শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:১৩ অপরাহ্ন

পাঁচবিবিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বদলে গেছে ৩১৮ পরিবারের জীবন

আব্দুল কাইয়ুম জয়পুরহাট :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

পাঁচবিবির পৌর বাজার থেকে পশ্চিমে প্রায় ৫ কিলোমিটার পিচঢালা পথ পেরিয়ে উপজেলার কদুবাড়ি গ্রামে আশ্রয়ণের সারি সারি রঙ্গিন ঘর। দূর থেকে দেখলে মনে হয় পাকা এ ঘরগুলোর টিনের চালা যেন ‘লাল-সবুজের পতাকা। এর এক পাশে রয়েছে পিচঢালা পথ ঘেঁষে শ্রীনদীর পাশে সবুজের সমাহার। ঘরের পাশে মাঁচায় লকলকিয়ে বাড়ছে ছিম আর লাউ। নিচের গাছে ঝুলছে ছোট ছোট বেগুন ও লাল-সবুজ টমেটো। এক কনে পালং ও লালশাকও মাটি ফুঁড়ে উঠেছে ইঞ্চি দুয়েক।
রয়েছে পেঁপে, কলাসহ শীতকালীন নানান সবজি। গাছে গাছে আমের মুকুল জানান দিচ্ছে বসন্তের আগমন। আশ্রয়ণের নানা জাতের ফলের বাগান দিন দিন এ পল্লীকে সমৃদ্ধ করছে। পাশেই সুবাস ছড়াচ্ছে গাছের বাহারী রঙ্গিন ফুল। রয়েছে হাঁস-মুগরি আর গবাদি পশু পালনের সুব্যবস্থা। এদিক ওদিক ছোটাছুটি করে খেলছে শিশু-কিশোরের দল। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের কাজ নিয়ে আর নিজ আঙ্গিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। রঙ্গিন টিনের পাকা ঘরগুলো দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। এ যেন এক খন্ড শান্তির নীড়। এই নীড়েই সুখের স্বপ্ন গড়েছেন সহায়-সম্বলহীন একদল নারী-পুরুষ। নদী ও সড়কের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পের এই পল্লীতে ৪২টিসহ উপজেলায় ভূমিহীনদের নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের শান্তির বসবাসকারী পরিবারের সংখ্যা ৩১৮। জনসংখ্যার হিসাবে কদুবাড়ীতে শতাধিক নারী-পুরুষের বসতি। তাদের জীবনের শুরুটা ভুমিহীন হলেও এখন তারা আর ভূমিহীন নয়। মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীনদের বসবাসের জন্য শুধু ঘর নয় সরকারি ০২ শতক জমিও প্রদান করেন। এতে তারা হাঁস-মুরগি গবাদি পশু পালন ও সবজির বাগানসহ নানা উপায়ে স্বাবলম্বী এ মানুষগুলো। শিক্ষার ছোঁয়াও লেগেছে তাদের মধ্যে। আশ্রয়ণে বসবাসরত অর্ধশত ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। কদুবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২ শত গজের মধ্যেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। ফলে এ আশ্রয়ণে শিক্ষার প্রভাবও পড়েছে। এতে আশ্রয়ণে প্রকল্পের ছেলে মেয়েরা শিক্ষারও সুযোগ পাচ্ছে। সরেজমিনে কদুবাড়ি আশ্রয়ণে গিয়ে দেখা যায়, ছোট পরিসরে আদর্শ রঙ্গিন ছিমছাম সারি সারি ঘর। আর সেই ঘরে সুখনিলয়ের আঙ্গিনায় খাট বানানোর কাজ করছিলেন ফজলুল হক(৬০) নামে এক বৃদ্ধ। দীর্ঘদিন তিনি স্ত্রি, কন্যা নিয়ে রাস্তার পাশে কোনো রকমভাবে ছিলেন। বৃদ্ধ হওয়ার কারণে কেউ তাকে কাজেও নেয়নি। ফলে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। জমিসহ সুন্দর পাকা ঘর করে দেওয়ায় মমতাময়ী মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণভরে আর্শিবাদ করেন তিনি। এই ঘরে কাঠের কাজ করে তিনি এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন। আরেক বাসিন্দা প্রতিবন্ধী মারজিনা আক্তার জানান, আমার মাথার সমস্যার কারনে স্বামী আমাকে ত্যাগ করেছেন। ১ বছরের সন্তান নিয়ে আমি গরিব পিতার বাড়ীতে আশ্রয় চেয়েও পায়নি। মানুষের বাড়ীর পরিত্যাক্ত জায়গায় থাকতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের মানবিক পদক্ষেপ ও জনবান্ধব প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজস্ব একটা ঠিকানা পাওয়ায় তিনি ধন্য হয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বরমান হোসেন জানান, বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসন অত্যন্ত আন্তরিকভাবে অশ্রয়ণে -২ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উপজেলায় প্রকৃত ভৃমিহীন ও গৃহহীনদের যাচাই-বাচাই করে মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উপহার হিসাবে গৃহনির্মাণ করে দিয়েছেন। ফলে ঠিকানাবিহীন মানুষগুলো রঙিন ঘরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তিনি আরো জানান, তাদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসছে। এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com