সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হচ্ছে

তৈমূর আলম খন্দকার :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যদি সব কিছু ঠিক থাকে অর্থাৎ ওয়ান-ইলেভেন সরকারের মতো কোনো ঘটনা না ঘটে তবে এ বছরই নির্বাচনের বছর, বড় দলগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচনী ওয়ার্মআপ শুরু করেছে। তবে রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন হবে কি না, এ মর্মেও অনেক সংশয় রয়েছে। কারণ, প্রধান দুই দলের বক্তব্য সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। সরকার বলছে, এ দেশে আর কোনো দিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলছে, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না। কারণ, ন্যাড়া একবারই বেলতলায় যায়।
২০১৮ নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি জোট ধোঁকা খেয়েছে। তারপরও কি বিএনপি জোট শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে পারে? স্বাভাবিক ও ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে মন-মগজ থেকে না সূচক শব্দই বেরিয়ে আসে। তবে তলে তলে সিট ভাগাভাগির কথাও বোদ্ধা মহলের কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে। দেশের বাইরেও নাকি বিভিন্ন রাষ্ট্রে পর্যায়ক্রমে কথাবার্তা চলছে। মোটা দাগে এ কথাই বলা চলে যে, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে বিএনপি ইমেজ সঙ্কটে পড়বে। বিরোধী শিবিরে জামায়াত-বিএনপি জোটের ঐক্য নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না। কিন্তু ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ঢাকা মহানগরীতে এক কর্মিসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আওয়ামী-জামায়াত পরকীয়া চলছে। যুক্তি হিসেবে ওই বক্তা বলেন, সরকার জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, কিন্তু দলকে অবৈধ ঘোষণা করেনি। বিএনপি নেতার ওই বক্তব্যকে জামায়াত অশালীন বলে মন্তব্য করে। ফলে দুই দলের মধ্যে টানাপড়েন বা ফাটল দেখা দেবে কি না সেরকম একটা আশঙ্কা দেখা দেয়, যা বাস্তব হয়নি। অবশ্য বাংলাদেশে রাজনীতির বিভাজন নতুন কোনো বিষয় নয় এবং জাতিকে বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রয়াস বহু আগেই শেষ হয়েছে।
১৯৭১ সালে রাজনৈতিকভাবে যে দলটি ভোট ও ভাতের (সম্পদের সুষম বণ্টন) দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল, ক্ষমতা গ্রহণের পর তারাই ভোটের অধিকার এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে যে, এখন নির্বাচন করতে হলে ভোটারের প্রয়োজন হয় না, অলৌকিকভাবে ভোটের বাক্সে অগণিত ভোট পড়ে যায়। মিডিয়াতে তা ঘোষণা করা হয়। জাতীয় ঐক্যও এখন বহু দূরের একটা বিষয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট, ২৮ আগস্ট, ৩০ মে, ৮ ফেব্রুয়ারি বড় দাগে বিভাজন তৈরি করেছে। এর দ্বারা সৃষ্ট বিভাজনের রেখা যুগ যুগ বাড়ছে। অতি সহজেই জাতীয় ঐক্যের মুখরোচক বাণী শোনানো যাবে, কিন্তু বাস্তবায়ন হতে জন্ম জন্মান্তরের প্রয়োজন হবে। বায়ান্নতে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে, একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য জাতীয় ঐক্য মজবুত থাকার কারণে জাতির আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হয়েছে। গণমানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে একটি জাতীয় ঐক্য দরকার, আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় পদ্মাসেতুর মতো যান্ত্রিক উন্নয়ন বৈজ্ঞানিক যুগে কল্পনাতীত নয়, কিন্তু রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রত্যাশা করা যায় না। জাতির কল্যাণের জন্য গণমানুষ যাতে তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে, এ জন্য জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।
রাজনৈতিক সঙ্কট রাজনীতি দিয়েই উত্তরণ করার পদ্ধতি রয়েছে এবং বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য স্বাধীন রাষ্ট্রেও রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয় এবং তা মোকাবেলা হয় রাজনৈতিকভাবে। কিন্তু যখন মানবসৃষ্ট বা রাজনীতিবিদদের বদৌলতে সঙ্কটের রাজনীতি শুরু হয় তখন সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায় না। যেমন, আমাদের দেশে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ফলে উভয়পক্ষই নিজ নিজ বলয়ের ওপর আস্থা রেখে সঙ্কট মোকাবেলার পরিবর্তে পাল্টাপাল্টি জবাবে আরো সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের আরো ধৈর্যশীল হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু খেলা হবে এ ঘোষণা দিয়ে সরকারি দল মাঠে নেমেছে এবং বিরোধীদের ধ্বংস করার পাঁয়তারায় শুধু লিপ্ত নয়; বরং এগিয়ে রয়েছে। দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীরা এখন আর কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে হাঁটেন না; বরং তোষামোদির বদৌলতে প্রাডো বা পাজারো জিপেই চলাফেরা করেন। ফলে একটি ন্যায্য কথা বলা বা সঙ্কট মোকাবেলার জন্য পলিসি তৈরি করার বিষয়ে বুদ্ধিজীবীদের কোনো ভূমিকা নেই; বরং রয়েছে আগুনে ঘি ঢালার প্রচেষ্টা। অনেকেই বলে থাকেন, দেশে এখন রাজনীতি নেই। অর্থাৎ সংবিধানের (মৌলিক অধিকার) তৃতীয় চ্যাপ্টারে রাজনীতি করার যে অধিকার দেয়া হয়েছে সেটি এখন বুটের তলায় পিষ্ট। আগেও এ পদ্ধতি ছিল, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে।
