বাধা উপেক্ষা করে আসছে বিএনপির নেতাকর্মীরা
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ ১০ ডিসেম্বরই অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশ আমরা করবো। আমরা অবশ্যই আমাদের সমাবেশস্থল নয়াপল্টনে যাবো। এর মধ্যে যদি সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া বিকল্প কোনো প্রস্তাব দেয় সেটি ভেবে দেখব আমরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব একথা বলেন। নয়াপল্টনে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছে পুলিশ। এমতাবস্থায় কিভাবে বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ইতোপূর্বেও পুলিশকে বলেছি সকল প্রতিবন্ধকতা প্রত্যাহার করুন। মানুষের মত প্রকাশের সুযোগ দিন। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবো। এতে বাধা দিলে কোনো প্রকার সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এর সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব পুলিশের এবং সরকারের। এর আগে,নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বাধা দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ। সেখানে তিনি বলেন, শনিবার (১০ ডিসেম্বর) সমাবেশ হবেই। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর নাইটেঙ্গল মোড়ে এলে পুলিশ কর্মকর্তারা মির্জা ফখরুলের গাড়ির আটকে দেয়। এ সময় মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। মির্জা ফখরুলে গাড়ি থেকে নেমে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আমি আমার পার্টি অফিসে যেতে চাই।’ ‘স্যার’ সম্বোধন করে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গতকাল বিকাল বেলা ও রাতে যেভাবে আমাদের পুলিশ সদস্যদের ওপর বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখানে অভিযান পরিচালনা করেছি, যে পরিমাণ ককটেল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে; সেটি এই মুহূর্তে আমাদের কাছে ঘটনাস্থল, যেটিকে আমরা আইনের ভাষায় বলি প্লেস অব অকারেন্স। সো এটা আমরা ক্রাইম সিন হিসেবে বিবেচনা করছি। ক্রাইম সিন হিসেবে আমাদের সিআইডি, বোম ডিসপোজাল টিমের সদস্যরা সেখানে কাজ করছে। সো এই মুহূর্তে কেউ সেখানে যেতে পারবে না।’ মহাসচিব আবারো জানতে চান, আমি অফিসে যেতে পারবো কিনা? পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ক্রাইম সিনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানে কেউ অ্যালাউড না। নো বডি অ্যালাউড টু গো।’ ‘আমি বিএনপির সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে আমার পার্টি অফিসে যেতে পারব কিনা এটা আপনি বলুন?’ এ রকম প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের ক্রাইম সিনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নো বডি ইজ অ্যালাউড টু এন্টার ইন টু দ্য পার্টি অফিস।’ পরে বিএনপি মহাসচিব গতকাল নয়াপল্টনে পুলিশের গুলিতে নিহত পল্লবী ৫নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মকবুল হোসেনের মরদেহ দেখতে যান এবং তার পরিবারকে সান্ত¡না দেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব সরকার জানান, ক্রাইম সিনের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি অফিসে কারো প্রবেশাধিকার নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরে উপস্থিত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি বিএনপির মহাসচিব। আমাকে আমার পার্টি অফিসে যেতে দেওয়া হলো না এবং তারা যে কথাগুলো বলছে এটা সর্বৈব মিথ্যা। আমাদের ওখানে কোনো বিস্ফোরক ছিল না। নাথিং ওয়াজ দেয়ার। তারা (পুলিশ) নিজেরা এসব করেছে আপনারা (গণমাধ্যম) তা দেখেছেন। ‘সমাবেশ হবেই’ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১০ তারিখের সমাবেশ যেন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে তার জন্য আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি। এর দায়-দায়িত্ব থাকবে সরকারের।’ এখন কোথায় হবে সমাবেশ? জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা জানিয়েছি। আবার জানাব।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে চক্রান্ত ও পরিকল্পনার প্লট বলে বিএনপিকে ম্যালাইন করার জন্য, আমাদের ১০ তারিখের যে সমাবেশকে পুরোপুরি নস্যাৎ করে দেয়ার জন্যে এটা সরকারের হীন পরিকল্পনা-চক্রান্ত। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য, মানুষের অধিকারকে ধ্বংস করবার জন্য আমার রাজনৈতিক অধিকারকে করবার জন্য, আমার রাজনৈতিক দল হিসেবে আমার নিজের অফিসে যেতে না পারি তাহলে কী করে একজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কাজ করবে। একটা লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তার সাংবিধানিক অধিকার হচ্ছে যে, সে তার স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করবে। এখন একজন মহাসচিব যে যদি তার অফিসেই যেতে না পারে তাহলে এটা সম্ভব না। এখানে গণতন্ত্র তো দূরের কথা, এখানে মানুষ একটা সভ্য সামাজিক মুক্তভাবে বাস করছে না। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ অফিস খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘অবিলম্বে বিএনপি অফিসকে খুলে দেয়ার জন্য আমাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি। যাদেরকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি এবং যে নিহত হয়েছে, শহীদ হয়েছে তার তদন্ত করে তাকে বিনা কারণে যে হত্যা করা হয়েছে সেটার প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
বাড়ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংখ্যা, পুলিশের ধাওয়া: গত বুধবার (৭ ডিসেম্বর) বিএনপির কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীরা বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই পল্টন নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করছেন। পুলিশ বারবার তাদের সরিয়ে দিলেও দিন গড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংখ্যাও বাড়ছে। গতবাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভ করা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন। কেউ কাউকে চেনেন না। পুলিশ তাদের সরিয়ে দিলেও অল্প অল্প করে তারা আবারও জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেন এবং কর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। সর্বশেষ বিকাল ৩টা ৫০ এ তারা আবার জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ আবারও তাদের ধাওয়া দেয়। এসময় পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি গুলির শব্দ শোনা যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বুহস্পতিবার দুপুরে বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয় একটি মারাত্মক ঘটনাস্থল। এখানে প্রচুর ককটেল পাওয়া গেছে। সুতরাং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। এছাড়া যানচলাচল বন্ধ থাকবে। এখানে আরও ককটেল থাকতে পারে। এছাড়া নাশকতা চালানোর মতো আরও উপাদান থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমাদের কাছে বেশ কিছু গোয়েন্দা তথ্য আছে তার ভিত্তিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখানে কোনও রাজনৈতিক কর্মকা- করতে দেওয়া হবে না। এই এলাকায় শুধুমাত্র ইমার্জেন্সি লোকজনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে।