার শ্বাসের মত সতেজ হাওয়ারা খেলা করে।
গোলাব-পাপড়ি জুড়ে ঢেউয়ের মতন খেলে খেলে
হাওয়ার ময়ুর নাচে শিশিরের সমুদ্র উপরে ।
গজল, মাসনাভি বা দ্বিপদী কবিতা, রুবাইয়াত বা চতুর্পদী কবিতা, ক্ষুদ্র কবিতা ও ক্বাসিদাসহ তার লেখা বিভিন্ন ধরনের কবিতার পংক্তির মোট সংখ্যা ২২ হাজার ৯৮৮ । অমোলির রচনা-সমগ্র বা সমগ্র কবিতা শীর্ষক বই তেহরান থেকে একবারই প্রকাশ করা হয়েছে মোহাম্মাদ তাহেরি শাহাব-এর সম্পাদনায়। ফার্সি কবিতায় আধুনিক ধারার জনক হিসেবে খ্যাত ইরানি কবি নিমা ইউশিজ অমোলির কবিতায় প্রভাবিত হয়েছিলেন।
সুফি ভাবধারায় প্রভাবিত কবি অমোলি সম্রাট জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর এক বছর আগে হিজরি ১০৩৬ সনে তথা ১৬২৬ বা ১৬২৭ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৪১ বা মতান্তরে ৪৫ বছর বয়সে মারা যান। কাশ্মিরে অথবা লাহোরে তাকে দাফন করা হয়। অবশ্য কোনো কোনো সূত্র মতে, অমোলির লাশ পরে ইরাকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের কোনো এক সদস্যের পবিত্র মাজারের পাশে দাফন করা হয়। অমোলি মহানবীর (সা) আহলে বাইতের অনুরাগী ছিলেন বলেই তৎকালীন মোগল সরকার ও তার অনুরাগীদের পক্ষ থেকে পরে লাশ স্থানান্তরের এই কাজ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com