ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক রিপোর্ট
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে অবৈধ অভিবাসন এবং সীমান্ত দিয়ে নানারকম কর্মকা- বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সীমান্তে উচ্চ মাত্রায় ফাঁকফোকড় আছে। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দিয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছে সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে মোট অভিন্ন ৪০৯৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত আছে। এর মধ্যে ৩১৪৫ কিলোমিটারে আছে সীমান্ত বেড়া। বাকিটা ‘ফিজিক্যাল’ অথবা ‘নন-ফিজিক্যাল’ প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আনার পরিকল্পনা আছে। ইউনিয়ন হোম মিনিস্ট্রি ফর ২০২১-২২ বার্ষিক রিপোর্টে এসব সীমান্তে অবৈধ কর্মকা- হয় এবং বাংলাদেশ থেকে কথিত বেআইনি অভিবাসী যাওয়া-আসা করে বলে উল্লেখ করা হয়। এটাকেই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে বড় হিসেবে দেখা হয়। এ বছর ২৬শে জুলাই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বলেন, গত ৫ বছরে ভারতে ২৩৯৯ জন বাংলাদেশির সন্ধান
পাওয়া গেছে। তারা প্রতারণার মাধ্যমে ভারতীয় ভুয়া ডকুমেন্ট ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকারগুলোকে কেন্দ্রীয় সরকার আহ্বান জানিয়েছে, ভারতে অবস্থানকারী বেআইনি বাংলাদেশিকে শনাক্ত করতে হবে ত্বরিত গতিতে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যগুলোকে এসব অবৈধ অভিবাসীর বিষয়ে তথ্য শেয়ার করতে বলা হয় এবং ভুয়া আধার কার্ড যারা তৈরি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ই নভেম্বর ভারতের পার্লামেন্টে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু তথ্য দেন। বলেন, প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভারতে প্রায় ২ কোটি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী অবস্থান করছেন। কিন্তু এবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা, পাচার কমানো এবং ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে জাতীয়তাবিরোধী কর্মকা- কমাতে সরকার সীমান্ত বেড়া নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে জানানো হয়, এসব বিষয়ে চলমান সব কাজ ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে শেষ হবে। ‘নন-ফিজিক্যাল’ যেসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হবে তা হলো প্রযুক্তিগত কিছু সমাধান। পুরনো ডিজাইনের বেড়ার স্থলে নতুন ডিজাইনের বেড়া নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উন্নত যোগাযোগ এবং অপারেশনে দ্রুত চলাচলের জন্য সীমান্তের সড়কগুলোর মান উন্নয়ন করা হয়েছে। তবে সীমান্তে জলাভূমি আছে যেখানে, সেখানে বেড়া নির্মাণ সমস্যা হয়ে আছে। এমন অবস্থা নিচু এলাকায়। সীমান্তের ১৫০ গজের ভিতরে বসতি আছে। জমি অধিগ্রহণের মামলা মুলতবি আছে। সীমান্ত এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করেন। এসব ঘটনায় কাজ সম্পন্ন করতে বিলম্ব হয়। এ পর্যন্ত সীমান্তের ৩৭৫০.৮৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। কাজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৪২২৩.০৪ কিলোমিটারের। এই কাজ ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা সীমান্তে ফ্লাডলাইট বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ৩০৭৭.৫৪৯ কিলোমিটার সীমান্তে ফ্লাডলাইট বসানোর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ২৬৮১.৯৯ কিলোমিটারে। এই কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালের মার্চে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় এলে ভারতে অবস্থানকারী বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হবে। তিনি বলেছিলেন, ‘এসব অবৈধ অভিবাসীকে ভোটের জন্য রাজনীতিকরা লাল গালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন। আপনি লিখে নিতে পারেন, ১৬ই মে’র পরে এসব বাংলাদেশিকে তাদের ব্যাগেজ সহ ভালভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে’। পশ্চিমবঙ্গের সেরামপুরে এক নির্বাচনী সমাবেশে তিনি এ কথা বলেছিলেন।