সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

ঐতিহ্যে সেরা লক্ষ্মীপুরের কাঁচা দুধে তৈরি মহিষের দই, বছরে আয় ৭০ কোটি

হাবিবুর রহমান সবুজ লক্ষীপুর
  • আপডেট সময় বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

লক্ষ্মীপুরে ঐতিহ্যবাহী খাবার মহিষের কাঁচা দুধের তৈরি টক দই বিক্রি করে বছরে প্রায় ৭০ কোটি টাকা আয় হয়। এটি স্থানীয়ভাবে মহিষা দই হিসেবে পরিচিত। সুস্বাদু ও জনপ্রিয়তায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এর সুনাম রয়েছে। যুগ যুগ ধরে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এটি সবার পছন্দনীয় খাবার। নানান কারণে উৎপাদন কম হলেও এর ব্যাপক চাহিদ রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মানুষজনের পছন্দের তালিকায় মহিষা দই অন্যতম। ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় প্রতিদিন ১০ টনেরও বেশি মহিষা দই উৎপাদন হয়। আর বছরে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন দই বেচাকেনা হয়। এতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার টন দুধ প্রয়োজন হয়। জেলার পশ্চিম ও দক্ষিণের মেঘনা নদীর দ্বীপ-চরগুলোর মহিষের বাথান থেকে এ দুধ আসে। বিশেষ কওে মেঘার চর, চর শামছুদ্দিন, চর আবদুল্লাহ, কানিবগারচর ও চরকাছিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মহিষের বাথান থেকে এ দুধ সংগ্রহ করে দই উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত এ দই ২০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হয়। এতে বছওে প্রায় ৭০ কোটি টাকার দই বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। জেলা শহরের বাসিন্দা চাকরিজীবি জামাল উদ্দিন, ব্যবসায়ী রাকিব হোসনে ও নিজাম বেপারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কাঁচা দুধ দিয়ে মহিষের দই তৈরি হয়। মুখে দিতে অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যায়। রুচিশীল এ দুই এ জেলায় বেশ জনপ্রিয়। সুযোগ পেলেই সদরের মজুচৌধুরীর হাট, কাঞ্চনিবাজার, রায়পুরের মোল্লারহাট, হাজিমারা ছুটে যান তারা। শহরের কাছাকাছি এসব এলাকায় ভালো দই পাওয়া যায়। শুধু নিজেরাই নন, বাড়ির জন্যও দই সঙ্গে করে নিয়ে আসেন তারা। দই তৈরি নিয়ে ব্যবসায়ী সুমনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চর থেকে কাঁচা দুধ সংগ্রহ করে আনার পর ১ থেকে ২ কেজি ধারণকৃত মাটির পাত্রে ঢালা হয়। পাত্রগুলোকে স্থানীয় ভাষায় টালি বলা হয়। টালিতে দুধ রাখার ১৫-১৬ ঘন্টা পর দুধ জমে দধি হয়। প্রতি লিটার দুধে ৯৫০ গ্রাম দধি হয়। ফ্রিজিং করা ছাড়াই এ দই এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। দধি বসানো টালিগুলো পটুয়াখালি, বরগুনা ও পিরোজপুর থেকে আনা হয়। বর্তমানে আকার অনুযায়ী প্রতিটি টালি ১৬-২০ টাকা দাম পড়ে। মহিষা দই থেকে মাখন, ঘি ও ঘোল বানানো গেলেও লক্ষ্মীপুরে তৈরি হয় না। দই বিক্রেতা সুমন হোসেন জানান, জেলা শহরসহ ৫টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তিনি পাইকারিভাবে দই বিক্রি করেন। গরুর দুধের দইয়ের চেয়ে মহিষের দই বেশ জনপ্রিয়। জেলার ছোট-বড় ৪০টি হাটবাজারে প্রতিদিন প্রায় ১০ টনের বেশি দই বিক্রি হয়। এতে দিনে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকার দই বিক্রি করে থাকেন দোকানিরা। এরমধ্যে রামগতি উপজেলার মহিষের দই পুরো জেলায় জনপ্রিয়। