সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

মাদকের ভয়াল থাবা

দয়াল কুমার বড়ুয়া :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে দু’দিনে বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে ৩৯ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকের সময় তাদের হেফাজত থেকে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। রাজধানীসহ সারাদেশেই এ ধরনের মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরও দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে। শুধু তরুণ-যুবকরাই নয়, সব বয়সের মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে মাদক। অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরীরাও মাদকের দিকে ঝুঁকছে। রাজধানীতে অনেক পথশিশুর ‘ড্যান্ডি’ নামক নেশার উপাদানের প্রতি দিন দিন আসক্তি বাড়ছে। জুতা বা ফোমে ব্যবহৃত সলিউশন বা আঠা ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ, সংক্ষেপে ‘ড্যান্ডি’ নামে পরিচিত। এই নেশায় আসক্ত কিছু পথশিশু মনে করে, ড্যান্ডি সেবনে দুঃখকষ্ট ভুলে থাকা যায়। এর প্রভাবে ক্ষুধাও কম লাগে। কিছু পথশিশুর আবার ড্যান্ডি সেবন নিয়ে প্রচ- কৌতূহল থাকে। এসব কারণে তারা ড্যান্ডির প্রতি আসক্ত হয়। কখনো বড়দের সংস্পর্শে এসে বা তাদের অনুসরণ করেও এই ড্যান্ডিতে আসক্ত হচ্ছে তারা। একবার যারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ে তারা আর তা থেকে মুক্ত হতে পারে না। অন্যদিকে মাদক সহজলভ্য হওয়ায় নতুন করে অনেকেই আসক্ত হচ্ছে। সর্বনাশা মাদকের ভয়াবহ থাবা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। এখন মাদক এতটাই সহজলভ্য যে শুধু শহর নয়, প্রত্যন্ত গ্রামেও হাত বাড়ালে মাদক পাওয়া যায়। টার্গেট করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। মাদকের নেশায় আসক্ত হচ্ছে তারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের তথ্য বলছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে মাদকের ঘটনায় ৮৩ হাজার ৬১১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এক লাখ চার হাজার ১৯৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, দেশে সংঘটিত বেশির ভাগ অপরাধের পেছনে রয়েছে মাদক। পারিবারিক নৃশংসতা, ধর্ষণের মতো ঘটনার পেছনেও রয়েছে মাদক। মাদকাসক্তরা নিজেদের ধ্বংস করছে, পরিবারকেও ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের পথে। নানা রকম অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ার ফলে সামাজিক স্থিতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে ঘুরে না দাঁড়ালে সামনের দিনের ভয়ংকর পরিণতি রোধ করা যাবে না। একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেট এই সর্বনাশা মাদক বিক্রি করছে। এই সিন্ডিকেটকে রুখতে হবে। প্রতিদিনই নতুন করে অসংখ্য কিশোর-তরুণ এই মাদকের ফাঁদে পা রাখছে। মাদকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে মাদকের অর্থ জোগাড় করতে অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়ছে। মাদক সরবরাহে বাহক হিসেবে এখন নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। স্কুলপড়ুয়া কিশোরী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক তরুণী মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন।
মাদক উৎপাদন, বিক্রয় ও সরবরাহকারী এই জায়গাগুলো বন্ধ করা না গেলে মাদকের বিস্তার কমানো যাবে না। মাদক সরবরাহের চেইন সম্পূর্ণ বন্ধ করারও কোনো বিকল্প নেই। অভিযোগ আছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য মাদকপাচার ও চোরাচালানে জড়িত। দেশের ভেতরে যাতে মাদক সরবরাহ করা না যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে। মাদকের মামলাগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুততর করতে হবে। সর্বোপরি মাদক বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মাদক নির্মূলে সবার সম্মিলিত চেষ্টার কোনো বিকল্প নেই।
সর্বনাশা মাদক এখন দেশব্যাপী আরো ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বগ্রাসী এ মরণ নেশার কারণে দেশের লাখ লাখ মানুষ বিশেষ করে তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে সড়ক ও নৌ পথে ইয়াবাসহ নানা মাদকদ্রব্য দেশে ঢুকছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের তরুণ ও যুব সমাজকে। মাদকের বিষাক্ত ছোবলে অকালে ঝরে পড়ছে তাজা প্রাণ, শূন্য হচ্ছে মায়ের বুক। অভিভাবকরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত কখন মাদকের নেশার জালে আটকা পড়ে তাদের প্রিয় সন্তান। আগে মাদক বলতে ছিল প্রধানত গাঁজা। এখন তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আরো অনেক নাম। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর মাদক হচ্ছে ইয়াবা। শারীরিকভাবে এর ক্ষতি মারাত্মক। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেউ দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে তার মধ্যে মানবিক গুণাবলি বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে না। খুন-খারাবিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তারা করতে পারে না। অথচ, ভয়ংকর মাদক ইয়াবা এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। এর নেশা যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে যায় তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে সন্তানকে রক্ষার জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে পুরো জাতি আজ শঙ্কিত। সাধারণত কোনো দ্রব্য সহজলভ্য হলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বা মানুষের হাতে চলে যায়। বর্তমানে দেশে সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এই মাদক। নানা কৌশলে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মাদক ঢুকছে। দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন হেরোইন, আফিম, প্যাথেডিন, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক বিক্রি হয়। এর মধ্যে ইয়াবা সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ইয়াবা এখন মুড়িমুড়কির মতো বিক্রি হচ্ছে দেশে। এই ইয়াবা আসে মূলত মিয়ানমার থেকে। সীমান্তে তার চোরাচালান আমরা আটকাতে পারছি না। যে কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে এটি দ্রুত। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইয়াবা হেরোইনের চেয়েও ক্ষতিকর। এটা এক ধরনের মনোউত্তেজক মাদক। ইয়াবা সেবনের ফলে সাময়িক শারীরিক উদ্দীপনা বাড়লেও কমতে থাকে জীবনীশক্তি। কিন্তু সমাজ, দেশ ও জাতিকে সুস্থ রাখতে হলে সর্বনাশা এ কারবার জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করা প্রয়োজন। মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে মাদকদ্রব্যের প্রাপ্তি যাতে সহজলভ্য না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। যে কোনো মূল্যে ঠেকাতে হবে মাদকের অনুপ্রবেশ। দেশেও যাতে মাদকদ্রব্য উৎপাদন হতে না পারে সে ব্যাপারেও পদক্ষেপ নিতে হবে।
দুঃখজনক হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে ছোটখাট মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের চালান ধরা পড়লেও কুশীলবরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। অন্যদিকে মাদক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগে যাদের আটক করা হয়, তারাও কয়েক দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসে আবার ওই কারবারে যুক্ত হয়। অভিযোগ রয়েছে, সমাজের প্রভাবশালী অনেক ব্যক্তি এসব সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। মাদকের ভয়াল থাবা থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, মানুষ বাঁচাতে হবে মাদক সিন্ডিকেট যতই শক্তিশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক তথা মাদকাসক্তি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত মাদকদ্রব্যের অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ করা, মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। এছাড়া বেকারদের কর্মসংস্থান ও স্কুল-কলেজে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি মাদকাসক্তির কুফল সম্পর্কে শিক্ষা দান এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। মাদকাসক্ত ব্যক্তির চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। মাদকাসক্ত ব্যক্তি স্বভাবতই চিকিৎসা নিতে চায় না। কারণ, সে বুঝতেই পারে না, তার চিকিৎসার প্রয়োজন। তাই দেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। লেখক: কলামিস্ট ও রাজনীতিবিদ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com