বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

মুন্সীগঞ্জে তিন ফসলি জমিতে পুকুর কেটে মাটি বিক্রির হিড়িক

হুমায়ুন কবির মুন্সীগঞ্জ :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০২৩

মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর বীরতারা ইউনিয়নের দয়াহাটা মৌজা ও সিরাজদিখান উপজেলার বালুরচর ইউনিয়নের তিন ফসলি জমি ও পুকুর সংস্কারের নামে মাটি কাটার হিড়িক পড়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই একটি অসাধু চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। ট্রলি ও ট্রাকে মাটি নিয়ে যাবার সময় সড়কে পড়ছে মাটি। এতে নষ্ট হচ্ছে স্থানীয় সড়ক। অপরদিকে উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দেরচর ও খাসকান্দি গ্রামের কবরস্থানসংলগ্ন এলাকায় এই অবস্থা দেখে গেছে। এতে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এমন কাজে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করার মতো সাহস পায় না বলেও জনমনে ক্ষোভ করছে সরকারী নিয়মনীতির বিষয়। এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হলেও এ বিষয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের কাছে সাংবাদিকদের মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও পাঠিয়েও কোন ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। স্বল্পমূল্যে মাছ চাষের কথা বলে জায়গা নিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছে এসকল অসাধু জমি ব্যবসায়ীরা। বড় বড় পুকুর কাটার নাম দিয়ে মাটি বিক্রি করে চলেছে দেদারছে। সরেজমিনে কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নের প্রতিটি ইউনিয়নেই এমন দৃশ্য নজরে পড়বে সকলের। গ্রামের মধ্যবর্তী মাঠ থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন পার্শ্ববর্তী গ্রামের সুমন। পুকুর সংস্কারের নামে যৌথ মালিকানাধীন একশ একরেরও বেশী জায়গায় তিন ফসলী জমি কেটে একটি পুকুর বানিয়ে যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছেন গ্রামের রাসেল ও সুমন। রাসেল ও সুমন এক্সকাভেটর দিয়ে পুকুর খনন করে ট্রলি ও ট্রাকযোগে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যত্র। এ সকল পুকুর খননকারী ও মাটি বিক্রেতাদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা প্রশাসনের অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি। ওই ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েবের কাছ থেকে জানা গেছে, তাদের কারোরই মাটি কাটার অনুমতি নেই। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী জানান, কিছু মাটি ব্যবসায়ী ফসলি জমির মালিকদের সাথে চুক্তি করে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। মাটি বহনকারী ট্রলি, ট্রাক শ্রীনগর বীরতারা ইউনিয়নের দয়াহাটা মৌজার সকল রাস্তা দিয়ে এ সকল মাটি নিয়ে যেতে দেখা গেছে। অপরদিকে সিরাজদিখান বিভিন্ন রাস্তায় দ্রুতগতিতে চলাচল করছে। আকারভেদে প্রতিগাড়ি মাটি ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অনেক জায়গায় সড়কের অংশ কেটে গাড়ি ওঠা-নামার ব্যবস্থা করায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। পাশিপাশি এসব যানবাহনে মাটি বহন করার সময় ধুলোবালিতে পথে চলাচলকারী মানুষের নানা সমস্যা হচ্ছে। মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বায়ুদূষণজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। মাটি নিয়ে যাওয়ার কারণে আশপাশের ফসলি জমি ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জানানোর পরও পুকুর খনন বন্ধ করা হয়নি। এমনকি ঘটনাস্থলে প্রশাসনের কাউকে যেতেও দেখা যায়নি। এভাবেই চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন আর মাটি বিক্রির উৎসব। অনেকে আবার দিনে মাটি না কেটে রাতের আঁধারে মাটি কেটে বিক্রি করছে। কিন্তু প্রশাসনের নজরদারিতেও বন্ধ হচ্ছে না মাটি কাটা ও বিক্রির ব্যবসা। এ বিষয় শ্রীনগর দয়াহাটা মৌজার মাঠি কাটছে মোঃ রাসেল আর সুমন, রাসেল ফোন ্আলাপে বলেন, কোন অনুমতি নেই নাই। আমরা আমাদের ইচ্ছায় মাটি কাটছি সত্য, জমির মালিক খালেক ডাক্তার। জমিতে ফসল হয় না তাই মাটি কেটে বিক্রি করে আবার বালু দিয়ে ভরে ভিটি বানাবো। শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ‘মাটি কাটার তো অনুমতি নেই। আমরা অভিযোগ পেলে অভিযান পরিচালনা করি। কখনো পুলিশ পাঠিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। সমস্যা হলো কিছুদিন পর আবার শুরু করে। কিংবা একজনকে বন্ধ করলে অন্য জায়গায় অন্য কেউ মাটি কাটা শুরু করে। এখানে আরেকটি সমস্যা হলো, মাটির দরকার, কিন্তু মাটি পাওয়া যাচ্ছে না। এমন অবস্থায় বেপরোয়াভাবে মানুষ মাটি কাটা ও বিক্রি করছে। আপনারা আমাদের তথ্য দেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। ‘ সিরাজদিখানে এক্সকাভেটর দিয়ে তিন ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এর পাশের জমিতেই চলছে আলুসহ শাকসবজির আবাদ। গত শুক্রবার উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দেরচর-খাসকান্দি কবরস্থানসংলগ্ন এলাকায় সিরাজদিখানে এক্সকাভেটর দিয়ে তিন ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। এর পাশের জমিতেই চলছে আলুসহ শাকসবজির আবাদ। গত শুক্রবার উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দেরচর-খাসকান্দি কবরস্থানসংলগ্ন এলাকায়। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে তিন ফসলি কৃষিজমির মাটি কেটে বালু ভরাটের হিড়িক পড়েছে। এ ছাড়া জমির মাটি কেটেও বিক্রি করা হচ্ছে। জমির শ্রেণি পরিবর্তন আইন না মেনেই একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে দিনদুপুরে এ কাজ করছে। উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দেরচর ও খাসকান্দি গ্রামের কবরস্থানসংলগ্ন এলাকায় এই অবস্থা দেখে গেছে। এতে কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষক ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, এলাকার মদিনাপাড়ার আব্দুস সালামসহ তাঁর সহযোগী চক্র দীর্ঘদিন ধরে এ কাজ করছে। এর মধ্যে রেকর্ড করা সম্পত্তির পাশাপাশি খাসজমিও রয়েছে। গত শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, বালুচর ইউনিয়নের চান্দেরচর ও খাসকান্দি গ্রামের খাসকান্দি মৌজার তিন ফসলি জমির মাটি কেটে বালু ভরাটের জন্য পকেট বানানো হচ্ছে। এক পাশে আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজি রোপণ করা হচ্ছে, অন্য পাশে এক্সকাভেটর (ভেকু) দিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। খাসকান্দি গ্রামের কৃষক মো. আতাউর বলেন, ‘আমাদের এলাকার জমিগুলো হাউজিং কোম্পানি জবরদখল ও জোরপূর্বক কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তারা শ্রেণি পরিবর্তন না করে তিন ফসলি জমিগুলো ভরাট করছে। এ রকম চলতে থাকে একসময় কৃষিজমি আর থাকবে না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কৃষক জানান, প্রথমে একটি জমি থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর করে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়। পরে জমির চারপাশ ভেঙে পড়ে। এতে পাশের জমিতেও চাষ করা সম্ভব হয় না। খাসকান্দি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ইয়াসমিন বলেন, ‘বালুচর ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের খাসকান্দি, চান্দেরচরসহ কয়েকটি গ্রামে ৬৫৫ হেক্টর তিন ফসলি জমি ছিল। বর্তমানে ৫৪০ হেক্টর জমি রয়েছে। রেললাইন, হাউজিং এবং ইটভাটার কারণে ১১০ হেক্টর তিন ফসলি জমি কমে গেছে। এতে করে কৃষিজমি দিন দিন কমে যাচ্ছে।’ অভিযুক্ত মদিনাপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমি জমি কেনাবেচা করি। আমার কাছ থেকে যাঁরা জমি কিনে নেন, তাঁরা বাড়ি বানানোর জন্য জমি কাটেন হয়তো। আমি মাটি কেটে বিক্রি করি না, এখন কারা জমি কেটে ভরাটের কাজ করছে তাও জানি না।’ বালুচর ইউপির সদস্য আলেকচান সজীব বলেন, ‘শুক্রবার নায়েব (সহকারী ভূমি কর্মকর্তা) আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। পরে তাঁরা এসে মাটি কাটা বন্ধ করেছেন কি না, সে বিষয়ে আমি জানি না। তবে গতকালও মাটি কেটেছে। আজ (শনিবার) কাটছে কি না, বলতে পারছি না।’ বালুচর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. অয়াহিদ বলেন, ‘কেউ জমির শ্রেণি পরিবর্তন না করে অথবা অনুমোদন না নিয়ে ফসলি জমি কাটতে পারে না। আমরা বিষয়টি অবগত আছি। ছুটির দিন বলে পরিদর্শনে যেতে পারিনি। তবে আগামীকাল (রোববার) সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা নেব।’ সিরাজদিখান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মাটি কাটা বন্দে ওই স্থানে নায়েককে পাঠিয়েছি। যদি আজও (শনিবার) মাটি কাটা শুরু করে, তবে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com