বাংলাদে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলছে….চলবে। যারা গণতন্ত্র মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন করবে জামায়াত। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে যারা হত্যা করেছে ,তাদের সাথে জনগণ নেই। বরং যারা গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে চায়, জনগণ এখন তাদের সাথে রয়েছে। তাই জনগণের দাবি মেনে নিন। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিন। তাহলে শান্তি বিরাজ করবে। গতকাল বুধবার (১১ জানুয়ারি) গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহনগরী উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিমের স ালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী নাজিম উদ্দিন মোল্লা, ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক। তিনি বলেন, জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম কেয়ারটেকার সরকার ফর্মূলা আবিস্কার করেছেন। আওয়ামী লীগ সেই পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করেছে। আবার তা হাইজ্যাক করে সেই ফর্মূলাকে নিজেদের দাবি করছেন। তাও যদি হয় তাহলে তা এখন মেনে নিচ্ছেন না কেন? প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, হত্যা ধর্ষণ ও সন্ত্রাস ইসলামে হারাম। আমাদের কর্মসূচি হলো- যে কোন সন্ত্রাস ও হত্যাকা-ের বিরুদ্ধে।
অধ্যাপক মুজিবুর বলেন, জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান গত ১০ ডিসেম্বের দশ দফা ঘোষণার পর তাকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়। জামায়াত আমীর সহ সকল দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি জানান অধ্যাপক মুজিবুর । তিনি সতর্ক করে বলেন কে কখন জেলে যাবে তা বলা যায় না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের লোকজন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাস্ট, স্কুল, কলেজ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে দখলবাজ সরকারে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর চলছে.. কিন্তু, গণতন্ত্র ,ভাতের অধিকার,ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মাঝে মাঝে গণতন্ত্রের দেখা মিললেও এদেশের মানুষ বেশিরভাগ সময় গণতন্ত্রের সুফল পায়নি। এজন্য সরকারকে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা আহ্বান জানান তিনি।
মুজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,সরকারের কাছে বিক্রিত কিছু মিডিয়া সাম্প্রতিক একটি মিছিলের ফুটেজ দেখিয়ে জামায়াতের একটি কর্মসূচি পালনের সময় বাড়াবাড়ি করছে এমন তথ্য পরিবেশন করছেন যা সত্য নয়। বরং মিছিলে পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী সদস্য হামলা চালিয়েছে। মিছিলের ব্যানার ধরে পুলিশের টানাটানির সমালোচনা করেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত জামায়াত আমীর বলেন, দেশ স্বাধীনের পর দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করে দেশে নৈরাজ্য কায়েম করা হয়েছিল .. এখনো তা করা হচ্ছে। ২৮ অক্টোবর তারা(আ.লীগ) লগি-বৈঠা দিয়ে পৈশাচিক হত্যাকা- চালিয়ে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। তারা মূলত সেদিন গণতন্ত্রকেই দাফন করেছিল।
তিনি বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদের মতো কিছু উচ্চাভিলাষী সেনাকর্মকর্তার যোগসাজশে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। মঈন উ আহমেদ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। সেদিন থেকেই এই দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে জামায়াত সহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল।
জামায়াত আমীর বলেন, আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করলে শান্তি আসবে। কারণ আল্লাহর আইনে কোনো ভুল নেই। কিন্তু মানুষের তৈরি আইনে ভুল আছে। আমরা দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সুখে রাখতে সৎ লোকের শাসন ও আল্লাহর আইন কায়েম করতে চাই। এসময় তিনি কোরআনের একটি আয়াত উদ্বৃত করেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এমনকি তারা কওমী আলেমদের ওপরও হাত তুলেছে। জামায়াত এদেশে অপরিচিত কোন দল নয়। আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস আছে জামায়াতের। নিরপেক্ষে নির্বাচন দেন জনগণ দেখিয়ে দিবে।
মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দুর্নীতির কথা বলে তিনি বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের প্রথম দিনেই মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। উত্তরায় ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে নবদম্পতি নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সত্য কথা বলা যায় না। গলা টিপে ধরে যা স্বৈরশাসন। এরশাদের শাসনামলকেও ম্লান করে দিয়েছে। তিনি ৩০ ডিসেম্বরের জামায়াতের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলার নিন্দা জানান। জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।