কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শিমুলতলা গ্রামে ধলাই নদীর ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁধের কারণে হুমকির মুখে গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার। দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে ধলাই নদীর ভাঙ্গন হতে মণিপুরি অধ্যুষিত শিমুলতলা গ্রামবাসীকে রক্ষার জন্য কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ শিমুল তলা গ্রামে ধলাই নদীতে ইউ আকৃতির বড় ধরণের একটি বাঁক দেখা দিয়েছে। বাঁকটির নিচেই ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় চারশ’ ফুট পরিমাণ মাটি ধ্বসে পড়েছে। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের প্রবল ¯্রােতে দ্রুত সময়ে নদী ভাঙ্গনের আশঙ্কা রয়েছে। নদীর এই স্থান দিয়ে ভাঙ্গন দেখা দিলে মণিপুরী অধ্যূষিত গ্রামের অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি, জমির ফসল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, বিগত এগারো বছর যাবত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও ঝুঁকিপূর্ণ এই স্থানটিতে বাঁধ মেরামতের কোন কাজ হয়নি। দীর্ঘ সময়ের ফলে উপজেলার দক্ষিণ শিমুলতলা গ্রামের বাঁধটি পুরোদমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে বর্ষার সময়ে প্রবল ¯্রােতে বাঁধ ভেঙ্গে বাড়িঘর বিলীনসহ বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের প্রফুল্ল কুমার সিংহ, মনোদেবী সিনহা, সুষমা সিনহা, সুচিত্রা সিনহা, অকিলা সিনহা, সুমন সিংহ বলেন, আমরা বাড়িঘর নিয়ে বড় ধরণের ঝুঁকির মধ্যে আছি। অনেক আগ থেকেই বাঁধ মেরামতের দাবি জানিয়ে আসলেও এখানে বাঁধে কোন ব্লক দেয়া হচ্ছে না। ফলে বাঁধের মাটি ধ্বসে এখন পুরোদমে ঝুঁকিতে ফেলেছে। আগামীতে বৃষ্টি হলেই পানির ¯্রােতে বাঁধটি ভেঙ্গে যাবে। আর এতে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। সরকারি উদ্যোগে দ্রুত বাঁধ মেরামতের দাবি জানান তারা। স্থানীয় সমাজকর্মী ও মণিপুরী নেতা শ্যাম সিংহ বলেন, বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙ্গন মেরামত ও ব্লক নির্মাণের জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ২০১১ সালেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। এখনো কোন কাজ হয়নি। আগামী বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙ্গে গেলে অর্ধশতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাবে। গ্রামবাসীর ব্যাপক বিপর্যয়, মনিপুরী ললিতকলা একাডেমী, একটি প্রাইমারী স্কুল ও মণিপুরিদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা ও ধর্মীয় মন্দির সমুহের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এ ব্যাপারে সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বরাবরে ধলাই নদীর ভাঙ্গন হতে মণিপুরি অধ্যুষিত শিমুলতলা গ্রামবাসীকে রক্ষার আবেদন জানিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। মাধবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসিদ আলী বলেন, নদী ভাঙ্গনের বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বাঁচার স্বার্থেই দ্রুত গতিতে মেরামত করা জরুরী। এজন্য শুষ্ক মৌসুমেই পানি উন্নয়ন বোর্ড যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, শিমুলতলা গ্রামবাসীর স্মারকলিপি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার এর সাথে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করবো। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি। মণিপুরি অধ্যুষিত শিমুলতলা গ্রামটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দ্রুত ধলাই নদীর বাঁধ মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।