বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত মাইলস্টোন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

মর্যাদা ও সম্মান বাড়ানোর উপায়

জাফর আহমাদ:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২

পৃথিবীর সব মানুষই সম্মানিত হতে চায়, সম্মান পেতে চায়। সম্মানিত হওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন পন্থা ও উপায় অবলম্বন করে থাকে। সম্মানিত হওয়ার জন্য কেউ অঢেল সম্পদ বা অর্থকে প্রধান উপায় মনে করে। কেউ আবার নেতৃত্বকে সম্মানের উপায় মনে করে। অনেকে সম্পদ আহরণ করার পর এলাকায় স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেও সম্মানিত হতে চান। কেউ কেউ সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি ও পদ-পদবি, কেউ অফিসিয়াল পদ-পদবিতে সম্মানিত হতে চান। এভাবে আরো অনেকে বিভিন্নভাবে সম্মান ও মর্যাদাবান হতে চান। কিন্তু সত্যিকারার্থে এগুলো সম্মান পাওয়ার উপায় নয়। কারণ সম্মান মানুষের চরিত্রের সাথে সম্পর্কিত। চরিত্র পরিবর্তন হলে, সম্মান এমনিই চলে আসে। আমাদের সামনে এর অনেক ভূরিভূরি উদাহরণ রয়েছে। অনেক বিত্তবান লোক বা পদ-পদবির অধিকারী; কিন্তু সমাজের কাছে তার কোনো মর্যাদা নেই। আবার হতদরিদ্র বিত্তবৈভবহীন ব্যক্তি, সমাজ তাকে সম্মানিত ও মর্যাদাশীল ব্যক্তি হিসেবে সমীহ করে। যেই সম্মানের সাথে ভালোবাসা সংযুক্ত আছে।
সম্মান দুই প্রকার : এক. ভালোবাসার সাথে সম্মান। যেই সম্মানের সাথে ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। যেই সম্মান অন্তরের অন্তস্তল থেকে ভালোবাসার কারণে বেরিয়ে আসে। যে সম্মানে কোনো ত্রুটি নেই, যে ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই। দুই. ভালোবাসা ছাড়া সম্মান। যা সাধারণত প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও বিশাল সম্পদের মালিক, অফিসের বড় পদ-পদবির অধিকারী ও কর্তার প্রতি সম্মান। যে সম্মানের সাথে ভালোবাসার কোনো সংযোগ নেই। এটিকে সম্মান না বলে ভয় ও সমীহ বলা যেতে পারে। যেমন ক্ষমতার লম্বা হাত, প্রভাব-প্রতিপত্তি, ইত্যাদি থাকার কারণে মানুষ তাকে ভয় করে- ফলে তাকে মেকি সম্মান প্রদর্শন করে। এ ধরনের সম্মানের পাত্রকে মানুষ পেছনে দুই হাত নিয়ে নেয়।
মূলত, সম্মান দেয়ার মালিক আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলো : হে আল্লাহ! বিশ্বজাহানের মালিক! তুমি যাকে ইচ্ছা রাষ্ট্রক্ষমতা দান করো এবং যার থেকে চাও রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনিয়ে নাও। যাকে চাও মর্যাদা ও ইজ্জত দান করো এবং যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত ও হেয় করো। কল্যাণ তোমার হাতেই নিহিত। নিঃসন্দেহে তুমি সব কিছুর ওপর শক্তিশালী’ (সূরা আলে ইমরান-২৬)। আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর একটি হলো- আল ‘মুই’য্যু’ অর্থাৎ, মর্যাদা ও সম্মান প্রদানকারী। তাঁর আরেক নাম ‘মাজিদ’ অর্থাৎ- অত্যধিক মর্যাদাসম্পন্ন; বড় দাতা।
সম্মান বাড়ানোর ইসলামী পন্থাসমূহ :
ক্ষমা করা : একটি উন্নতমানের গুণের নাম ক্ষমা করা। এর দ্বারা মানুষের মান-সম্মান ইজ্জত বহুগুণে বেড়ে যায়। এটি মূলত আল্লাহর গুণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় মানুষকে দান করে, রাগ নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (সূরা আলে ইমরান-১৩৪)।
আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আর কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বিনীত হলে, তিনি তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন (মুসলিম-৬৪৮৬)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন। সৎ কাজের আদেশ দিন এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলুন’ (সূরা আরাফ-১১৯)। ক্ষমাকারী আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়। আল্লাহ তার মান-সম্মান বাড়িয়ে দেন। ফলে মানুষও তাকে সম্মান ও মর্যাদা দিতে শুরু করে।
দান করা : সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় মানুষকে দান করলেও আল্লøাহ মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। সূরা আলে ইমরানের ১৩৪ নম্বর আয়াত- ‘আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’। সৎকর্মশীল মানেই সম্মানিত ব্যক্তি। যারা আল্লাহর পথে দান করেন, আল্লাহ তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।
রাগ নিয়ন্ত্রণ : যারা রাগ করেন না তারা সাধারণত ভদ্র। মানুষ তাদের সম্মান করেন। রাগ মানুষকে অভদ্র, উদ্ধত, বদমেজাজি ও অহঙ্কারী করে তোলে। ফলে সে অসম্মানিত ও অপমানিত হয়। অত্যধিক রাগ ও রাগহীনতার মাঝামাঝি পন্থার নাম বিনয় ও নম্রতা। এটি চরিত্রের ভূষণ ও সর্বোত্তম পন্থা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বড় বড় পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে চলে ও রাগান্বিত হয়ে ক্ষমা করে’ (সূরা আশ শুরা-৩৭)।
মানুষের কল্যাণ কামনা : কল্যাণ কামনা একটি ব্যাপক বিষয়। কল্যাণ কামনার মাধ্যমে ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। একজন মুমিন অন্য মুমিনের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের জন্য কল্যাণ কামনা করবে। মুমিনদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্যই প্রেরণ করা হয়েছে। মানুষের প্রথম ও প্রধান কল্যাণ হলো- তাকে অকল্যাণের পথ থেকে ফিরিয়ে কল্যাণের পথ প্রদর্শন করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানবতার কল্যাণের জন্য তোমাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে, তোমরা সৎ কাজের তথা কল্যাণের পথ অবলম্বনের জন্য আদেশ করবে এবং অসৎ, অকল্যাণ, পরিণামে যাতে দুঃখ থাকে তা থেকে বিরত রাখবে’ (সূরা আলে ইমরান-১০৩)।
পবিত্র, সৎ ও ভালো কথা বলা : যিনি কালিমা তাইয়্যিবার মাধ্যমে ঈমানের চৌহদ্দির মধ্যে প্রবেশ করেছেন, তিনি অবশ্যই ভদ্র ভাষায় কথা বলবেন। ভদ্রতা হবে তার চারিত্রিক প্রধান বৈশিষ্ট্য। তার চিন্তাধারায় পরিচ্ছন্নতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আচরণে মাধুর্যতা, ব্যবহারে নম্রতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, ওয়াদা ও অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবন যাপনে সদাচার, কথাবার্তায় চিন্তার ছাপ, চেহারায় পবিত্রতার ভাব, বেশ-ভূষণে ও চেহারায় পরিশীলিত ভাব ফুটে উঠার সাথে সাথে আল্লাহর অপার সৌন্দর্যের মহিমাও তার কথা ও কাজে ফুটে উঠবে। তার জীবনধারার কোথাও কোনো অসঙ্গতি থাকবে না।
আল্লাহকে অধিক ভয় করা : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাশীল, যে তোমাদের মধ্যে বেশি ভয় করে’ (সূরা হুজরাত-১৩)। বংশ, বর্ণ, ভাষা, দেশ ও জাতীয়তা সম্মান ও মর্যাদার মাপকাঠি নয়; বরং নেককার ও পরহেজগার হলো মর্যাদার অধিকারী। যারা আল্লাহকে ভয় করে, মানুষও তাদের সম্মান ও ইজ্জত দান করে।
সম্মান বিনষ্টকারী কিছু বিষয় :
নির্লজ্জ কথা ও কাজ : বেহায়াপনা, নির্লজ্জতা ও ফাহেশা কথা এবং কাজ চারিত্রিক কদর্যকেই বৃদ্ধি করে, চারিত্রিক সৌন্দর্যকে বিনষ্ট করে। সুতরাং সম্মান বাড়ানোর জন্য অবশ্যই এগুলো পরিত্যাগ করতে হবে।
