ঢাকার রোডে ক্রমেই বাড়ছে যানজট। যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও রোডের পরিসর বাড়ছে না। অন্যদিকে ঢাকায় তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। যানজট কমানো এসব প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলেও বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন অবকাঠামোর জন্যে সড়ক আরও সংকুচিত হয়েছে। ফলে দিন দিন যানজট অসহনীয় হয়ে উঠেছে। গবেষণা বলছে, বর্তমানে যানজটের কারণে প্রতিদিন লাখ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। ভয়াবহ ব্যাপার হলো, বৈশ্বিক সংকটকালেও জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। বাড়ছে দূষণ। মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হচ্ছে। তাদের উৎপাদনশীলতা কমছে লক্ষণীয় মাত্রায়। যানজটের কারণে দিন দিন শহরটি বাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে। যানজটে নাকাল ঢাকার মানুষের প্রতিক্ষা এখন-মেট্রোরেল। আশা করা যায়, মেট্রোরেল উদ্বোধনের পর হয়তো কিছু কমতে পারে ঢাকার যানজট।
অবশ্য যানজট শুধু ঢাকায় নয়। যানজট প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে পৃথিবীর নানান দেশে। সব ক’টি ব্যস্ত শহরে। এই সমস্যা শুধু জোরালোই হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও সড়ক ও জনপথ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ব্যাহত করছে আধুনিক উন্নত শহুরে নাগরিক জীবন। ট্রাফিক জ্যামের কারণে হাইওয়েগুলোতে গাড়ির গতিবেগ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ঘণ্টায় ৩৫ মাইলের চেয়েও কম। এতে প্রতিবছর পাঁচ বিলিয়ন ঘণ্টার মতো সময় শুধু জ্যাম ঘটিত কারণেই নষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুড়ছে লাখ লাখ গ্যালন জ্বালানি তেল। যা কি না পরিবেশ ধ্বংসে উল্লেখযোগ্য প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশের এক গবেষণার তথ্য বলছে, গত এক যুগ সময়ের ব্যবধানে দেশের অর্থনীতির ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছে। জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। স্বভাবত সচ্ছল অনেক পরিবারই কিনেছেন মোটর সাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি। মোটর সাইকেল, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং বেসরকারী গণপরিবহণ মিলে রাজধানীর রাস্তার ৬০ ভাগ দখল করে রয়েছে। বিশ ভাগ রিক্সা আর বাকি বিশ ভাগ পার্কিং ও অবৈধ ফুটপাথ দখলদারদের হাতে রয়েছে ঢাকার রোড। এদিকে সমস্যার সমাধান হিসেবে নগর পরিকল্পনাবিদদের প্রথমেই যেটি মনে হতে পারে, তা হলো আরও বেশি উড়াল পথ, পাতাল পথ, রেল, সড়ক ও জনপথ তৈরি করা। কিন্তু মনে রাখা দরকার, নতুন একটি সড়ক ও জনপথ তৈরি করা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সেক্ষেত্রে সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় হলো বর্তমানের যে সড়ক ও জনপথ রয়েছে সেগুলোকেই আরও অধিক স্মার্ট দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা। আর তাহলেই শুধু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চালানো যাবে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাকে।
সড়ক ও জনপথকে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহারের কথা এলে প্রথমেই স্বয়ংক্রিয় সড়ক বা অটোমেটিক হাইওয়ের কথা এসে যায়। স্বয়ংক্রিয় সড়ক ও জনপথ ব্যবস্থার অধীনে বেশ কিছু লেন বা গলি, হাইওয়ে বা সুপার হাইওয়ে থাকে। আর এই পথগুলোতে বিশেষ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারে। এই যানবাহনগুলো অ্যান্ড্রয়েড প্রযুক্তি দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। এজন্য কোনো বৃহৎ সেন্ট্রাল কম্পিউটারেরও প্রয়োজন পড়ে না। যানবাহনগুলোতে স্থাপিত ছোট্ট অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্র এবং সড়ক ও জনপথ এর পাশে থাকা অ্যান্ড্রয়েড কম্পিউটারের মধ্যকার সমন্বয়ই নিয়ন্ত্রণ করে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত নিরাপদভাবে যানবাহন চলাচল। শহরের রাস্তার ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এটি অত্যন্ত ব্যয় সংকোচক একটি পদক্ষেপ বলে গবেষকরা জানান। এক গবেষণায় প্রকাশ, যে সব সড়ক ও জনপথে স্বাভাবিকভাবে প্রতি ঘন্টায় দু’ হাজার গাড়ি যাতায়াত করতে পারে সেখানে স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা স্থাপন করে নিরাপদভাবেই প্রতি ঘন্টায় ছয় হাজার গাড়ির চলাচল সম্ভব। এ ধরণের স্বয়ংক্রিয় স্মার্ট ব্যাবস্থায় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনা বাবদ যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয় তা নতুন ধরনের সড়ক ও জনপথ তৈরিতে বা বিদ্যমান সড়কগুলোকে আরও বেশি বিস্তৃত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের চেয়ে অনেকাংশে কম।
স্মার্ট স্বনিয়ন্ত্রিত যানবাহনের গবেষণায় প্রথম দিককার প্রচেষ্টাটুকু যদিও অনেক বেশি সম্ভাবনাময় হয়ে দেখা দিয়েছিল তথাপি বাস্তবসম্মত কারণে অর্থহীন বলে প্রমাণিত হয়ে বিজ্ঞানীদের কাছে বাতিল হয়ে যায়। তবে বিগত এক যুগে অ্যান্ড্রয়েড, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ বা তারহীন নানান যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং নানান ধরনের ইলেকট্রনিক্স সেন্সরের উদ্ভাবন হয়েছে। সেগুলো ট্রাফিক সিস্টেমে বাস্তবায়নেরও কাজ চলছে। এ কাজের জন্য গঠিত হয়েছে ‘মোবিলিটি’ নামক একটি সংগঠন। পরবর্তীতে এই সংগঠনটিই পরিণত হয় ‘ইন্টেলিজেন্ট ভেহিকেল হাইয়ে ক্যাপাসিটি’ নামক বিশ্ববিখ্যাত সংগঠনে। বর্তমানে এই সংগঠনের সদস্য হিসেবে বিশ্বে প্রায় হাজারটা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এই সংগঠনের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো স্মার্ট স্বয়ংক্রিয় বাহন এবং স্মার্ট সড়ক ও জনপথ ব্যবস্থার মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাওয়া। পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের সরকারও এই সংগঠনের কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। সম্প্রতি তারা গবেষকদের অভাবনীয় পরিশ্রম আর নিষ্টার কারণে সড়ক ও জনপথ এবং বাহন ব্যবস্থার একটি প্রোটোটাইপ বা ক্ষুদ্র মডেল সফল উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন। ‘ন্যাশনাল অটোমেটেড হাইওয়ে সিস্টেম’ সম্প্রতি এ ধরনের একটি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এই পরীক্ষায় দেখা যায়, সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রেখেই অনেক বেশি সংখ্যক গাড়ি বা যানবাহন চলাচলের বিষয়টিকে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হচ্ছে বিজ্ঞানীদের নতুন এই স্মার্ট ডিজিটাল ব্যবস্থা দ্বারা।
এবার জানা যাক, স্বয়ংক্রিয় স্মার্ট যানবাহন ব্যবস্থায় কেমন করে চলবে যানবাহন? সেখানে কি কোন চালকের প্রয়োজন পড়বে না? প্রয়োজন পড়লেও তার ভূমিকাই বা কী হবে? সকলের মত এ ধরনের নানান প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই এখন বেশ জোড়ালো হয়ে উঠছে গবেষকদের মনে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সব প্রশ্নের জবাবই নির্ভর করছে কোন ধরনের সিস্টেম বসানো হবে সে বিষয়টির ওপর। এ পর্য়ন্ত দু’টো ভিন্ন ধরনের সিস্টেম সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। প্রথমটি হলো ‘ডেডিকেটেড লেন সিস্টেম’। এই সিস্টেমে কিছু সংখ্যক লেনকে সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। যেখানে শুধু অটোমেটেড ভেহিকেল বা স্বয়ংক্রিয় বাহন চলাচল করতে পারে। দ্বিতীয়টি হলো মিশ্র ট্রাফিক সিস্টেম। এই