আগামীকাল আকাশে উঠবে নতুন দিনের নতুন সূর্য। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে পড়বে আরো একটি পাতা। জীবনের খাতা থেকে হারিয়ে যাবে আরো একটি বছর। হারিয়ে যাবে অনেক সুখ-দুঃখের অনেক স্মৃতি। আসছে নতুন ঈসায়ী নববর্ষ ২০২৩।
২০২২ সালে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল রাশিযা ইউক্রেন যুদ্ধ এবং তার কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছেÍএতে বোধ হয় অত্যুক্তি হবে না। জ্বালানির বাড়তি দামের কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে তৈরি হয় এক অভূতপূর্ব সংকট। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সারা বিশ্বেই কোভিডজনিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়। তখন থেকেই বাজারে চাহিদা বাড়তে শুরু করে। জ্বালানির দামও বাড়তে শুরু করে, যদিও লকডাউনের সময় একপর্যায়ে জ্বালানির দাম শূন্যেরও নিচে নেমে গিয়েছিল। একপর্যায়ে অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম প্রতি ব্যারেলে ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন ৮০ টাকা নির্ধারণ করে। এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার।
শত দুঃখ যন্ত্রণা রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ অনুযোগের পরও আশা জাগিয়েছে পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের উদ্বোধনের মতো কিছু গঠনা। ২৫ জুন ছিল বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের দিন। দেশের সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয় এই দিন। উদ্বোধন হয় পদ্মা সেতুর, যা দেশীয় অর্থায়নে বড় অবকাঠামো নির্মাণে বাংলাদেশের সক্ষমতাও প্রকাশ করে। এই সেতু চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে নৌপথ–নির্ভর দক্ষিণাঞ্চল রাজধানীর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক পথে যুক্ত হয়। সেতুকে ঘিরে দক্ষিণের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে সড়কপথে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য (নদীর অংশ) ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই পারে ভায়াডাক্ট বা সেতুর বাইরের উড়ালপথ ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। তেলের দাম বাড়ার কারণে সব দেশেই বিপাকে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরব সফর করে দেশটিকে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সৌদি আরব তাঁর কথায় কর্ণপাত করেনি। একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের কৌশলগত মজুত ভান্ডার থেকে তেল বিক্রি শুরু করে। এতেও দাম কমেনি। অনেক দেশ গোপনে কম দামে রাশিয়ার তেল কিনছে। পরিস্থিতির বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ না হলে তেল নিয়ে এই রাজনীতির শেষ হবে না।
এত সঙ্কটের আশংকার মাঝেও আমরা স্বপ্ন দেখি,আগামী বছরের দিনগুলো সমৃদ্ধি বয়ে আনুক ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে। নতুন বছরে দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠুক নতুনভাবে। সরকারের কর্মোদ্দীপনায়, দেশ ও জাতির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আরও বিস্তার লাভ করুক। আমরা চাই সরকার জনগণের প্রত্যাশা, আবেগ ও অনুভূতিকে যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। দেশ ও জাতির মঙ্গলে সবার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুপ্ত দেশপ্রেম জাগ্রত হোক, খুলে যাক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার- নতুন বছরে এ প্রত্যাশাই করছি।