শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের নরকলিকাতা ৬ নং ওয়ার্ডের বাচ্চু মাদবরের হিংস্রতায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন একটি অসহায় পরিবার। পরিবারটির সদস্যদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে স্বামী কাউসার খানসহ দুই নারী কে গুরুতর জখম করা হয়েছে। গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে ভোজেশ্বর ইউনিয়ন নরকলিকাতা ৬ নং ওয়ার্ড গ্রামে এই ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল কাউসার খান (৪৫), দেড় বছর আগে তার চার কন্যা সন্তান ও স্ত্রীকে সাথে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে তাদের গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। পরে কাউসার খানের চাকরি ফরিদপুরে বদলী হয়। তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা (৩৫) চার কন্যা সন্তানদের কে নিয়ে নরকলিকাতা গ্রামে বসবাস করে আসছেন। ওই এলাকার সজীব মাদবর (২৫) রিফাত মাদবর (২২) নেহাল মাদবর (২৪) জিহাদ শেখ (২৩) কাউসার খানের বাড়িতে কোন পুরুষ না থাকায় বিভিন্ন সময় পথে ঘাটে ও ফেসবুকে কাউসার খানের বড় মেয়ে নিহা আক্তার (২০) কে কুপ্রস্তাব প্রধান করাসহ বিভিন্ন সময়ে পরিবারটির সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির পাশাপাশি নিহাকে হয়রানি করছিলো।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার (২৯ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে নিহা (২০) ও তার মা জাকিয়া সুলতানা (৩৫) তাদের এমন অসম্মানজনক আচরণের প্রতিবাদ করলে, রিফাত মাদবর (২২) সহযোগীরা নিহা আক্তার কে ধর্ষণ করার হুমকি প্রধান করেন। এই ঘটনায় নিহার পরিবার প্রচন্ড ভয়ে ওই দিনেই ভোজেশ্বর পুলিশ ফাঁড়িতে একটি সাধারণ ডাইরি করেন।
পরে (৩০ জানুয়ারি) কাউসার খান ফরিদপুর থেকে ৩ দিনের জন্য বাড়িতে আসলে তার পরিবারের সদস্যদের উপর অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালায় প্রতিবেশী বাচ্চু মাদবর ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী। সন্ত্রাসীরা কাউসার খান, মেয়ে নিহা আক্তার, স্ত্রী জাকিয়া সুলতানাকে ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ও পিটিয়ে মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে অসহায় পরিবারটির সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায়নি। সন্ত্রাসীরা চলে গেলে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় (৩১ জানুয়ারি ) স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা বাদী হয়ে সন্ত্রাসী বাচ্চু মাদবরকে প্রধান আসামি সহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে নড়িয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, সিরাজ মাদবর, সজিব মাদবর, নিহাল মাদবর, রিফাত মাদবর, হাসেম মাদবর, আল-আমীন, আলাল শেখ, আলমগীর শেখ, মিলন শেখ, জিহাদ শেখ।
কাউসার খানও তার স্ত্রী জাকিয়া সুলতানা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে বাচ্চু লোকজন ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করে আমার স্বামী কাউসার খানকে দেখিয়ে দিয়ে বাচ্চু মাদবর ও সিরাজ মাদবর শালারে মার বলিয়া হুকুম দিলে সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামী ও মেয়ের ওপর হামলা চালায়। আমি তাদের বাঁচাতে গেলে সন্ত্রাসীরা আমাকেও মারাত্মক জখম করে।সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমার মেয়েদের জামা কাপড় টানা হেঁচড়া করে ছিড়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। তারা আমাদের পরিবারের সবাইকে পিটিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করেছে, বিবাদীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে প্রাণসংশায়ে আছি। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
বাচ্চু মাদবর ও অন্যান্য অভিযুক্তকারীরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম বলেন, মামলার প্রস্তুতি চলছে ঘটনার সাথে জড়িত দোষী ব্যক্তিদের খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।