আমাদের পূর্বসূরিরা বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে উপদেশপূর্ণ পত্র লিখতেন। তেমনি হাসান বসরি (রহ.) একবার ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.)-এর প্রতি পত্র লিখেছিলেন। সেখানে তিনি দরদের ভাষায় রাষ্ট্রপ্রধানকে দুনিয়ার প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছেন:
আমিরুল মুমিনিন!
আল্লাহ সৎ বান্দাদের সামনে দুনিয়াকে পরীক্ষাস্বরূপ সংকীর্ণ করে দিয়েছেন। দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকা ব্যক্তি কিভাবে চিন্তা করে যে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাকে সম্মানিত করেছেন! তারা কি ভুলে গেছে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কী করা হয়েছিল, তিনি পেটে পাথর বেঁধেছিলেন
আদম (আ.)-কে একটি ভুলের প্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল দুনিয়ার বুকে। হে আমিরুল মুমিনিন! দুনিয়া থেকে নিজেকে নিবৃত রাখুন।
দুনিয়াকে ছেড়ে দেওয়াই আপনার প্রকৃত পাথেয়। দারিদ্র্য এখানে প্রকৃত প্রাচুর্য। যে দুনিয়াকে সম্মান করে, দুনিয়া তাকে অপমান করে দেয়। যে তাকে একত্র করতে চায় তাকে দুনিয়া বিচ্ছিন্ন করে দেয়। দুনিয়া হচ্ছে এমন বিষের মতো, বিষ পানকারী জানে না, এটি তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই এই ধোঁকা ও প্রতারণার দুনিয়া থেকে নিজেকে পূর্ণ সতর্ক রাখুন। যত দিন দুনিয়াতে থাকবেন নিজেকে সর্বোচ্চ গোপন রাখার চেষ্টা করুন। এই দুনিয়ার আনন্দ দুঃখ মিশ্রিত। এখানের স্বচ্ছতা আবর্জনায় ঘেরা। যদি সৃষ্টিকর্তা দুনিয়ার ব্যাপারে আমাদের কোনো সংবাদ না দিতেন এবং এর ব্যাপারে কোনো উপমা আমাদের সামনে উপস্থাপন না করতেন তবু এর আবর্জনা ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুম ভাঙিয়ে দিত, অসতর্ক ব্যক্তিকে সতর্ক করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের ধমক ও উপদেশ এসেছে। আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহর কাছে এই দুনিয়ার কোনো সম্মান মর্যাদা নেই। তিনি নিজেও সৃষ্টির পরে দুনিয়ার দিকে ফিরে তাকাননি। আমাদের প্রিয় নবীর সামনে দুনিয়ার চাবি ও ভা-ার পেশ করা হয়েছিল। যা আল্লাহর বিশাল ভা-ার থেকে মশার পাখা পরিমাণও কমাতে পারবে না। প্রিয় নবী (সা.) তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃত জানিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা যা অপছন্দ করেছেন তিনিও তা পছন্দ করেননি। মহান মালিক যাকে নিচু করে দিয়েছেন তিনি তাকে উঁচু করেননি। আর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ওইরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে। ’ (সহিহ মুসলিম)
আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহ তাআলা সৎ বান্দাদের সামনে দুনিয়াকে পরীক্ষাস্বরূপ সংকীর্ণ করে দিয়েছেন। আর শত্রুদের সামনে দুনিয়াকে ফাঁদ হিসেবে প্রসারিত করে দিয়েছেন। দুনিয়ার ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকা ব্যক্তি কিভাবে চিন্তা করে যে এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাকে সম্মানিত করেছেন! তারা কি ভুলে গেছে, রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে কী করা হয়েছিল, যখন তিনি পেটে পাথর বেঁধেছিলেন। আল্লাহর শপথ, কোনো ব্যক্তির সামনে যদি দুনিয়াকে বিস্মিত করে দেওয়া হয় আর সে আল্লাহকে ভয় না করে যে এর দ্বারা আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করছেন, তাহলে বুঝতে হবে তার বিবেক-বুদ্ধি কমে গেছে, তার চিন্তাশক্তি দুর্বল হয়ে গেছে। তেমনি কোনো ব্যক্তি থেকে যদি দুনিয়া গুটিয়ে নেওয়া হয়, আর সে তাকে কল্যাণকর মনে না করে তার ক্ষেত্রেও বুঝতে হবে, তার বিবেক-বুদ্ধিতে অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। (হিলয়াতুল আওলিয়া থেকে সংক্ষেপিত : ৬/৩১৩)