শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩২ অপরাহ্ন

ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা সংকটে চরম ভোগান্তিতে নৌ-পথের যাত্রীরা

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

ব্রক্ষপুত্রের নাব্যতা সংকটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নৌপথের যাত্রীরা। কুড়িগ্রাম জেলা থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা রৌমারী। রৌমারী থেকে চিলমারীর নৌ-পথের দূরুত্ব ২০ কিলোমিটার। অপর দিকে কুড়িগ্রাম থেকে রৌমারী নৌঘাটের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। এই নদী পথে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ নানা প্রয়োজনে জেলা শহরে যাতায়াত করে থাকে। নদীটি ধরলা, দুধকুমর, জিঞ্জিরাম, সোনাভরি, ব্রক্ষপুত্রসহ ১৫টি নদ-নদীর সমন্বয়ে নানা রুপে উতালপাতাল রাক্ষসি রুপে বহমান।
নদীর পার সংরক্ষণে সরকারী হস্তক্ষেপ বা সরকারী তৎপরতা না থাকায় নদের তীর খেয়াল খুশিমত একূল ভাংছে ও কূল গড়ছে। এমন ভাঙ্গনের ফলে বছরের পর বছর নদীর বুকে বালি বা পলি জমে নাব্যতা চরম আকার ধারণ করছে। নদীর বুক চিড়ে জেগে উঠছে ছোট ছোট চর। যারফলে নৌ-পথ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। ৩০ কিলোমিটার নৌপথ জুড়ে টেনে হেচরে নৌকা পারাপার করতে হচ্ছে। ১ ঘন্টার নৌপথ পারি দিতে ৪/৫ ঘন্টা সময় লাগছে। নাব্যতা সংকটে ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারনে কুড়িগ্রাম, চিলমারী নৌবন্দর, ফকিরের হাট, রৌমারী লডঘাট, কর্তিমারী, বলদমারা, ঘুঘুমারী, খেওয়ারচর, রাজিবপুর লডঘাট, মোহনগঞ্জ, কোঁদালকাটি ও নয়ারচর নৌপথে নৌকা চলাচলে ব্যাহত সৃষ্টি হয়েছে। এতে নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। গত দেড়মাস ধরে নাব্যতা সংকট থাকলেও তা উত্তরনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোন উদ্যোগ গ্রহন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নৌপথে যাতায়াতকারী যাত্রী ও নৌকার মাঝিরা। গতকাল ১ ফেব্রুয়ারী বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে ফলুয়ারচর লডঘাটে গিয়ে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে বালু মাটি ভরাট হয়ে চর জেগে উঠায় মালামাল ও যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দেড়মাস থেকে বলদমারা নৌকাঘাট থেকে ফকিরের হাট নৌকাঘাটে যেতে নদের পানি কমে যাওয়ায় যাত্রীবাহি নৌকা ঘাটে যেতে পারছে না। নদের চরে একেবেকে বয়ে যাওয়া অল্প পানির ¯্রােতধারায় যাত্রী নিয়ে নৌকা চলাচল করছে। এতে রৌমারীর বিভিন্ন নৌকা ঘাট থেকে চিলমারী নৌকা ঘাটে পৌছিতে সময় লাগছে আগের চেয়ে দ্বিগুণ। অপর দিকে অল্প পানি দিয়ে এই নৌকা চলতে মাঝে মধ্যে বালুর চরে ঠেকছে। ফলে যাত্রীদের জীবনের ঝুকিও বাড়ছে। নৌকার মাঝি সমেজউদ্দিন বলেন, ফলুয়ারচর ও বলদমারা থেকে ফকিরেরহাট ঘাটে নৌকা যেতে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগে। আগে এক ঘন্টায় যাইতাম, পানি না থাকায় সময় বেশি লাগে। নদীর মধ্যে নৌকা আটকা গেলে সারা দিন শেষ হয়ে যায়, যাত্রীরা হয়রানির মধ্যে পড়ে। আমাদের নদী পথে ব্যবসার দিন শেষ। নদ খনন না করলে এমনি কষ্ট করে থাকতে হবে সারা জীবন। শুনেছি সরকার বারবার পদক্ষেপ নিচ্ছে। কিন্তু তা ভেস্তে যাচ্ছে। নৌকার মাঝি নিলচাঁন মেকার বলেন, বলদমারা ঘাট থেকে আমরা এক ঘন্টার মধ্যেই ফকিরের হাট ঘাটে যেতাম। শীতের ঘনকুয়াশার কারণে ও নদীর পানি কমে ও চর জেড়ে যাওয়ায় ওনেক মাঝি পথহাড়িয়ে অন্য ঘাটে পৌছাতে অনেক বেশি সময় লাগছে। যাত্রী রিপন মিয়া বলেন, কর্তিমারী ঘাট থেকে সকাল ১০টার মধ্যেই কুড়িগ্রাম কোর্টে পৌঁছানো যেতো আদালতে হাজিরা দিয়ে আবার বাড়ি আসতাম, এখন সকালে বাড়ি থেকে বের হলেও নদীতে পানি না থাকায় কুড়িগ্রাম পৌঁছাতে ১২টা বাজে। এ কারনে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি হ্রাস ও নদীর বুকে ছোট ছোট অসংখ্যক চর জেগে ওঠার কারনে পণ্যবাহী নৌকা রৌমারী, বলদমারা ঘাটে আসেনা। ফকিরের হাট, চিলমারী, কুড়িগ্রাম নৌকা ঘাট থেকে মালামাল নৌপথে রৌমারী আনা যাচ্ছে না, ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছে। জরুরী ভিত্তিতে নদী ড্রেজিং করে নৌপথ সচল না করলে নৌপথে ব্যবসা ও যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যাবে। রৌমারী,ও চর রাজিবপুর লডঘাট ইজারাদার মো. শফিউল আলম বলেন, নাব্যতার সংকটের কারনে আমাদের আয় অনেক কমেছে। নদের পানি কমে গিয়ে ডুবোচর সৃষ্টি হওয়ায় উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার সঙ্গে চিলমারী, ফকিরের হাট, কুড়িগ্রাম নৌঘাটে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নাব্যতা সংকট দূর করতে নৌপথ ড্রেজিং করে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্ভবনা রয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, নদের বুকে ছোট ছোট চর জাগায় নদের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ কারনে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। তবে নদের ড্রেজিং এর দায়িত্বে আমরা না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com