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার দই বিক্রি হয় জেলাতে। দুধ বিক্রেতা আবদুর রব মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহিষের দুধের তৈরি দই সবচেয়ে ভালো। এতে যুগযুগ ধরে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এখন মহিষ সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এতে দুধ উৎপাদন কম হ”েছ। কারণ মহিষ উৎপাদনে মানুষের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। চর-চরাঞ্চল কমে যাওয়া ঘাসের সংকট রয়েছে। খাদ্য সংকট ব্যাপক প্রভাব পেলছে। মহিষ পালন বাড়লে দুধ উৎপাদনও বাড়বে। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার চরাঞ্চলেই মহিষের উৎপাদন বেশি। মেঘনা নদীর ১২টি দ্বীপ চরসহ মূল ভূখন্ডে প্রায় ২০ হাজার মহিষ পালন করা হয়। এরমধ্যে রামগতি উপজেলার বিভিন্ন দ্বীপ চরে ৬ হাজার ৩০০, কমলনগরে ৬ হাজার, সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৭০০ এবং রায়পুরে ১ হাজার ২০০সহ জেলায় ২০ হাজার মহিষ পালন করা হয়। তবে স্থানীয় কয়েকজন বাথান মালিকরা জানান, প্রকৃত পক্ষে সরকারি হিসেবের দ্বিগুণ মহিষ পালন করা হয়। মহিষ মালিক শাহজাহান মাঝি, আবু মোহাম্মদ ও হামিদুর রহমানসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন চরে প্রায় ৫০ হাজার মহিষ পালন করা হয়। এ মহিষগুলোর অন্যতম খাবার প্রাকৃতিক ঘাস। এসব মহিষ দুধ ও মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যেই পালন করেন মালিকরা। কমলনগরের তোরাবগঞ্জ বাজারের দই বিক্রেতা ইসমাইল হোসেন প্রায় ১৭ বছর এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি জানান, বিয়ের অনুষ্ঠানে দই বাধ্যতামূলক। খাবারের শেষ মুহুর্তে ওয়ানটাইম কাপে ২৫০ গ্রাম দই থাকবে। অনেকেই পাতিল হিসেবেও আমাদেরকে অর্ডার করেন। এসব অনুষ্ঠানে গরুর দই অর্ডার খুব কম পাওয়া যায়। তিনি দৈনিক ২০০-২৫০ কেজি দই বিক্রি করেন। দুধের দাম বেশি হওয়ায় দইয়ের দামও বেড়েছে। দুধের দামের সঙ্গে দইয়ের দাম কমবেশি হয়। তোরাবগঞ্জ বাজারের জামাই ডেকোরেটরের ব্যবস্থাপক আজগর হোসেন রুবেল বলেন, প্রায় ৪ মাস ধরে আমি ডেকোরেটরের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। প্রায় ৩০টি বিয়ে অনুষ্ঠানে গিয়ে সবখানেই মহিষের দই আপ্যায়নে রাখতে দেখেছি। এ অঞ্চলের মানুষের অন্যতম খাবারই মহিষা দই। জেলা শহরের এক ডেকোরেটরের প্রধান বাবুর্চি আবুল কালাম বলেন, মহিষের দই কাঁচা দুধে তৈরি করতে হয়। খাবার শেষে এ দই মুখরোচক। গরুর দুধের বা গুড়ো দুধের মিষ্টি দইয়ের চাহিদা কম। রামগতি, কমলনগর, সদর ও রায়পুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে মেহেমানদের জন্য টক দই বাধ্যতামূলক থাকতেই হবে। রামগতি উপজেলার মহিষের বাথানের মালিক রফিক উল্যাহ ও সদরের আবদুল কুদ্দুস বেপারী জানান, দিন দিন চরাঞ্চলে মানুষ বাড়ছে। এতে মহিষের চারণভূমি কমে যাচ্ছে। ঘাস উৎপাদনের জমিগুলোতে এখন চাষাবাদ হ”েছ। এসব কারণেই এখন মহিষ পালন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে অনেকেই মহিষ পালন ছেড়ে দিচ্ছেন। তারা অন্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. যোবায়ের হোসেন বলেন, মহিষের দই অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার। জেলায় প্রতিদিন ১০ টনের বেশি মহিষের দধি উৎপাদন হয়। দিনি দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে মহিষ পালন ও দুধ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা খামারি ও বাথান মালিকদের বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করে আসছি। চেষ্টা করছি মহিষ পালন বাড়ানোর জন্য।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com