রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ অপরাহ্ন

চৌগাছায় যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়ের মেলা

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৩

চৌগাছায় যশোরের ঐতিহ্যবাহী খেজুরের গুড়ের মেলার আয়োজন করা হবে গতকাল ১৬ থেকে ১৭ই জানুয়ারি। চৌগাছা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যশোরের যস খেঁজুরের রস এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এক ব্যতিক্রমি খেঁজুর গুড়ের মেলার আয়োজন করেছে চৌগাছা উপজেলা প্রসাশন। শতশত বছর ধরে এ অঞ্চলে বিপুল পরিমান খেঁজুর গুড় উৎপাদন হলেও আজ পর্যন্ত এমন মেলার আয়োজন করা হয়নি।
চৌগাছা উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা এ উপজেলায় যোগদান করার পর থেকে নানারকম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষকে কাছে টেনে নেন। তার সেই সব উদ্যোগের সাথে আরো একটি নতুন উদ্যোগ যোগ হলো খেঁজুর গুড়ের মেলা। যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান মেলা উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তানিছুর রহমান।
খেঁজুর গুড়ের মেলার মত একটি নতুন আইডিয়া সর্ম্পকে জানতে চাইলে নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন দক্ষিনা লের সাধারণ মানুষের সাথে বেড়ে উঠার কারনে আমি রস গুড় সর্ম্পকে অবহিত ছিলাম। কিন্তু যখন আমি প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করি তখন আমার মনে হয়েছে যশোরের এ ঐতিহ্যকে যদি আমরা জাতীয় আর্ন্তজাতিকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি তাহলে এ গুড় একটি অর্থনৈতিক সম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। তিনি আরো বলেন চলতি বছরে মওসুমের শুরুতেই আমি গাছিদেরকে ডেকেছিলাম মতবিনিময় করতে। সে সময় এতো বিপুল সংখ্যক গাছি যোগদান করেন যে, আমি বিস্মিত হয়ে যায়।সেখান থেকেই মুলত আমি এ মেলা করার প্রেরণা লাভ করি। সেই চিন্তা থেকেই আজকের এই মেলা। তিনি আরো বলেন আমি আশাকরি আমাদের এই মেলার আয়োজন যশোরের ঐতিহ্য রস গুড়কে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তানিছুর রহমান বলেন গুড়ের মেলার আয়োজন আমার কাছে খুব চমকপ্রদ মনে হয়েছে। কেননা আমরা ছোট বেলায় এ অ লে রস গুড়ের যে বিপুল উৎপাদন দেখেছি এখন তা প্রায় হারাতে বসেছে তাই এ ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্টপোষকতা দরকার যার ফলে বর্তমান সরকার নানামুখি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । আমাদের এই মেলাও সেই উদ্যোগের একটি অংশ। খেঁজুর গুড়ের মেলা সর্ম্পকে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন খেঁজুর গুড় আমাদের দেশের একটি অর্থকরী ফসল। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে বর্তমানে এর উৎপাদন নিম্নমুখি। কিন্তু আমরা যদি খেঁজুর গুড় উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি তাহলে এর উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে আবার গাছিরাও লাভবান হবে। সেই ক্ষেত্রে এই মেলা আমার মনে হয় একটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখতে পারবে।
মেলার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা সিংহঝুলি গ্রামের গাছি তবিবর রহমান খান বলেন গুড়ের মেলা হবে শুনে খুব ভাল লাগছে, আমার মনে আমাদের খবর অনেকে রাখে।একই গ্রামের অপর গাছি আব্দুল জব্বার তো মেলার কথা শুনে তো হেসে কুটি কুটি হাসতে হাসতে বললেন গুড়ের মেলা হবে শুনে খুব আনন্দ লাগছে। রামকৃষ্মপুর গ্রামের গাছি লাভলু মিয়া বলেন বহু মেলার নাম শুনেছি কিন্তু কোনদিন গুড়ের মেলার নাম শুনিনি তা শুনে খুব ভালো লাগলো যে,আমাদের নিয়েও ভাবনা চিন্তা হচ্ছে।
চৌগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু জাফর ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান রিন্টু বলেন যশোর অ লের ঐতিহ্য রস গুড় ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসার দাবী রাখে। তারা আরো বলেন বিশেষ করে নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেজন্য উনাকে সাধুবাদ জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্মকর্তা ডাক্তার লুৎফুন্নাহার লাকি বলেন খেঁজুর গুড় একটি অত্যান্ত পুষ্টিকর খাবার, চিনিতে যে ক্ষতিকর উপাদান থাকে সেটা গুড়ে থাকে না যার ফলে গুড় খাওয়া অনেক নিরাপদ। সেকারনে উপজেলা প্রশাসন এ গুড়ের বাজারকে বিস্তৃত করতে যে মেলার উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে আমি একটি অত্যান্ত মুল্যবান প্রচেষ্টা মনে করছি।
উপজেলার যে ইউনিয়ন গুলোতে সবচেয়ে বেশি গুড় উৎপাদন হয় তারমধ্যে জগদীশপুর,পাতিবিলা ও নারায়ণপুর অন্যতম। মেলা সর্ম্পকে জানতে চাইলে হাকিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান বলেন আমাদের নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা গুড়ের মেলার যে আয়োজন করেছেন তাতে আমি খুব খুশি হয়েছি এবং আমি বিস্মিতও হয়েছি এ কারনে যে একটি চমৎকার উদ্যোগ নিয়েছেন। নারায়ণপুর ইউনিয়নের চেয়াম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন আমার ইউনিয়নে বর্তমানেও প্রচুর পরিমানে গুড় উৎপাদন হয়। এলাকার গাছিরা মেলার কথা শুনে খুব আনন্দিত। ধুলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম মমিনুর রহমান বলেন নির্বাহী কর্মকর্তার এ মেলার আয়োজনে আমিসহ আমার ইউনিয়নের গাছিরা খুব খুশি হয়েছি। সিংহঝুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ মল্লিক বলেন খেঁজুর গুড় নিয়ে যে মেলা হতে পারে এ আমি কল্পনাও করিনি। আমি এবং আমার এলাকার গাছিরা খুব খুশি। নির্বাহী কর্মকর্তাকে অনেক ধন্যবাদ। তবে মেলা নিয়ে উপজেলার সকল পর্যায়ের মানুষের মধ্যে একটা নতুন আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরী হয়েছে। সবার একই কথা এটি একটি ব্যাতিক্রমী মেলা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com