কেউ জানে না বাজারটির সৃষ্টি সাল কত? যার সাথে কথা বলেছি সেই বলছে এই বাজারটি ব্রিটিশ আমলের। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলেছি তারা ও না জানার মতোই বলে দিলেন বাজারটি ব্রিটিশ আমলের। বাজারটিতে বর্তমানে অসংখ্য বন্ধ ও পরিত্যক্ত স্থাপনা থাকলেও মাঝেমধ্যে খোলা হয় শুধু সেই ব্রিটিশ আমলে স্থাপিত জরাজীর্ণ পোস্ট অফিসটি। প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত বর্ণনাটি দিয়েছি ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭ নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ঘুঘু বাজারের। বিলুপ্ত ও পরিত্যক্ত এ বাজারে এক সময় কি না ছিল। বর্তমান আমলের জমজমাট বাজারগুলোতে গত ১৬-১৭ বছর আগে যেসব পণ্য পাওয়া যেত এবং যে ধরনের দোকানপাট ছিল, এ বাজারটিতেও সেসব পণ্য এবং দোকানপাট ছিল। তবে স্থানীয়দের মতামত এই বাজারটি আরো অনেক বেশি ঐতিহ্যবাহী এবং জমজমাট ছিল। আমরা কথা বলেছিলাম ঘুঘু বাজারের নামের বাড়ির (ঘুঘু বাড়ির) ফয়েজ আহমেদ পাটোয়ারীর সাথে, তিনি বলেন, একসময় এখানে জমজমাট বাজার ছিলো, কালের আবর্তে আজ এই বাজার বিলুপ্ত। এখানে তোলা বাজারের জন্য সরকারি খাস সম্পত্তিও রয়েছে অনেক। বাজারটি বিলুপ্ত এবং বাজারের সমস্ত দোকানপাট পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও ব্রিটিশ আমল হতে স্থাপিত পোস্ট অফিসটি এখনো সচ্ছল আছে। সালাম উল্লাহ নামের একজন বলেন, ১২ থেকে ১৫ বছর আগে এই বাজার বিলুপ্ত এবং পরিত্যক্ত হয়ে যায়। বাজারের অন্য পাশ দিয়ে রাস্তা হয়ে যাওয়ায় বাজারটির এই অবস্থা হয়েছে। পুরনো দিনের দোকান গুলো থাকলেও সব পরিত্যক্ত ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। দিলীপ নামের একজন বলেন, বাকি নিয়ে টাকা দিতে চায় না। এছাড়া তিনি বলেন, বাজারটি সপ্তাহে শুক্র ও সোমবারে হাট বারের দিন ছিল। প্রতি হাটের দিন ৩০ থেকে ৪০ খারি মাছ বেচা বিক্রি হতো। এছাড়া হাটবার ছাড়াও এখানে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ খারি মাছ বেচা বিক্রি হতো। এবং অন্যান্য বাজারের মতো এ বাজারেও সব ধরনের দোকান ও ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল। কিন্তু কেন যে গত ১৬-১৭ বছর আগে হঠাৎ বাজারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তা আমাদের বোধগম্য নয়। ইব্রাহিম নামের একজন বলেন, বাজারটি খুব জমজমাট ছিল, অনেক দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল, হাজার হাজার লোক সমাগম ছিল। বাজারে তোলা বাজারের জন্য খাস সম্পত্তিও আছে। কিন্তু হঠাৎ কেন বাজারটি বিলুপ্ত হয়ে যায়, জানিনা। শুধু সেই ব্রিটিশ আমলের পোস্ট অফিসটি এখনো কোনো রকমে জীবিত আছে বলে তিনি জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কিছু ব্যক্তি জানান, বাজারের কাছের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎকালীন সময়ে বাজারে আগন্তুক ক্রেতা- বিক্রেতা এবং বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করতেন জার কারণেই বাজারের এই পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে। ঘুঘু বাড়ির তসলিম পাটোয়ারী নামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সাথে কথা হলে, তিনি প্রথমে এ বাজারের বিষয়ে কিছু বলতে চাননা। পরে তাকে বারবার রিকুয়েস্ট করলে তিনি বলেন, বাজারটি এখন বিলুপ্ত এ বিষয়ে লেখালেখির কি প্রয়োজন। অন্যদিকে এলাকাবাসীর বিশ্বাস বাজারে যে খাস সম্পত্তি আছে সে সব সম্পত্তি সরকারের একোয়ারে নিয়ে কাজে লাগালে হয়তো এখানে ভালো রাজস্ব আদায় সম্ভব।