বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

দান সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২

দান-খয়রাত ও সদকা-জাকাত ইসলামে বিধিবদ্ধ ইবাদত। মহাগ্রন্থ আল–কোরআনে দানের কথাটি সালাত বা নামাজের মতোই বিরাশিবার উল্লেখ হয়েছে। ‘জাকাত’ শব্দটি পবিত্র কোরআনে আছে বত্রিশবার, নামাজের সঙ্গে কোরআন মাজিদে আছে ছাব্বিশবার; স্বতন্ত্রভাবে কোরআন কারিমে আছে চারবার; পবিত্রতা অর্থে রয়েছে দুবার। জাকাত কখনো ‘সদাকাহ’ এবং কখনো ‘ইনফাক’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইনফাক শব্দটি ব্যাপক, সদাকাহ শব্দটি সাধারণ ও জাকাত শব্দটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কখনো কখনো এর ব্যতিক্রমও হয়েছে, অর্থাৎ এ তিনটি শব্দ একে অন্যের স্থলে ব্যবহার হয়েছে। দানের প্রাথমিক সুনির্দিষ্ট খাতগুলো কোরআন কারিমে উল্লেখ হয়েছে এভাবে, ‘মূলত সদাকাত হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী ১ (খলিফা কর্তৃক নিযুক্ত জাকাত ব্যবস্থাপনায় কর্মরত ব্যক্তির মজুরি), অনুরক্ত ব্যক্তি, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ (মানবতা, মানবাধিকার ও মানবসভ্যতার সুরক্ষার জন্য) ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’ (সুরা-৯ তাওবা, আয়াত: ৬০)।
হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ওপরের হাত নিচের হাত অপেক্ষা উত্তম।’ (মুসলিম)। অর্থাৎ দাতা গ্রহীতা অপেক্ষা শ্রেয়। দান দাতার ইহকালীন ও পরকালীন ফজিলত, সম্মান ও গৌরব বৃদ্ধি করে। তাই ইজ্জত, হুরমত ও তাজিমের সঙ্গে সযতেœ দান প্রদান করতে হয়। দান–সদকা, খয়রাত সসম্মানে পবিত্র মনে প্রাপকের হাতে পৌঁছে দিতে হয়। দানের ক্ষেত্রে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। সম্পদ ব্যয়ের সর্বশ্রেষ্ঠ খাত পিতা–মাতা। আত্মীয়দের মধ্যে ভাইবোনের হক সবচেয়ে বেশি। পাশাপাশি শ্বশুর–শাশুড়ি ও বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয় যাঁরা, তাঁদেরও অগ্রাধিকার রয়েছে। নানা উপলক্ষে তাঁদের হাদিয়া, উপহার ও উপঢৌকন দেওয়া সুন্নাত। সম্ভ্রান্তরা দয়াদাক্ষিণ্য ও করুণা গ্রহণে কুণ্ঠাবোধ করেন; তাই তাঁদের হাদিয়া বা উপহার উপঢৌকন হিসেবে দেওয়াই সমীচীন। এটাই দানের শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। জাকাত–ফিতরাও উল্লেখ না করে দেওয়া যায়; যাতে গ্রহীতা বিব্রত না হন।
কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এমন অভাবী লোক, যারা আল্লাহর পথে (ইবাদত ও মানবকল্যাণে) নিজেদের নিয়োজিত রাখার কারণে (উপার্জনের জন্য) দুনিয়া চষে বেড়াতে পারে না। সম্ভ্রান্ততার কারণে অনভিজ্ঞ লোকেরা তাদের অভাবহীন মনে করে। আপনি তাদের চিহ্ন দেখে চিনতে পারবেন। তারা মানুষের কাছে নির্লজ্জভাবে ভিক্ষা করে না। আর তোমরা যেকোনো ভালো জিনিস ব্যয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা সে বিষয়ে অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭৩)। আসুন, আপনজনকে ভালোবাসি, গরিবকে সম্মান করি, সবাইকে ক্ষমা করি, আত্মীয়স্বজনের খোঁজখবর নিই, তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে তোমার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করে, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ো; যে তোমার প্রতি অবিচার করে, তাকে ক্ষমা করো।’ (তিরমিজি)। রহমত ও মাগফিরাত দয়া ও ক্ষমার অনুশীলন করি। ক্রোধ ও প্রতিশোধপরায়ণ হওয়া শয়তানি বৈশিষ্ট্য। এর থেকে মুক্তিলাভে সচেষ্ট হই। আল্লাহর সব বান্দার সঙ্গে সুসম্পর্ক করি, আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে। সবার সঙ্গে সদাচার করি; সালাম কালাম বিনিময় করি। অনেকে নিজেদের জন্য দামি দামি পোশাক–আশাক কিনে থাকেন। নিজের জন্য কিনুন, আপনজনকে হাদিয়া দিন। কেউ হাদিয়া বা উপহার দিলে তা সাদরে গ্রহণ করুন, তা যতই সামান্য হোক না কেন। উপহারদাতাকে উপহার দিয়ে সম্মানিত করুন।
দান-খয়রাত প্রকাশ্যেও করা যায়, গোপনেও করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো, তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপনে করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭১)। দান করে খোঁটা দিতে নেই। এতে দানের ফজিলত বিনষ্ট হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সদ্ব্যবহার, সুন্দর কথা ওই দান অপেক্ষা উত্তম, যার পেছনে আসে যন্ত্রণা। আল্লাহ তাআলা ঐশ্বর্যশালী ও পরম সহিষ্ণু। হে মুমিনগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বাতিল কোরো না। তাদের মতো যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে লোকদেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৬৩-২৬৪)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘খোঁটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (তিরমিজি)। মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম, smusmangonee@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com