ইসলাম প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় তাবলীগ। তাবলীগের মাধ্যমেই পৃথিবীতে ইসলাম প্রচারিত, প্রসারিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে, দেশে দেশে মানবতার মুক্তির দিশারীরুপে অগণিত নবী রাসূল প্রেরণ করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অধ:পতিত মানব জাতিকে স্বর্গীয় হিদায়াতের পূর্ণবিভায় সমুদ্ভাসিত করেছেন।কাজেই তাবলীগে দ্বীনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সীমাহীন।
তাবলীগ কাকে বলে: তাবলীগ শব্দের অর্থ পৌঁছে দেয়া, কোন বস্তু কারো নিকট প্রেরণ করা,কাউকে কোন বিষয় জানিয়ে দেয়া, প্রচার করা ইত্যাদি।
মহান আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন ইসলামের যাবতীয় বিধি-বিধান পরিপূর্ণ হক সহকারে মানুষের নিকট প্রচার করা বা পৌঁছে দেওয়ার নাম তাবলীগ।
যুগে যুগে তাবলীগ: ইসলামে তাবলীগের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বব্যাপী কায়েমি স্বার্থবাদীদের শাসন শোষণের অবসান ঘটিয়ে ইসলামের পতাকা উড্ডীন করার লক্ষে মহাপ্রভুর সার্বভৌমত্ব ও ইসলামের চিরন্তন শাশ্বত বিধানের প্রতি আহবান করা ইমানের অনিবার্য দাবী। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই যুগে যুগে অস্ংখ্য নবী ও রাসূল পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।
হযরত আদম (আ:),হযরত নুহ (আ:), হযরত ইবরাহীম (আ:),হযরত ইসমাইল (আ:),হযরত ইসহাক (আ:),হযরত লুৎ (আ:),হযরত ইয়াকুব (আ:),হযরত হুদ (আ:),হযরত ইউনুছ (আ:),হযরত ইউসুফ (আ:),হযরত মুসা (আ:),হযরত দাউদ (আ:),হযরত সোলায়মান (আ:),হযরত ইদ্রিস (আ:),হযরত ঈসা (আ:) সকলই একই কাফেলার পতাকাবাহী। যুগে যুগে, কালে কালে,দেশে দেশে তাবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন পূর্ববর্তী সকল নবী রাসূলগণ।সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)এ দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে।
আর এ তাবলীগের নির্দেশ দিয়েই আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করেন।ইরশাদ হচ্ছে, হে রাসূল! আপনার নিকট যা অবতীর্ণ করা হয়েছে আপনি তার তাবলীগ (প্রচার) করুন।যদি এরুপ না করেন ,তাহলে তো আপনি রেসালাতের দায়িত্ববান পালন করলেন না।(সূরা মায়েদা -৬৭)
আল্লাহ তায়ালা যেমন নবীকে তাবলীগের নির্দেশ দিয়েছেন তেমনি নবীও তাঁর সকল উম্মতকে এই তাবলীগের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি বাণী হলেও পৌঁছে দাও।(বুখারী)
রাসূল (সা:)সারা জীবন তাবলীগ করেছেন।বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন,
উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থিতের নিকট আমার এ বাণী পৌঁছে দেবে। সাহাবায়ে কেরাম তাদের সারাটা জীবন ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন এই তাবলীগের জন্য।সাহাবায়ে কেরামের নিরলস সাধনা ও তাবলীগের ফলে সুদূর আটলান্টিকের ওপার থেকে হিমালয়ের পাদদেশ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল দ্বীনের বাণী।তারপর তাবিঈন, তাবে তাবিঈন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন,মুহাদ্দিসীন,মফাসসিরীন,ফুকাহা,উলামা,পীর-মাশায়েখ সকলেই তাবলীগ করেছেন।আবদুল কাদের জিলানী(রহ:), ইমাম গাজালী,(রহ:)মুজাদ্দিদে আল ফেসানী(রহ:), বদিউজ্জামান সাঈদ নুরসী(রহ:),ইবনে তাইমিয়া(রহ:) মুসলমানদের সংস্কারে অনেক তাবলীগের কাজ করেছেন।ওয়াজ, নসিহত ও বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখির মাধ্যমে তারাঁ তাবলীগের কাজ করেছেন।
তাবলীগের উদ্দেশ্যে এ উপমহাদেশে আগমন করেছিলেন খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ:),বায়েজীদ বোস্তামী রহ:, শাহ জালাল ইয়েমেনী রহ:,শাহ পরান রহ:,শাহ মাখদুম রহ:,শাহ আলী বাগদাদী রহ,ও খান জাহান আলীর রহ: মতো মহান আধ্যাত্মিক নেতা ও সূফী সাধকগণ।তাবলীগের মহান কাজে তারা যে নজির রেখে গেছেন তা সত্যিকার অর্থেই অসাধারণ। লেখক: সাকী মাহবুব শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, গবেষক, পাংশা, রাজবাড়ী।
তথ্যকোষ : ১.ইসলামী দাওয়াত প্রচারে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা-সাকী মাহবুব ২.জুমুআর বয়ানে সমকালীন বিশ্ব-মুফতি জাহীদুল ইসলাম ৩.উচ্চ মাধ্যমিক ইসলামী শিক্ষা /সোনালী সোপান-শাহ মুহাম্মদ আবদুর রাহীম