মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ৫ টাকার নোটে মুদ্রিত নওগাঁর কুসুম্বা মসজিদ ভালুকায় কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ মেলান্দহে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান:চাল সংগ্রহের শুভ উদ্বোধন জলঢাকায় কৃষকদের ফসলি জমির ধান নষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র নেই তবুও চলছে ইট ভাটা ভোটারদের আস্থা চেয়ারম্যান প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের এস এম মুইদুল ইসলামের উপর কালীগঞ্জে ৪ কোটি টাকার রাস্তায় নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ খাদ্য ও শস্য পণ্য উৎপাদন বাড়াতে পারলে,দেশের আর্থিক অগ্রগতি বাড়বে-এস এম শাহজাদা এমপি আবারও ‘আওয়ামী লীগের সাজানো বিষ্ফোরক মামলায়’ পিরোজপুর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব সহ যুগ্ম আহ্বায়ক-১ কারাগারে জগন্নাথপুরে মাদ্রাসার ফলাফল সন্তোষজনক জমে উঠছে পিরোজপুরে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা

২২ কোটি টাকার ওষুধে জিন থেরাপি: কেমন আছে রায়হান

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২

জন্মের পর অন্য দশটি শিশুর মতো রায়হানের বিকাশ ঘটেনি। শারিরীরক নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হয় তার পরিবার। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর রায়হানের দেহে স্পাইনাল মাসকুলার এ ট্রফি নামের বিরল ও জটিল স্নায়ু রোগ ধরা পড়ে। এ জটিল রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহুল হওয়ায় রায়হানের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় তার পরিবার। তবে লটারিতে এ রোগের ২২ কোটি টাকা মূল্যের ইনজেকশন পেয়ে অন্ধকারে আলোর দেখা পান তারা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের দিঘুলিয়া গ্রামের রফিক-রিনা দম্পতির সন্তান রায়হান। জন্মের পর স্বাভাবিক শিশুদের মতো রায়হানের বিকাশ না ঘটায় এ দম্পতি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
রায়হানের বাবা রফিক সৌদি আরবে শ্রমিকের কাজ করেন। জীবিকার তাগিদে তাকে সেখানে চলে যেতে হয়। তবে দমে না গিয়ে রায়হানের মা রিনা আক্তার ও দাদি রোয়েকা বেগম রায়হানের চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা স্পাইনাল মাসকুলার এট্রফি রোগের ওষুধ বিনামূল্যে পেতে লটারির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। ৬ মাস পর লটারির ফলাফলে রায়হানের জিন থেরাপরি জন্য ২২ কোটি টাকার ইনজেকশন পাওয়া যায়। গত ২৫ অক্টোবর দেশে প্রথমবারের মতো দুরারোগ্য স্নায়ুরোগ স্পাইনাল মাস্কুলার এট্রফি (এসএমএ) রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় জিন থেরাপি। জন্মগত এই রোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশে প্রথম কোনো শিশুকে জিন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এর মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করলো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্টরা এটিকে চিকিৎসা সেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন বললেও খরচ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশনের মূল্য ২২ কোটি টাকার বেশি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বিনামূল্যে রায়হানকে প্রয়োগ করা হয়েছে। সরেজমিনে রায়হানদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দুই বছর বয়সী রায়হান নানা রকম খেলনা দিয়ে খেলছে। খেলার ফাঁকে ফাঁকে টিভি দেখছিল সে। মা ও দাদির কোলে বাড়ির উঠোনে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেলো তাকে। দাদির সাথে নানা আবদারে মেতে থাকে সব সময়।
রায়হানের দাদি রোকেয়া বেগম বলেন, ‘জীবিকার প্রয়োজনে আয় উপার্জন করতে রায়হানের বাবা সৌদিতে রয়েছেন। রায়হানকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় আমাদেরকেই দৌঁড়ঝাপ করতে হয়েছে। তবে চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা না থাকলে লটারিতে অংশগ্রহণ করতে পারতেন না। সব প্রক্রিয়া চিকিৎসকরা সম্পন্ন করে দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে লটারি মিলে যাওয়ায় রায়হানের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে। না হলে এতো টাকা জোগাড় করা আমাদের মতো পরিবারের পক্ষে সম্ভব হতো না।’
রায়হানের মা রিনা আক্তার এ প্রতিবদেককে বলেন, ‘রায়হানের এ অসুখ হওয়ার পর একটা দিনও ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। কি করবো কোথায় যাবো ,এতো টাকা কোথায় পাবো তা নিয়ে সারাদিন রাত দুশ্চিন্তায় থাকতাম। লটারিতে ওষুধগুলো পাওয়ার পর রায়হানের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সবগুলো ইকজেকশন দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন চিকিৎসকদের পরামর্শে বাকি চিকিৎসা চলছে। প্রতিদিন নিয়ম করে ওষুধ সেবন ও সেই সঙ্গে মাসে একবার নিউরোসইন্স হাসপাতালে থেরাপি চলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ইনজেকশন পুশ করার আগে রায়হান ঠিকমতো বসতে বা খেলতে পারতো না। এখন বসতে পারে খেলতে পারে। আগের চেয়ে অনেক বিষয় এখন স্বাভাবিক হচ্ছে। রায়হান সুস্থভাবে বেঁচে থেকে মানুষের মতো মানুষ হবে এটিই আমাদের স্বপ্ন।’
স্থানীয়রা জানান, ‘এক বছর বয়স হয়ে গেলেও রায়হান স্বাভাবিক শিশুদের মতো উঠাবসা করতো না। তখন থেকেই তার পরিবার চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। তবে ওর শরীরিক পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছিলো না। জিন থেরাপির ইনজেকশনগুলো দেওয়ার পর থেকে স্বাভাবিক হচ্ছে রায়হান।’
চিকিৎসকরা জানান, স্পাইনাল মাসকুলার এট্রফি একটি বিরল ও জটিল স্নায়ু রোগ যা জন্মগতভাবে মানবদেহে থাকে। জিনগত ত্রুটির কারণে এটা হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের মাংসপেশি ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে। যার ফলে এ রোগে আক্রান্ত শিশুরা বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। তবে তাদের বুদ্ধিমত্তা ঠিক থাকে।
তারা আরো জানান, এই রোগের জিন থেরাপি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ইনজেকশনের মূল্য ২২ কোটি টাকার বেশি। তবে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালকে এটি বিনামূল্যে প্রদান করেছে বহুজাতিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সুইজারল্যান্ডের নোভার্টিস কোম্পানি। এই ইনজেকশন আমেরিকায় বাজারজাত করা হয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো এই ওষুধ ক্রয় করে থাকে। যারা দরিদ্র রাষ্ট্র তাদের দেশে এই ওষুধ বিনামূল্যে সীমিত সংখ্যক পাঠানোর জন্য লটারি পদ্ধতি বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই লটারিতেই বাংলাদেশের অত্যাধুনিক বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের শিশু নিউরোলজি বিভাগ অংশগ্রহণ করে। আক্রান্ত কয়েক জন শিশুর শরীরের রক্ত ও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। লটারিতে সৌভাগ্যবান রায়হানকে নির্বাচিত করা হয়। এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রায়হানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। রায়হান ইনজেকশন নেওয়ার পর থেকে অনেকটা ভালো আছে। তার কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। -রাইজিংবিডি




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com