সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন

বিএনপির রাজশাহীর গণসমাবেশ ঘিরে বেড়েছে মামলা, আটক

খবরপত্র প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘট

৩ ডিসেম্বর দলের গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে এই বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। এদিকে,৩০ নভেম্বরের মধ্যে সড়কে ‘অবৈধ যানবাহন’ চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদ।
নতুন নতুন মামলা হচ্ছে এই বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গত ১১ দিনে বিশেষ ক্ষমতা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৩৭টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপির ১ হাজার ১৪৬ জন নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল হয়েছে আরও তিনটি মামলা। এর মধ্যে দুটি বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও শিবপুরে এবং অপরটি নওগাঁর ধামইরহাটে। বিএনপির নেতারা বলছেন, রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে বড় জমায়েত ঠেকাতে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা দিচ্ছে। নতুন করে সারা দেশে পুলিশের ‘গায়েবি’ মামলা শুরুর প্রতিবাদে ৩০ নভেম্বর সারা দেশে সব মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিটি জেলায় নতুন করে ‘গায়েবি’ মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য আন্দোলনকে দমন করতে ভয়ভীতি ছড়ানো। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও তারা এ কাজ করেছিল, এখন আবার শুরু করেছে। রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে দল ও অঙ্গ সংগঠন সমূহের তৎপরতা। বিভাগজুড়ে চলছে সমাবেশে আসার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা। রাজশাহী অঞ্চল বিএনপির দূর্গ। তা আবার প্রমান করার সময় এসেছে। কোন জোট নয় এককভাবে বিএনপি বিশাল সমাবেশ করে দেখিয়ে দিতে চায় তাদের জনপ্রিয়তার কথা। বিএনপি নেতাকর্মীরা যত তৎপর হচ্ছে ততই পুলিশ গায়েবী মামলা দিয়ে বিভিন্ন থানায় মামলা গ্রেফতার শুরু করেছে। অবশ্য পুলিশ বলছে সুনির্দিষ্ট কারনে মামলা হচ্ছে ও আটক করা হচ্ছে। এরসাথে সমাবেশের কোন সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে রাজশাহিী বিএনপির পুঠিয়া-দূর্গাপুরের সাবেক এমপি এ্যাড: নাদিম মোস্তফাকে। রাজশাহীর সাত থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেন, মামলা গ্রেফতার করে ভীতি সঞ্চারের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থক সব ভীতিকে জয় করে স্মরনকালের সর্ববৃহত সমাবেশ করে এর জবাব দেবে। কোন বাধাই জনস্রোত আটকাতে পারবেনা। রাজশাহীর বাগমারা, গোদাগাড়ি, মোহনপুর, পুঠিয়া, বাঘা, নাটোরের লালপুর, নওগা, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতার ষড়যন্ত্র, ককটেল বিস্ফোরণ, উদ্ধারসহ নানা কথা বলে মামলা সাজানো হচ্ছে কিছু স্থানীয় নেতাকর্মীর নামসহ অজ্ঞাত বলে। গণসমাবেশের সমন্বয়কারী ও রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, তিন ডিসেম্বর গণসমাবেশ ঘিরে পুলিশ এমন অপতৎপরতা শুরু করেছে।
মহিলাদল কর্মীরা রাজশাহীতে সোচ্চার তারা জনসভার প্রচারপত্র হাতে বিভিন্ন বাজারে বিতরন করছে। যুবদল ছাত্রদলের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চলের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত প্রচারনা চলছে। রাজশাহী বিএনপির বিভিন্ন থানায় প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছে জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নগরীতে নগর আহবায়ক এ্যাড: এরশাদ আলী ঈশা নেতাকর্মীদের নিয়ে কর্মী মিটিং করছেন। এসব সভায় যোগ দিচ্ছে মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, এ্যাড: শফিকুল হক মিলন, নজরুল হুদা, ওয়ালিউল হক রানা, আশরাফ জামান আবুসহ নেতাকর্মীরা। সবকিছু পর্যবেক্ষন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহম্মুদ টুকু, সাবেক মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, শাহীন শওকত। তারা দলের নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। অন্যান্য স্থানের সমাবেশে খুটিনাটি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন পর্যালোচনা করছেন। অন্যান্য স্থানের মত বাধারদেয়াল পেরিয়ে আগেভাগে যারা আসছেন তাদের থাকা খাওয়ার বিষয়গুলো সমাবেশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক: ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সড়কে ‘অবৈধ যানবাহন’ চলাচল বন্ধসহ ১১ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদ। শনিবার নাটোরে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ সভায় এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কানাইখালী এলাকায় আরপি কমিউনিটি সেন্টারে নাটোর জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদের সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান। তবে ধর্মঘটের ব্যাপারে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলছেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে মানুষের গণজোয়ার ঠেকাতেই সরকারি মদদে অন্যান্য বিভাগের মতো রাজশাহী বিভাগেও পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এই ধর্মঘট ডেকেও সরকার বিএনপির মহাসমাবেশে মানুষের গণজোয়ার ঠেকাতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের যৌথ ওই সভায় বক্তব্য দেন বগুড়া বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, পাবনা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক মোমিন, সিরাজগঞ্জ বাস কোচ মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুল ইসলাম আতিক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম সেন্টু, নাটোর জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামরুল ইসলাম ও বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি লক্ষন পোদ্দার, সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান। এছাড়া সভায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলার মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে বিকেল ৪টার দিকে একই স্থানে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধনসহ হাইকোর্টের নির্দেশানুযায়ী মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে থ্রি হুইলার, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ও জ্বালানি তেল ও যন্ত্রাংশের মূল্য হ্রাসসহ ১১ দফা বাস্তবায়নে সরকারের তাঝে দাবি জানানো হয়। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় পরিবরহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়া হয়। রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক পরিষদ সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর বিপ্লব শনিবারের যৌথ সভার লিখিত সিদ্ধান্ত পাঠ করেন। এ সময় আট জেলার পরিবহন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com