দিনাজপুরে বাজারে নতুন ধান-চাল উঠতে শুরু করলেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চালের দাম। গত সাত দিনের ব্যবধানে জেলায় ৫০ কেজি চালের বস্তায় ১৫০-২৫০ টাকা বেড়েছে। ক্রেতারা বলছেন, চালের দাম বৃদ্ধিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বৃদ্ধিতে চালের বেচাকেনায় কিছুটা ভাটা পড়েছে।
মিলারদের ভাষ্যমতে, বাজারে পর্যাপ্ত ধান এখনো আসেনি। যতটুকু এসেছে তা চিকন জাতের ধান। হাইব্রিড ধান এখনো বাজারে উঠতে শুরু করেনি। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে হাইব্রিড জাতের মোটা চালের দাম। যেগুলো শিক্ষার্থীদের ছাত্রাবাসে বেশি চলে এবং হতদরিদ্র মানুষ বেশি কেনেন। বাজারে ব্রি২৮ জাতের ৫০ কেজি চালের বস্তা ৩০০০ টাকা, মিনিকেট ৩৩০০-৩৫০০ টাকা, বাসমতি ৩৮০০ টাকা, নাজিরসাইল ৩৮০০ টাকা, গুটি স্বর্ণা ২৪০০-২৫০০ টাকা, ব্রি ঊনত্রিশ ২৬০০ টাকা, সুমন স্বর্ণ ২৫০০-২৬০০ টাকা, রঞ্জিত ২৫০০ টাকা, সিদ্ধ কাটারী প্রকারভেদে ৫৬০০-৫৮০০ টাকা এবং হাইব্রিড (মোটা চাল) বিআর১১ বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকা দরে। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকারভেদে প্রতিটি চালের বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ১৫০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে গুটি স্বর্ণা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৬ টাকা, আটাশ ৫৭-৬০ টাকা, ঊনত্রিশ ৫২-৫৫ টাকা, মিনিকেট ৬৪-৭০ টাকা, নাজিরশাইল ৮০ টাকা, বাশঁমতি ৭৮-৮২ টাকা, সিদ্ধ কাটারী ১০৪-১১০ টাকা আর আতব চাল প্রকারভেদে ৯৬-১১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ধান ব্যবসায়ী, মিল মালিক ও আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ধান-চালের বাজারে বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। গত সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। মিল মালিকরা বলছেন তেলের দাম বাড়ায় এবং সার বেশি দামে কেনায় ও প্রথমদিকে সেচ দিয়ে ধান রোপণ করায় কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। তাই নতুন ধানের দাম বেশি। অন্যদিকে অনেক ব্যবসায়ী মজুত রাখা ধান এখন বেশি দামে বিক্রি করছেন।
গত এক সপ্তাহে বস্তা প্রতি (৮৫ কেজি) ধানের দাম বেড়েছে ১৫০-২০০ টাকা। যদিও এর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কেন না, বাজারে যে ধান আসছে তার বেশিরভাগেই বিগত মৌসুমের। আবার বাজারে ধানের সরবরাহও কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। বর্তমানে কৃষকের কাছে ধান না থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদাররা। আর নতুন যে ধান উঠছে তা চাহিদার তুলনায় সামান্য। বাহাদুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী এরশাদ হোসেন, মাসুদ রানা, মো. বাবু জানান, প্রতিদিনই চালের দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা। খুচরা বাজারে আরও ১/২ টাকা বেড়েছে। একদিকে চালের দাম বাড়ছে অন্যদিকে চাহিদামতো চাল পাওয়া যাচ্ছে না। কেনাবেচাও কমে গেছে।
সদর উপজেলার পুলহাট এলাকার ধান-চাল ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলেন, চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় মিল চালু রাখতে জেনারেটর ব্যবহার করতে হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আবার বাজারে ধানের সঙ্কট থাকায় ঠিকমতো মিল চালানো যাচ্ছে না।’
বাজাদুর বাজারে চাল ক্রেতা আব্দুর জব্বার বলেন, ‘চালসহ প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনযাপন করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আয় বাড়েনি, প্রতিটি জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।’ খুচরা চাল নিতে আসা শহরের পাটুয়া পাড়ায় ছাত্রাবাসে থাকা রাসেল ইসলাম বলেন, ‘হাই ব্রিড জাতের চাল কিনতে এসেছি। গত সপ্তাহে যে চাল কিনেছি ৪২ টাকা, সেই চাল আজ কিনেছি ৪৬ টাকায়। আমরা ছাত্র মানুষ বাবা মা কষ্ট করে টাকা পাঠান, সেই টাকা দিয়ে চলতে হয়। কিন্তু প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ম্যাচে খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো হয় না।’
বাংলাদেশ অটো, মেজর ও হাস্কিং রাইস মিল কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট সহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, যদিও এ সময়ে ধানের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই, তবুও বাড়ছে। আর ধানের দাম বাড়লে চালের দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সরকার চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকগুলো সরকার নির্ধারিত ডলার রেট মানছে না। ফলে অতিরিক্ত মূল্যে চাল আমদানি করে আমদানিকারকরা পোষাতে পারছে না। তাই চাল আমদানিতে খুব একটা আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের।
দিনাজপুর জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কামাল হোসেন বলেন, কয়েকদিনের ব্যবধানে চালের দাম বেড়েছে। তবে জেলা খাদ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছে। বাজারে পর্যাপ্ত ধান আসতে শুরু করলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।- জাগো নিউজ২৪.লস