শাহরিন সুলতানা মীম। সুরের মানুষ, গানের মানুষ তিনি। গানকে হৃদয়ে রেখে হাঁটছেন দূরে- বহুদূরে যাওয়ার প্রত্যয়ে। এরই মধ্যে ‘এক চোখেতে হাসন কান্দে আরেক চোখে লালন’ গান গেয়ে লালন ভক্তদের মন জয় করেছেন মীম। মীম বন্ধুদের সঙ্গে করা গান ফেসবুকে আপলোড তারপর ভাইরাল হয়ে আলোচনায় আসেন। ফোক গান করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি। লালনগীতি বেশি গাওয়ার কারণে ‘লালনকন্যা’ নামেও পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি স্বপ্নের পরিধি আরও প্রসারিত করতে যুক্ত হন- আরটিভির তুমুল জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বাংলার গায়েন সিজন-২’তে। মীমের মেধামনন দিয়ে চতুর্থ স্থান দখল করেন। পেছনের সবকিছু পুঁজি করেই তার এই গানযুদ্ধ। গানযুদ্ধ, শ্রোতাদের মন জয়ের গল্প এবং বর্তমান ব্যস্ততা নিয়ে মীম বলেন- ‘শীতকালীন ছুটি, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। টুকটাক স্টেজ শো করছি, পরিবারকে সময় দিচ্ছি। কিছু পরিকল্পনা করছি- নিজেকে কীভাবে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি আসলে সবসময় গান নিয়েই ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি।’ সাধারণ মানুষের মতো একজন শিল্পীরও পরিকল্পনা থাকে। শুরু হয়েছে নতুন বছর। নতুন বছরে মীমের পরিকল্পনা নিয়ে বলেন-‘নতুন বছরের পরিকল্পনা বলতে পুরাতন বছরের হিসেব মেলাবো। যা যা পাইনি তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করব নতুন করে। নতুন স্বপ্নের রঙে নিজেকে রাঙাব। আমার পড়ালেখা শেষ পর্যায়ে। পড়ালেখা শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার ইচ্ছে অনেক। ছোটবেলা থেকে বাবা-মা দুজন শিক্ষক এজন্যই হয়তো এ ইচ্ছেটা প্রচ-। আর গান দিয়ে শ্রোতাদের এত ভালোবাসা পেয়েছি, গানকে বুকে ধরে রেখে কণ্ঠে তুলব সুর। শ্রোতাদের ভালোবাসা আমাকে দায়বদ্ধতা বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই গানকে আঁকড়ে রাখতে চাই, আগলে থাকতে চাই। লোকগানকে ছড়িয়ে দিতে চাই সর্বত্র কেননা, লোকগান আমাদের জীবনের কথা বলে।’
মৌলিক গান নিয়ে কোনো চিন্তা আছে কিনা জানতে চাইলে মীম বলেন- ‘একজন শিল্পীর পরিচয় তার মৌলিক গান। ইচ্ছে আছে এ বছরে মৌলিক গান নিয়ে কাজ করার। নিজের ভালো দিক গুলোকে ধারণ করে খারাপ দিকগুলো শোধরানোর চেষ্টাও থাকবে। সর্বোপরি নিজেকে ভালো মানুষ এবং নিজের সৎ ইচ্ছেগুলোর পূর্ণতা দিতে নিজেকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করব। এজন্য সবার দোয়া চাই।’
বিভিন্ন চ্যানেল থেকে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় যেখান থেকে অনেক শেকড়ের গান উঠে আসে। তবে শুনতে তিক্ত হলেও সত্যি বর্তমান প্রজন্ম শেকড়ের গান থেকে অনেক দূরে। তাই লোকসংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন, এমন মন্তব্য করে মিম আরও বলেন- ‘বর্তমান অনেক সময় শেকড়ের গানগুলোই বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা লোকসংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ। সুতরাং, লোকসংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।’
জীবনের উত্থান-পতনেও গান তাকে ছাড়েননি। তিনি গানের মাঝে নিজের সুখ খুঁজে পান। তার স্বপ্ন শুধুই গান নিয়ে। তুমুল জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বাংলার গায়েন’-এ শুরু থেকেই মীমের সুরে মুগ্ধ বিচারকগণ। মীমের মেধামনন দিয়ে চতুর্থ স্থান দখল করেন। ‘বাংলার গায়েন’র জার্নি নিয়ে বলেন- ‘বাংলার গায়েন জার্নিটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। আমি কখনো ভাবিনি বাংলার গায়েনে আমার যাত্রা এতো দীর্ঘ হবে, এত গুণী মানুষের সংস্পর্শ পাব, এত মানুষের ভালোবাসা পাব। সব মিলিয়ে বাংলার গায়েন আমার কাছে আবেগ, অনুভূতি আর ভালোবাসার সংমিশ্রণ। কৃতজ্ঞতা আরটিভির প্রতি। এরকম একটি প্লাটফর্ম করে মেধা যাচাইয়ের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।’ সবার কাছে দোয়া চেয়ে মীম বলেন- ‘এ পথে হাঁটার জন্য শ্রোতারাই আমাকে সাহস জুগিয়েছে, নিজের অদম্য ইচ্ছে আর পরিশ্রম সবকিছু যোগ হয়েছে এই সাহসের প্রতি। তাদের প্রতি কথা তাই একটাই আমার জন্য দোয়া করবেন, পাশে থাকবেন, ভালোবাসায় রাখবেন। এতটা পথ যখন পাড়ি দিয়েছি, আমার এ চলার পথ দীর্ঘ হোক, সেই শুভকামনায় রাখবেন।’