অবৈধ উপার্জন করে বৈধ পথে খরচ : আমাদের দেশের ট্রেডিশন হলো- বৈধ-অবৈধ পথে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলে একটু সম্মানের জন্য এলাকায় মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল ও কলেজ গড়ে তুলে। মানুষ তাকে সমীহ করে বটে; কিন্তু সত্যিকারার্থে তার প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা থাকে না। তার আয়ের উৎস নিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক কথা সমাজের প্রচলন ঘটে।
মুুনাফেকি বা দ্বিমুখী নীতি : দ্বিমুখী নীতি মানুষের সম্মানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কপট মানুষকে কেউ ভালোবাসে না। সে সমাজের একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। সম্মান পাবে তো দূরের কথা, মানুষের কাছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতাই থাকে না।
অহঙ্কার ও গৌরব : অহঙ্কারও মানুষের সম্মানকে ভূলুণ্ঠিত করে। সমাজে অহঙ্কারবশত যারা নাক উঁচু করে চলে, মানুষ তাদের থেকে দূরে অবস্থান করতে ভালোবাসে।
হিংসা-বিদ্বেষ : আনাস রা: সূত্রে নবী সা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সাথে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং পরস্পর শুত্রুতা করবে না, পারস্পরিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না এবং তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে ভাই ভাই হয়ে থাকবে’ (মুসলিম-৬৪২৪)।
মিথ্যা বলা : কথায় কথায় যারা মিথ্যা বলে, মিথ্যা রচনা করে, তাদের মানুষ সম্মান করে না। সে যতই শিক্ষিত ও প্রভাবশালী হোক না কেন। সম্মানের পরিবর্তে সে সমাজে একজন পাক্কা মিথ্যুক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
লোভ-লালসা, কৃপণতা ও স্বার্থান্ধতা : সামাজিক সম্মানের জন্য অবশ্যই অতিমাত্রার লোভ-লালসা, কৃপণতা, স্বার্থান্ধতা, পরনিন্দা, পরচর্চা, পরশ্রীকাতরতা পরিত্যাগ করতে হবে। মানুষের প্রতি দরদি ও পরশ্রীপরায়ণ হতে হবে।
বেহুদা কথা ও কাজ : সূরা মুমিনুনে সফলকাম ব্যক্তির কয়েকটি গুণের অন্যতম একটি হলো- ‘বেহুদা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করা’। কোথাও বেহুদা কাজ হতে দেখলে ভদ্রলোকেরা তা পাশ কাটিয় চলে যান। মাত্রাতিরিক্ত কথা বললেও সম্মান ও মর্যাদার হানি হয়।
জুলুম-নির্যাতন করা : আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যারা ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না’ (সূরা শুরা-৪০)।
কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা : কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা অভদ্রতার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। আল কুরআনে হেয় প্রতিপন্নতাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
টোস্ট মাস্টার ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট জিসিকা লেবর সম্মান অর্জনের ১৫টি বিষয় উপস্থাপন করেছেন। সত্যিকার অর্থে এগুলো ইসলাম থেকেই ধার নেয়া। বিষয়গুলো নি¤œরূপ-
১. এমন কিছু করুন যা সত্যিই মানুষের কাজে লাগে; ২. কথা দিয়ে কথা রাখুন; ৩. দোষ না করলে দুঃখিত বলবেন না; ৪. ভুল করলে স্বীকার করুন এবং সংশোধন করুন; ৫. অন্যের সময় নষ্ট করবেন না; ৬. না জেনে মন্তব্য করবেন না, প্রয়োজনে চুপ থাকুন; ৭. অন্যের মতামতকে সম্মান জানান; ৮. অহঙ্কার করবেন না; ৯. অতি বিনয় পরিহার করুন; ১০. সৎ থাকুন; ১১. কথা ও কাজে মিল রাখুন; ১২. সব সময় নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করুন; ১৩. ইতিবাচক থাকুন ও অন্যদের অনুপ্রাণিত করুন; ১৪. আবেগের বদলে যুক্তি দিয়ে সিদ্ধান্ত নিন ও ১৫. সব সময় সত্যি কথা বলুন এবং সাহস প্রকাশ করুন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও কলামিস্ট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com