মানবাধিকার সুরক্ষা ও অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন আহ্বান ১৫ দেশের
রিজভী, সালাম, আমান, খোকন, এ্যানী, জুয়েল, শিমুল বিশ্বাস আটক
রাজধানীতে গণসমাবেশ ১০ ডিসেম্বর: পদে পদে বাধার অভিযোগ
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম মকবুল আহমেদ। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বেলা সাড়ে চারটা পর্যন্ত নয়াপল্টনের সংঘর্ষে আহত আটজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে আনা হয়। তাঁদের মধ্যে মকবুল মারা গেছেন। অন্যদের মধ্যে চারজনের নাম পাওয়া গেছে, তাঁরা হলেন রনি, মনির, আনোয়ার ইকবাল ও খোকন। ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধি জানান, রক্তাক্ত অবস্থায় মকবুলকে এক ব্যক্তি হাসপাতলে নিয়ে আসেন, যিনি নিজের নাম মোস্তাফিজুর রহমান বলে জানিয়েছেন।
ওই ব্যক্তির দাবি, তিনি পথচারী, রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে মকবুলকে তিনি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। তার নাম মকবুল আহমেদ বলে জানা গেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ পরিচয় জানা যায়নি। রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মকবুলকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, লাশ মর্গে রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নয়াপল্টনের সংঘর্ষে আহত আটজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলে আনা হয়। তাদের মধ্যে মকবুল মারা গেছেন। অন্য চারজন হলেন রনি, মনির, আনোয়ার ইকবাল ও খোকন।
রিজভী, এ্যানি ও শিমুল বিশ্বাস আটক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে বেলা সোয়া ৪ টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি), বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ পাঁচ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
রাজধানীতে বিএনপির গণসমাবেশ আগামী ১০ ডিসেম্বর। কিন্তু পদে পদে সরকার বাধার সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতা কর্মীরা। এদিকে আগামী ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ১৫টি দেশ যৌথভাবে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এ দেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে। গত মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) প্রকাশিত ওই বিবৃতি দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মানবাধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়ন উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের মৌলিক ভূমিকাকে তুলে ধরতে চাই।
‘আমরা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে সংরক্ষিত স্বাধীনতা উদযাপন করি এবং ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্যে স্বাধীন মত প্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরি।’ ‘অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি।’
বিএনপির সমাবেশ নিয়ে আ.লীগ কেন চিন্তিত, বিবিসির বিশ্লেষণ: ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ এখন বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেছে। কারণ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই সমাবেশ ঘিরে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন দেশটির প্রধান দুই দলের নেতারা। একদিকে বিএনপি বলছে, এই সমাবেশের দিকে সারা বিশ্ব তাকিয়ে রয়েছে। কারণ সেদিন তারা আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বলছে, ওই দিন পুরোপুরি সতর্ক থাকবে আওয়ামী লীগ এবং প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে তাদের পাহারা থাকবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশ নতুন কিছু নয়। বিএনপির এর আগে বিভিন্ন জেলায় আরও নয়টি সমাবেশ করেছে। কিন্তু ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ কেন দুই দলের কাছে এতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?
সমাবেশ থেকে কি অর্জন করতে চায় বিএনপি? বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা সাধারণ নির্বাচনের পর থেকেই রাজপথে অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল বিএনপি। এরপরে বড় কোনো আন্দোলন করতে দেখা যায়নি দলটিকে। কিন্তু গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলোয় নয়টি সমাবেশ সফল করেছে বিএনপি। গণপরিবহন ধর্মঘট, নানারকম বাধার পরেও সেসব সমাবেশে দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী অংশ নিয়েছে। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমাদের বিভাগীয় সমাবেশগুলোর সর্বশেষ সমাবেশ ঢাকায়। এর আগের সমাবেশে তো কোন কর্মসূচী দেই নেই। ঢাকার সমাবেশ থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি দেবো। একটা রাজনৈতিক দল হিসাবে, ১০ তারিখের পর কী করা হবে, দাবিদাওয়া তো বলতে হবে।‘ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, দীর্ঘদিন পরে বিএনপি পুনরায় যে রাজনৈতিক কর্মকা- শুরু করেছে, ঢাকার মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সেটারই একটা ‘শো-ডাউন’ করতে চায়। রাজনৈতিকভাবে তাদের যে অনেক সমর্থন আছে, এই সমাবেশের মধ্য দিয়েই তারা দেশের মানুষ ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছে তুলে ধরতে চায়।
নয়া পল্টনে অবরুদ্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা: বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। এতে দফায় দফায় নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ ও অনেকে আহত হওয়ার দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল বুধবার দুপুর থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ হওয়ায় নয়া পল্টন এলাকাজুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, এ ঘটনায় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া পার্টি অফিসের ভেতরে আটকা পড়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। টিয়ারশেলের ধোয়ার কারণে পার্টি অফিসে অবস্থান নেয়া নেতাকর্মীরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। এছাড়া পার্টি আফিসের মূল ফটকে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল করীর বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছিল। সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে পুলিশ নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে টিয়ারশেল ও গুলি ছুড়েছে। এতে একাধিক নেতাকর্মী আহত ও আটক হয়েছেন। তিনি এ হামলার নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে এসব হামলা বন্ধ করে আগামী ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুলিশকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।