বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ন

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ

কাইছার হামিদ মহেশখালী :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২

সরকারের মেগা প্রকল্পগুলি যেন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে ভরপুর। এটা অবাক হওয়ার মতো কোনো খবর নয়। প্রকল্পের অর্থ কমিশন ও বাণিজ্যসহ হরেক পন্থায় বা ফন্দিতে নয়ছয় করে হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রকল্পের পিডি। ওই ক্ষমতা যেন আলাউদ্দীনের প্রদীপ! বাস্তবায়িতধীন সরকারের মেগা প্রকল্পগুলির মধ্যে কক্সবাজারের মহেশখালীস্থ মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি অন্যতম। সরকারের উন্নয়নের স্বার্থে এতদাঞ্চলের মানুষ প্রকল্পের জন্য চাষযোগ্য আবাধি জায়গা সেচ্ছায় প্রদান করে নিঃশ্ব হয়েছেন। উক্ত প্রকল্পের জন্য কর্মহারা ক্ষতি গ্রস্তদের মাঝে ২১ ক্যাটাগরীর ক্ষতি পূরণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে তালবাহনা ও স্ক্রাপসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিজের লোক দিয়ে নিযন্ত্রণে রেখে লোপাটের অভিযোগসহ স্থানীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার এবং নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদের বিরুদ্ধে। এখানে শেষ নয় এই গুণধর কর্মকর্তা সরকারের অধিকগ্রহণকৃত ১২০০ একর সিঙ্গাপুর প্রকল্পের ভূমিতে চিংড়ি প্রকল্প ও লবণ চাষের জমি থেকে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের সাথে আঁতাত করে প্রতিবছর আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এ দূর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যার দরূন এসব অনিয়ম সরেজমিনে তদন্ত করে সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটিকে দূর্ণীতি মুক্ত করার দাবী জানিয়ে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক পৃথক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর সময়ে প্রকল্পে কোন ধরণের চাঁদাবাজি করতে দেয়া হয়নি। প্রকল্পের সকল অফিসার ও কর্মচারীরা খুবই নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাপানের জাইকার অর্থায়নে নির্মাণাধীন প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ীওয়ালাদের পুনঃবাসন করার জন্য যে ঘর দেয়া হয়েছে তৎমধ্যে আরো ১০ টি ঘর নির্মাণ করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) কে নির্দেশ দিলেও ৬ টি ঘর ১ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকী ৪ টি ঘর এখনো নির্মাণ করা হয় নি।কিন্তু নির্মাণকৃত করা ৬ টি ঘর এখনো পর্যন্ত তালিকাভুক্ত ভুক্তভোগিদের মাঝে হস্তান্তর করেননি। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকের ওয়ারিশ প্রতি এক কালীন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও সিঙ্গাপুর প্রকল্পের ভূমির ওয়ারিশদের মধ্যে ১ হাজার ৮ শত জন কে দেয়ার পর ১ হাজার ৫ শত জনের ফাইল ড্রপ এনজিও অফিসে জমা করা হয়েছে। এ ছাড়া উক্ত প্রকল্পের একজন শ্রমিককেও ক্ষতি পূরণের টাকা দেয়া হয়নি। প্রকল্পের পিডি উক্ত এনজিও’র সাথে কোন ধরণের যোগাযোগ না করায় উক্ত অফিসটি ১বছর পূর্বে গুটিয়ে চলে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে ওইসব ক্ষতিগস্থ কর্মহারা পরিবার। এদিকে কার্যক্রম প্রায় শেষেদিকে জাইকার অর্থায়নের প্রকল্পের ভূমির মালিকদের এক কালীন ২ লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৮ শত জনকে দেয়া হলেও বাকী রয়েছে ৫ হাজার জন। এ প্রকল্পের ভূমির মূল্য বৃদ্ধির (টপ আপের) টাকা উত্তোলনের ২ শত জনের ফাইল জমা করা হয়েছে। এ প্রকল্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত সুশীলন এনজিও নামে মাত্র থাকলেও গত এক বছর ধরে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে সূত্রে প্রতীয়মান হয়। চলমান প্রকল্পের যেসব স্ক্র্যাপ বের হয় তা স্থানীয়দের সুযোগ না দিয়ে পিডির নিজস্ব ঠিকাদার কমিশন ভিত্তিক দেয়া হয়।এমন কি নামে মাত্র পরিমাপ করলেও ঐ স্ক্র্যাপ এর সাথে অতিরিক্ত স্ক্র্যাপ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি)। তার কারণে স্থানীয়রা সব কিছুই থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব দূর্ণীতি গোপনে অথবা সরেজমিনে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ উল্লাহসহ অধিগ্রহনকৃত জমিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করা ক্ষতিগ্রস্থ ভূমি মালিক ও শ্রমিকরা। মাতারবাড়ীর চেয়ারম্যান এসএম আবু হায়দার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এককালীন ক্ষতিপুরণের টাকা অর্ধেকেরও বেশী মানুষ পায়নি। এছাড়া শ্রমিকরা ক্ষতিপুরণের টাকা একজনও পায়নি। বর্ষামৌসুমের পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে যা উল্লেখ করা হয়েছে তাও বিভ্রান্তিকর। স্লুইচ গেইট বসানো হয়েছে তাদের প্রয়োজন মত। মাতারবাড়ির পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে পরিকল্পনা করে কোন স্লুইস গেইট বসানো হয়নি। অধিগ্রহনকৃত জমিতে দীর্ঘদিন চাষাবাদ করা শ্রমিক মাতারবাড়ী মগড়েইলের শামসু আলম, মাইজ পাড়ার নুরুল আলম ও মাইজ পাড়া কালা মিয়াসহ অনেক শ্রমিক জানিয়েছেন, এখন আমাদের শ্রমিক পেশা বন্ধ রয়েছে। তবে সরকার শ্রমিকদের যে ক্ষতিপুরণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল তা এখন বন্ধ রয়েছে। আমরা পরিবার নিয়ে চরম অসহায়ত্বে দিনাতিপাত করছি। বিভিন্ন অফিসে ঘুরাঘুরি করেও ক্ষতিপুরণের টাকা পাচ্ছি না। কোল পাওয়ারের যারা কর্মকর্তা আছেন তাদের সাথে কথা বলার কোন সুযোগই দেন না। এছাড়া তারা আমাদের পাওনার ব্যাপারে কিছুই বলেন না। বিষয়টি নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কথার ধরণ পরিবর্তন করে কথা বলতে রাজি নন এবং ফোন কেটে দেন। যার দরুন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com