শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১১:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি রাসূল (সা.)-এর সীরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে দৃঢ় শপথবদ্ধ হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে—ড. রেজাউল করিম চৌদ্দগ্রামে বাস খাদে পড়ে নিহত ৫, আহত ১৫ চাহিদার চেয়ে ২৩ লাখ কোরবানির পশু বেশি আছে : মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান: ফরাসউদ্দিন নতজানু বলেই জনগণের স্বার্থে যে স্ট্যান্ড নেয়া দরকার সেটিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার মালয়েশিয়ার হুমকি : হামাস নেতাদের সাথে আনোয়ারের ছবি ফেরাল ফেসবুক হামাসের অভিযানে ১২ ইসরাইলি সেনা নিহত আটকে গেলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের অর্থ ছাড় গাজানীতির প্রতিবাদে বাইডেন প্রশাসনের ইহুদি কর্মকর্তার লিলির পদত্যাগ

হবিগঞ্জের হাওরে বেড়েছে শালুক উৎপাদন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২২

বন্যার কারণে এবার দীর্ঘদিন হাওরে পানি থাকায় ক্ষয়-ক্ষতির পাশাপাশি মাছ ও শালুক উৎপাদন বেড়েছে। এখন হাওরের পানি কমতে থাকায় কৃষকরা শালুক আহরণ করে বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার শালুকের দাম বেশী থাকায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজিমরীগঞ্জ, মাধবপুর, লাখাই ও নবীগঞ্জ উপজেলার একাংশের হাওর এলাকা বর্ষাকালে পানিতে ডুবন্ত থাকে। যে বছর পানি বেশী হয় সে সময় শাপলা, শালুক, পানিফলসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদে হাওর পরিপূর্ণ থাকে। বর্ষা শেষে শরতের আগমনের সঙ্গে- সঙ্গে পানি কমতে থাকে। এ সময় সংগ্রহ করা হয় শালুক, শাপলার ডেপ, পানিফলসহ বিভিন্ন ধরনের মজাদার ফল। এর মাঝে শালুক খুবই জনপ্রিয়। হাওর এলাকায় আমন ধান কাটার পূর্বে কৃষকদের মাঝে অভাব দেখা দেয় বলে তারা এই শালুক দিয়েই তাদের আহার সারতেন। তাই এই শালুককে এক সময়ে হাওর এলাকার গরীবের খাবার হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এখন ধনীরাও শখ করে কিনছেন এই শালুক। বিদেশ থাকা স্বজনদের জন্যও এই শালিক প্রেরণ করা হয়েছে। ফলে এখন শালুক অনেকটাই গরীবের নাগালের বাইরে।
বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল জব্বার জানান, বর্ষা শেষে হাওরের পানি যখন কমে যায় তখন সবাই বোরো ফসলের জন্য জমির আগাছা পরিস্কার করে। এ সময় শালুক ও পানিফল সংগ্রহ করা হয়। পাইকারী হিসাবে ৪০/৫০ টাকা কেজি শালুক বিক্রি হয়। বাজারে মান অনুযায়ী ৮০/১০০টাকা কেজিতে বিক্রি হয় এই শালুক।
ওই গ্রামের কৃষক মিজান মিয়া জানান, একসময় গ্রামে অভাবের সময় অতিদরিদ্র শ্রেণীর মানুষ বিল থেকে শালুক তুলে এনে সিদ্ধ করে ভাতের বিকল্প হিসেবে খেত। এখন দাম বেশী হওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করে অনেকেই প্রয়োজনীয় বাজার সওদা করে।
হাওর থেকে সংগ্রহীত শালুক পাইকররা কিনে এনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করে। হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন হাট বাজারের বাহিরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ভ্যান নিয়েও বিক্রি করা হয় এই ফল।
জেলায় শালুকের অন্যতম পাইকারী হাট মাধবপুর উপজেলায়। সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবারে পাশের জেলা মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, কিশোগঞ্জের ব্যবসায়ীরা শত-শত মন শালুক নিয়ে আসে মাধবপুরে। আবার পাইকারদের হাতবদল হয়ে সেই শালুক চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, সরাইল, ভৈরব, নরসিংদী, চাঁদপুরের মত দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকাদের কাছে। গাড়িভর্তি করে নিয়ে এসে বিক্রেতারা প্রতিমণ শালুক এই মৌসুমে ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা বিক্রি করেন।
হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ দাশ জানান, একেকটি শালুকের ওজন ৩০ গ্রাম থেকে ৬০/৭০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। হজমশক্তি বৃদ্ধিকারক এ সবজিটি কাঁচা খাওয়ার উপযোগী হলেও আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া অত্যান্ত সুস্বাদু। শালুক দ্রুত ক্ষুধা নিবারণের সাথে-সাথে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তিও যোগায়। শালুকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা স্নিগ্ধকারক, পিত্ত প্রশান্তিদায়ক, পিপাসা নিবারণ করে। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে এলার্জি ও প্রচুর আয়রন থাকায় অনেকের কোষ্টকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
বানিয়াচং উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী হায়দার জানান, শালুক আল্লাহ প্রদত্ত একটি পণ্য যা আবাদ করতে হয়না। এবার বন্যার কারনে হাওরে রেকর্ড পরিমাণ শালুক উৎপাদন হয়েছে। শালুক শাপলা গাছের গোড়ায় জন্মানো এক ধরনের সবজি জাতীয় খাদ্য। শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়। যা ধীরে-ধীরে বড় হয়ে হয়ে শালুকে পরিনত হয়। একেকটি শালুকের ওজন সাধারণত ৪০ থেকে ৭০ গ্রাম হয়ে থাকে। এটি সেদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়।
হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র দেব জানান, শাপলাফুল গাছের রাইজোম-ই শালুক নামে পরিচিত। শাপলার গোড়া যেখানে মাটিতে নোঙর করে সেখানে কন্দাল মূলে গুটির মতো দেখা যায়, পরিণত গাছে এটি বড় হয়ে প্রজাতিভেদে ৫০-৭০ গ্রাম ওজনের শালুক হয়। এটি প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মায়। ভাটি-বাংলার আদি এবং জনপ্রিয় এই শালুক ফল নানাভাবে খাওয়া হয়। দুর্ভিক্ষ-দারিদ্র্যে ভাতের বিকল্প হিসেবে এটি অনন্য সম্বল। আমাদের জলাভূমিতে পানি যতদিন থাকে ততদিন শাপলাও থাকে। হাওরগুলোতে লাল এবং সাদা শাপলা দেখা গেলেও প্রকৃতিতে এর প্রজাতি সংখ্যা ৭০ এর বেশি। আমাদের দেশে পানি কমার সাথে-সাথে হাওর থেকে শালুক সংগ্রহ করে বিক্রি করতে দেখা যায়।
তিনি জানান, শালুকের রয়েছে অসাধারণ ভেষজ গুণ। এটি ক্ষুধা নিবারণ করে দেহে দ্রুত শক্তি যোগায়। পুড়িয়ে, সেদ্ধ করে বা তরকারিতে সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। চুলকানি এবং রক্ত আমাশয় নিবারণে লাল শালুক প্রাচীনকাল হতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শালুকে ক্যালসিয়াম আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি, এছাড়া এর শর্করা দিকটা ভাতের তুলনায় ভালো, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। এটি প্র¯্রাবের জ্বালাপোড়া, পিত্তঅম্ল এবং হৃদযন্ত্রের দূর্বলতা দূর করে। এজন্যই আয়ুর্বেদীক ওষুধ তৈরীতে সুপ্রাচীন কাল থেকে শালুক এতো জনপ্রিয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এতে পেয়েছেন গ্যালিক এসিড যা ক্যান্সার চিকিৎসায় কাজে আসবে। এছাড়াও এতে প্রাপ্ত ফ্লেভনল গ্লাইকোসাইড মাথা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মাথা ঠান্ডা রাখে।
তিনি আরও জানান- গ্রাম বাংলার একসময়ের ঐতিহ্যবাহী শালুক হারতে বসেছে। জমিতে অতিমাত্রায় সার, কীটনাশক প্রয়োগ, শুকনো মৌসুমে জলাধার শুকিয়ে তুলে ফেলা হচ্ছে শালুক। এভাবে চলতে থাকলে একসময় “ঝিলের জলে শালুক ভাসে” কেবল কবিতায়ই পড়া হবে, বাস্তবে দেখা মিলবে না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com