রাজনীতিতে সঙ্কট থাকা স্বাভাবিক, কিন্তু এ সঙ্কট পুঁজি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষিয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, ব্যক্তিমালিকানাধীন রাজনীতি চালু হওয়ার কারণে ব্যক্তিকে তুষ্ট রাখাই এখন রাজনৈতিক চর্চা। সরকারদলীয় নেতা-মন্ত্রীরা বিশেষ করে সেতু ও তথ্যমন্ত্রীর উসকানিমূলক কথা রাজনীতিতে বৃহৎ আকারে সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। দেশের রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। কারণ রাজনীতির অন্যতম প্রাপ্তি হলো দলীয় নমিনেশন। দলীয় নমিনেশন এখন আর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতায় হয় না। এখন যোগ্যতার মাপকাঠি হলো ‘অর্থ’। ফলে পরোক্ষভাবে হলেও ‘অর্থ’ রাজনীতির চালিকাশক্তি বা রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সঙ্কটের রাজনীতি চালু হওয়ার এটিও একটি কারণ। ব্যক্তি মালিকানাধীন দলের নমিনেশন প্রাপ্তির পদ্ধতি এখন আর সম্মানজনক অবস্থায় নেই। যোগ্যতা বা দলের প্রতি সার্ভিস নমিনেশন প্রাপ্তির মাপকাঠি নির্ধারণ করে না। যা দিয়ে নির্ধারণ হয় সে প্রতিযোগিতায় প্রকৃত রাজনীতিবিদরা আগাতে পারেন না। রাজনীতির একটি নিজস্ব ব্যাকরণ আছে। সে ব্যাকরণের সীমারেখার মধ্যে রাজনীতির রীতিনীতি নেই। ফলে যাদের মাথায় রাজনীতি রয়েছে তারাও নিজস্ব প্রচেষ্টায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠন করছে। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে, সে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলগুলো মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না। বড় দলগুলোর লেজুড়বৃত্তি করা ছাড়া বিকল্প পন্থা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। রাজনীতির যোগ্যতার এখন মাপকাঠি হলো চাপাবাজি ও তোষামোদি। এক শ্রেণীর বক্তা রয়েছে মাইক হাতে পেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মুখে যা আসে বলতেই থাকে। এর পেছনের কারণ প্রতিপক্ষকে অযাচিতভাবে গালমন্দ করে নিজ দলের বসের আনুকূল্য পাওয়া। অন্য দিকে, রাজনীতির মাঠে ন্যায্য কথা এখন বিলীন হয়ে পড়েছে। কারণ তোষামোদিই দলে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় রাখার অন্যতম হাতিয়ার। যারা তোষামোদি জানে না তাদের ছিটকে পড়া ছাড়া অন্য কোনো গত্যন্তর থাকে না। রাজনীতির গুণগত অবনতি ঘটেছে। জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নয়ন প্রয়োজন। মঞ্চে নেতার বক্তব্য ও ব্যক্তিজীবনের সাথে মিল পাওয়া যায় না। অর্থাৎ নেতা মুখে যা বলেন তা অন্তরে লালন করেন না। এটিই হালের রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বড় রাজনৈতিক দল একে অপরের শক্র মনে করে। দলীয় পদ-পদবি বা নমিনেশনকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে শত্রু মনে করে। বোদ্ধামহলের ধারণা, হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনায় পরিস্থিতি এমন হচ্ছে। এটা ব্রিটিশ পলিসি। ব্রিটিশরা মনে করত যে, ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি রাজ্য শাসনে একটি উৎকৃষ্ট পন্থা। কিন্তু সে পদ্ধতি দলের অভ্যন্তরে প্রতিষ্ঠিত হলে দলের জন্য বুমেরাং হতে পারে। গণতন্ত্রের অনুশীলনে প্রতিপক্ষকে শত্রু ভাবার কারণ নেই। কারণ, যে ব্যক্তি বা দল মনেপ্রাণে গণতন্ত্রকে লালন করবে, অপর পক্ষের মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্মান করার মানসিকতা তাদের থাকতে হবে। ‘জোর যার মুল্লুক তার’, এ মনোভাব স্বৈরাচারের জন্ম দেয়। এ কারণে আমাদের গণতন্ত্র সঙ্কটের এক গভীর ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়েছে। আমাদের রাষ্ট্রে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুষ্ঠু কোনো ব্যবস্থা নেই এবং এটিই সবচেয়ে বড় সঙ্কট। ভোটিং পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ আমলাদের হাতে। আমলারা সব সময়ই সরকারের পক্ষে অর্থাৎ যে ক্ষমতায় তার পক্ষেই থাকে। ন্যায়-অন্যায় দেখার ফুরসত তাদের নেই। ফলে সমস্যা বাড়তেই থাকে। জনগণ হয়ে পড়ে এ সঙ্কটের গিনিপিক। তারা চিড়েচ্যাপ্টা হতেই থাকে। লেখক: রাজনীতিক, কলামিস্ট ও আইনজীবী




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com