পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ওপারে পাড়ি দিয়েছেন ফুটবলের রাজা পেলে। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই শেষে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। পেলের মৃত্যুতে ব্রাজিল সরকার তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। তাছাড়াও ব্রাজিল ফুটবল ফেডারেশন সাতদিনের শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে। যে সান্তোস তাকে এনে দিয়েছে জগৎজোড়া স্বীকৃতি, শেষ বিদায়টা সেখানেই জানানো হবে তাকে। ফুটবলের প্রথম মহাতারকার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ীই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে সান্তোসের ক্লাব প্রাঙ্গণে।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে পেলের। সে কারণে কেমোথেরাপি দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়, নেয়া হয় ‘এন্ড-অফ-লাইফ কেয়ার ইউনিটে’। সেখানেই নিজের শেষ যাত্রা নিয়ে ইচ্ছাগুলো প্রকাশ করে যান পেলে। হাসপাতাল থেকে তার দেহ সমাহিত করার জন্য প্রস্তুত করে তার দেহ নিয়ে যাওয়া হবে সাও পাওলোর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে। সেখানে তার দেহ রাখা হবে ২৪ ঘণ্টা। এরপর সান্তোস ক্লাবের প্রাঙ্গণে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন ফুটবলের রাজাকে ‘শেষ শ্রদ্ধা’ জানাতে পারবেন ভক্ত-সমর্থকরা, জানায় তার ক্লাব সান্তোস। এরপর ৩ জানুয়ারি সকালে তার দেহ নিয়ে সান্তোসের রাস্তায় হবে ‘শেষ যাত্রা’। পেলের মা তাকে শেষ একবারের মতো দেখবেন এরপর। ১০০ বছর বয়সী শয্যাশায়ী সেলেস্তে আরান্তেস তাকে দেখার পরই তাকে সমাহিত করা হবে মেমোরিয়া নেকরোপোল একিউমেনিকা নামক এক সমাধিস্থলে।
ফুটবল ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জয় করেন পেলে। ১৯৫৮ সালে যখন ব্রাজিল বিশ্বকাপ জয় করে, তখন পেলের বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। এরপর ১৯৬২ এবং ১৯৭০ সালেও বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। তিনি ২০০০ সালে ফিফার শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
ইতিহাসে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জিতেছেন পেলে। তার একুশ বছরের ক্যারিয়ারে ১ হাজার ৩৬৩টি ম্যাচে ১ হাজার ২৮১টি গোল করেছেন। এর মধ্যে ব্রাজিলের হয়ে ৯১ ম্যাচে করেন ৭৭টি গোল। ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে ফিফা গোল্ডেন বল পুরস্কারও জেতেন তিনি। তবে বেশ কয়েকবছর ধরেই শরীর ভালো যাচ্ছিলো না পেলের। ২০১৫ সালে স্নায়ুর সমস্যায় মেরুদ-ে অস্ত্রোপচারও করা হয় তার। কিডনি ও প্রস্টেটের সমস্যা নিয়ে একাধিকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফুটবলের কিংবদন্তি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মস্কোয় রাশিয়া বিশ্বকাপের এক অনুষ্ঠানে হুইলচেয়ারে বসা অবস্থাতেই দেখা গিয়েছিল তাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ব্রাজিলের সাও পাওলোর আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল ভর্তি হন পেলে। সেখানে তার একটি টিউমার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। রুটিন পরীক্ষায় তার টিউমার ধরা পড়ে। চলতি বছর ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে তাকে আবারও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।