বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরে অবস্থিত ২০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম উদ্বোধনের প্রায় দেড় যুগ পরও পুরোদমে শুরু হয়নি। সম্প্রতি একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলছে হাসপাতালের বর্হিবিভাগ চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপাতালের অসমাপ্ত নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। নিয়োগ দেয়া হয়েছে চিকিৎসক, সেবিকাসহ বিভিন্ন শ্রেনীর কর্মচারি। কিন্তু কাগজে কলমে ২৩ জনকে নিয়োগ দেখানো হলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে কোন চিকিৎসক বা সেবীকাকে কর্মরত পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসকসহ নয় জন কর্মরত রয়েছেন। তাঁরা নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসলেও সরেজমিন গিয়ে একজন চিকিৎসক ও একজন ফার্মাসিস্ট দেখা মিলে আর বাকীঁদের কোন খোঁজ মেলেনি। আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে এই হাসপাতালের জন্য চার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার এবং স্টাফ নার্সসহ ২৩ জনবল দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের জন্য মঞ্জুরি করা পদগুলোর মধ্যে রয়েছে, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, জুনিয়র কনসালটেন্ট এনেসথিয়া, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার এবং মেডিক্যাল অফিসার। পাঁচ স্টাফ নার্স, এক মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান (ল্যাব), এক ফার্মাসিস্ট এবং এক প্রধান সহকারি কাম হিসাব রক্ষক। এছাড়া দুই ওয়ার্ডবয়, এক ল্যাব সহকারি, এক অফিস সহায়ক, এক কুক/মশালচি, এক দারোয়ান, এক এমএলএসএস এবং এক সুইপার। মঞ্জুর করা ২৩ জনের মধ্যে ১৪টি শুন্য পদ শুন্য রয়েছে । উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল তালিকায় বর্তমানে হাসপাতালে একজন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও পাঁচ স্টাফ নার্সকে কর্মরত দেখানো রয়েছে। কিন্তু গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিন সান্তাহার হাসপাতালে গিয়ে প্রধান ফটকের দরজা খোলা অবস্থায় দেখা যায়। আব্দুল মান্নান নামে একজন ফার্মাসিস্ট বসে আছে। কথা হয় তার সাথে তিনি বলেন, একজন মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক আছে এসে দুপুর ১টায় পযর্ন্ত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আবার চলে যায় তবে আজকে এখনও আসেনি। রথবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম রবিন বলেন, নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসক ও নার্সরা কেউ হাসপাতালে আসেন না। শুধু মাঝে মধ্যে একজন ডাক্তার ও তার সহকারীকে হাসপাতালে আসতে দেখা যায় কিন্তু নিয়মিত আসে না আর এখনো শুরু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম। সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেম উদ্দীন বলেন, বর্তমানে সান্তাহার শহরে মানুষের চিকিৎসার কোন প্রকার ব্যবস্থা নেই। ২০ শয্যা হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ শেষ করে জনবল নিয়োগ হলেও সেখানে চালু হয়নি চিকিৎসা কার্যক্রম, যা অত্যান্ত দুঃকজনক। তিনি দ্রুত হাসপাতালটি পুরোদমে চালুর জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান। আদমদীঘি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সান্তাহার পৌরসভার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ২০০৪ সালে শহরের রথবাড়ি এলাকায় ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মান কাজ শুরু করা হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ে অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিএনপি দলীয় সাংসদ আব্দুল মোমেন তালুকদার খোকা। হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ না করেই সমুদয় বিল তুলে নিয়ে উধাও হয়ে যায় নির্মাণ ঠিকাদার সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বোনের ছেলে শাওরিন ইসলাম। এরপর ১৪ বছর ধরে হাসপাতালটি থাকে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায়। বর্তমান সরকারের সময় ২০১৯ সালে পুনরায় হাসপাতালের নির্মান কাজ শুরু হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালে ২৩ লোকবল নিয়োগ দেয়। এ বিষয়টি নিয়ে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. শফিউল আজমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, হাসপাতালে বর্হিবিভাগ চালু করা হয়েছে। দ্রুত তিনি ওই হাসপাতালে যাবেন এবং কি কি জিনিস প্রয়োজন সে সব দেখে এটি পুরোপুরি চিকিৎসা সেবা চালুর ব্যবস’া করবেন। এ ছাড়া হাসপাতালে জন্য বরাদ্দ হওয়া ফার্নিচার বগুড়ায় এসে পৌছেছে। সে গুলো দ্রুত সেখানে পাঠানো হবে।