সিস্টেমে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় স্মার্ট বাহনের পাশাপাশি আংশিক স্বয়ংক্রিয় বা ড্রাইভার মানুষ চালিত বাহনগুলোও স্থান পাবে। বর্তমানে প্রচলিত সড়ক ও জনপথে যে ধরনের সিস্টেম বিদ্যমান রয়েছে তাকে যদি ডেডিকেটেড লেন সিস্টেমে পরিণত করতে হয় তাহলে এই পরিবর্তন বাবদ ব্যয় হবে তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত বেশি। তবে এক্ষেত্রে একটি সুবিধাও রয়েছে। যাতে ব্যয় বেশি হলেও এতে করে সড়ক ও জনপথের যানবাহন সংকুলানে অনেক বেশি সম্ভাবনা দেখা দেবে। অর্থাৎ যে কোনো সড়ক ও জনপথে যানবাহন ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। অন্যদিকে মিশ্র ট্রাফিক সিস্টেমের ব্যয়ভার কম হলেও এর ধারণ ক্ষমতা হবে তুলনামুলক কম। তবে যে কোনো সিস্টেমেই যাত্রা শুরুর পূর্বে চালককে শুধু গন্তব্যের ঠিকানা গাড়িতে বিদ্যমান অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপসে তথ্য আকারে দিতে হবে। এমনকি স্বয়ংক্রিয় লেনগুলোতে প্রবেশের পূর্বে তথ্য দিলেও চলবে। গাড়িটি ডেডিকেটেড লেনটিতে বিদ্যমান ট্রাফিক সিটেমের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেবে। এই খাপ খাইয়ে নেয়াটি দু’ভাবে হতে পারে। প্রথম প্রক্রিয়াটি হলো: চালক যখন তার বাহনটিকে নিয়ে কোন স্বয়ংক্রিয় লেনে প্রবেশ করতে যাবেন তখন সড়ক ও জনপথের পাশে রাখা একটি ডিভাইস বৈদ্যুতিকভাবে ভেহিকেলের সঙ্গে কথোপকথন বা দরকারি যোগাযোগ সেড়ে নেবে। এতে যদি দেখা যায় যে, গাড়িটির একটি সঠিক গন্তব্য রয়েছে এবং অটোমেটেড লেনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি চালু অবস্থায় রয়েছে, তাহলেই কেবল অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রটি গাড়িটিকে স্বয়ংক্রিয় লেনে প্রবেশের অনুমতি দেবে। অন্যথায় নয়। সেকেন্ডের মধ্যে স্মার্ট এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে গাড়িটি যখন অনুমতিপ্রাপ্ত হয় তখন সঙ্গে সঙ্গে সেটি একটি দরোজা অতিক্রম করে অটোমেটেড লেনে প্রবেশের পরপরই বাহনের পুরো নিয়ন্ত্রণ চালকের হাত থেকে চলে আসে গাড়িতে থাকা স্বয়ংক্রিয় স্মার্ট নিয়ন্ত্রক বা অটোমেটেড অ্যান্ড্রয়েড কন্ট্রোলারের হাতে।
ব্যাপারটিকে অবশ্য আরেকটু খোলাসা করে বলা দরকার। কোনো অটোমেটেড ভেহিকেল লেনে প্রবেশের আগে, সচরাচর চালকরা যেমন করে থাকেন ধীরে, চারপাশটা দেখে নিয়ে এগিয়ে যান। ঠিক তেমনিভাবে খানিকটা থেমে থেমে অটোমেটেড লেনের যানগুলোর গতিবেগ লক্ষ্য করে নিরাপদে ঢুকে পড়বে। এভাবে ঢুকে পড়ার পর মুহুর্তেই গাড়িটি সম্পূর্ণভাবে ওয়াইফাই অ্যান্ড্রয়েডের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে এবং অ্যান্ড্রয়েড কম্পিউটারই যানবাহনটিকে প্রেরণ করবে সুনির্দিষ্ট কোন অটোমেটেড লেনে। এটিই হলো অটোমেটেড লেনে প্রবেশ করার দ্বিতীয় উপায়। দু’পদ্ধতির যেভাবেই আটোমেটেড লেনে প্রবেশ করানো হোক না কেনো, নতুন প্রবেশকৃত গাড়িটিকে কিন্তু বিদ্যমান ট্রাফিক প্রবাহের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে নিজেকেই। এক্ষেত্রে বর্তমানে উদ্ভাবিত স্মার্ট স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা অনেক বেশি দক্ষ বলে নিরাপদ ও মসৃণভাবে গাড়িটি বিদ্যমান ট্রাফিকের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। গাড়িটিকে নিয়ে অটোমেটেড লেনে প্রবেশ করা মাত্রই চালক পুরোপুরি মুক্ত হয়ে পড়েন। চাই কী, চালক তখন হাত-পা ছড়িয়ে নিজের স্মার্ট ফোনে অনলাইন জাগো নিউজ ২৪ ডটকম খুলে আরাম করেও পড়তে পারেন। কিংবা কিছু খেতে পারেন, বসতে অথবা খানিকটা ঘুমিয়েও নিতে তার তখন আর কোনো বাঁধা নেই। যানবাহনগুলোর অটোমেটেড লেনে চলাচল ও প্রবেশের জন্য যে কেন্দ্রীয় সিস্টেমটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেটির নির্দেশ সর্বত্র এক হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা দুর্ঘটনার কারণে কোন একটি স্থানে খানিকটা বিচ্যুতি ঘটলেই দেখা যাবে পুরো সিটেমে ঘটে চলেছে নারকীয় তান্ডব। এর থেকে মুক্তি পেতে তাই কেন্দ্রীয় অংশটিকে দুর্ঘটনা শনাক্তকারী সেন্সরগুলোর সঙ্গেও সমন্বয় করা হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা হয় যে, প্রতিটি বাহনেই সামনের প্রতিবন্ধক নিরূপণের জন্য একটি ডিভাইস রাখা হয়। আর বাহনগুলো মধ্যকার যে যোগাযোগ সেটি মূলত ট্রাফিক প্রবাহ সম্পর্কে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েড কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়ে একটি তথ্য প্রদান করে। এছাড়া যেসব স্থানে ট্রাফিক পুলিশের চাহিদা বেশি সেখানে কাজ করতে পারে রাস্তাঘাট অবলোকনকারী স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড। সাধারণত সড়ক ও জনপথের ট্রাফিক প্রবাহ মৃসণ রাখার জন্য এই অটোমেটেড হ্ইাওয়েতে চলাচলকারী বাহনগুলোর গতিবেগ এবং তাদের পরস্পরের মধ্যকার নিরাপদ দূরত্বটুকু নির্ধারণের জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাজ করে স্যাটেলাইট ওয়াইফাই নিয়ন্ত্রিত এই অ্যানড্রয়েড।
অটোমেটেড হাইওয়েতে চলাচলকারী বাহনগুলোর গতিবিধির উপর লক্ষ্য রেখে এদের দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমটি হলো ফ্রি এজেন্ট ভেহিকেলস। এক্ষেত্রে প্রতিটি বাহনই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে। তবে এমনভাবে চলাচল করে, যাতে কোন প্রকার দুর্ঘটনা ব্যতিরেকেই যে কোনো বাহনকে তাৎক্ষণিকভাবে থামিয়ে দেয়া সম্ভব। দু’টো গাড়ির মধ্যকার স্থানের পরিমাণ নির্ভর করবে উভয় গাড়ির ব্রেকিংয়ের ক্ষমতা, রাস্তার অবস্থা (মসৃণ নাকি খড়খড়ে) এবং নিযন্ত্রণকারী যন্ত্রাংশের প্রতিক্রিয়াশীল সময়ের ওপর। দ্বিতীয়টি হলো প্লাটুন্ড ভেহিকেল। এক্ষেত্রে বেশ কিছু গাড়ি গুচ্ছাকারে কোনো একটি অটোমেটেড লেন বরাবর চলাচল করে। এই প্রক্রিয়ায় সড়ক ও জনপথের ধারণ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যায়। গুচ্ছবদ্ধ বাহনগুলোর যে কোনোটির সঙ্গে প্রতিটি বাহনের ইলেকট্রনিক সংযোগ থাকে। এক্ষত্রে তারবিহীন লোকাল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ওয়াইফাই ব্যবহৃত হয়। বাহনগুলোর মধ্যকার এই সার্বক্ষণিক সংযোগ এদের একটি বৈদ্যুতিক ভ্রামক ট্রেন বা ইলেক্ট্রনিক কাপলড ট্রেনে পরিণত করে। দশ থেকে বিশটি বাহন এক্ষেত্রে এই প্লাটুন্ড গঠন করে থাকে।
তাই বলা যায়, আগামী দিনের স্মার্ট বাংলাদেশে অটোমেটেড স্মার্ট রোড, স্মার্ট গাড়ি এবং সড়ক ও জনপথ ব্যবস্থা বর্তমানের সড়ক ও জনপথ ব্যবস্থার চেয়ে খুব একটি ভিন্ন হবে তা কিন্তু নয়। তবে ট্রাফিক জ্যাম থেকে মুক্ত থাকতে ও দূর্ঘটনামুক্ত স্বয়ংক্রিয় স্মার্ট প্রযুক্তির গাড়ির ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে বর্তমান বিদ্যমান সড়ক ও জনপথ বাবস্থাকে অনেকাংশে ডিজিটাল উপায়ে ঢেলে সাজাতে হবে। শেখ হাসিনা সরকারের হাতে ডিজিটাল আধুনিক হয়েছে বাংলাদেশ। এখন স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার পালা। তাই আশা করা যেতেই পারে- হয়তো এমন একদিন আসবে, যখন গাড়ির সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র স্মার্ট অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রের কারণেই কোন চালকেরই প্রয়োজন পড়বে না। গাড়িতে ওঠে নির্দিষ্ট কয়েকটি বোতাম টিপে অফিসের ইমেইল খুলে বসে থাকবেন। শহরের স্মার্ট গাড়ি স্মার্ট ডিজিটাল রোডের চারিদিকে তাঁকাবেন। দেখবেন কোথাও কোন যানজট নেই। নেই কোন দুর্ঘটনার ভয়ও। স্মার্ট রোডে স্মার্ট গাড়ি, নিরাপদে পৌঁছে দেবে আপনার কর্মস্থল ও বাড়ি। লেখক: শেখ আনোয়ার,
বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক। এম.ফিল স্কলার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।