রাজধানী মনিপুরিপাড়া সংসদ এভিনিউর সড়কটি শহরের অন্যতম ব্যস্ত শহর হিসেবে গণ্য করা হয়। কয়েকটি রুটের যানবাহন এই সড়কের ওপর দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু ব্যস্ত এ সড়কের পাশে অবস্থিত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শোরুমগুলো গাড়ি ধোয়ার পানি দিয়ে সড়ক ভিজিয়ে রাখে। ফলে দ্রুত চলাচল করা গাড়িগুলোকে হঠাৎ থামতে হয় আর পানির ছিটা থেকে সতর্ক থাকতে হয় পথচারীদের। সংসদ এভিনিউ সড়ক ঘুরে দেখা যায়, গাড়ির শোরুমগুলোর সম্মুখভাগে ধোয়া হচ্ছে গাড়ি। এসব শোরুমের গাড়ি ধোয়ার পানি গড়িয়ে পড়ে জমাট বেঁধে থাকে রাস্তায়।
জানতে চাইলে ওই সড়কের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, ইতোমধ্যে পানিতে পিছলে বাইক দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার। কখনও দ্রুতগতিতে আসা প্রাইভেট কার বা বাসের কারণে সেই পানি ছিটকে যাচ্ছে পথচারীদের ওপর। নিয়মিত এই সড়ক ব্যবহার করেন, এমন এক মোটরসাইকেলচালক মো. শাহিন বলেন, ‘আমি এই রাস্তা দিয়ে আগারগাঁও থেকে পল্টনে যাতায়াত করি নিয়মিত। তবে এই রাস্তার ভয়ানক দিক হলো প্রায়ই পানি পড়ে পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এতে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয় কখন জানি পড়ে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই রাস্তায় ট্রাফিক সিগন্যাল বেশ জটিল। দীর্ঘ সময় সিগন্যালে আটকে থাকার পর সবাই দ্রুত রাস্তা পার হতে চায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। এই অবস্থায় গাড়ি স্লো করলেও রিস্ক থাকে স্লিপ করার। গতিতে থাকলেও রিস্ক। ভেজাটাও কোনও সমস্যা না, কিন্তু যদি জানা থাকত যে অংশ ভেজা।’
আরেক বাইকচালক হাসনাত নাইম বলেন, ‘ওই সড়কটা এমনিতেই ঢালু আবার মাঝে মাঝে উঁচুনিচু। এ রকম পানি পড়ে থাকলে সহজেই স্লপি করার আশঙ্কা থাকে।’ এ বিষয়ে গাড়ি শোরুমের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সড়কের ফুটপাতে কোনও ড্রেনেজ লাইন না থাকায় গাড়ি ধোয়ার পানি রাস্তায় যায় এবং সেখানে ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। শোরুমগুলোর নিজস্ব পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা থাকলেও গাড়ি ধোয়ার পানি অপসারণের কোনও ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন না ভবনমালিক। ভবনগুলোর মালিক ও দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপকরা জানান, বিক্রয়কেন্দ্রের ভেতরে গাড়ি ধোয়ার কথা বারবার বলা হলেও শোরুম মালিকরা শোনেন না। কার কালেকশন অটোমোবাইলসের মালিক শফিক সিকদার বলেন, ‘রাস্তার পাশে সাধারণত একটা ড্রেন সিস্টেম থাকে। যেখানে পানি গিয়ে পড়ে কিন্তু এই রাস্তায় মাঝে ম্যানহোল দেওয়া। তাই পানি গড়ালে সেটা রাস্তার মাঝে চলে যায়। এখানে আমি নতুন শোরুম নিয়েছি। আগেও শোরুম ছিল। শোরুমের ভেতরে এ রকম কোনও ব্যবস্থা থাকলে দেখা যেত।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমাদের জন্যও লজ্জার বিষয় যে পানি গড়িয়ে রাস্তায় পড়ছে। বিষয়টা দেখতেও খারাপ দেখায়, কিন্তু আমরা যাদের থেকে এই স্পেস ভাড়া নিয়েছি, তারা যদি পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করে না দেয়, তাহলে আমরা কী করবো? আমরা তো জায়গার ভাড়া দিই, পানির বিলও দিই।’
সংসদ এভিনিউর ম্যানহোলগুলো রাস্তার মাঝে অবস্থিত এবং কিছুটা উঁচু হওয়ায় বেশির ভাগ গাড়ি ধোয়ার পানি সে পর্যন্ত যায় না। ফলে রাস্তার ওপরেই পানি জমে থাকে।
তবে নিয়মিত গাড়ি ধোয়া হয় না দাবি করে আরপি কার সেন্টারের মালিক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘আমরা নিয়মিত গাড়ি ধুই না। কোন একটি গাড়ি বিক্রি হলে সেটা ধুয়েমুছে কাস্টমারের কাছে তুলে দেই।’ তবে দ্রুতই পানি বের করার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান তিনি।
তবে গাড়ি বিক্রেতাদের অভিযোগ নাকোচ করে জায়গার বা ভবনের মালিকরা বলেন, শোরুমের ভেতরে গাড়ি ধোয়ার জন্য অনেকবার বলা হয়েছে শোরুম মালিকদের কিন্তু তারা তা মানে না। কার কালেকশন অটোমোবাইলসের ভবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বাবুল বলেন, ‘শুধু আমার ভবনে না, এই রোডে আরও ৭ থেকে ৮টা গাড়ির শোরুম আছে। বেশির ভাগেরই পানি রাস্তায় আসে। এই বিষয়ে শোরুম মালিকদের বলা হইছে তারা যেন গাড়ি ভেতরে ধোয়। ভেতরে তো পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা যায় সহজে।’ পানির যাবার ব্যবস্থা কে করবে, শোরুম মালিক নাকি ভবন মালিক, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আলাপে বসতে হবে। তবে গাড়ি ধোয়ার পানি দিয়ে রাস্তা ভেজানো উচিত না।’
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক ভেজা থাকলে যান চলাচল যেমন বিঘ্নিত হয়, তেমনি রাস্তার ক্ষয় দ্রুত হয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনার কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা মিশ্র ব্যবহার্য একটি শহর। এখানে নানা ধরনের মানুষ নানা পেশায় জড়িত। এমন একটি শহরের সবকিছুর ব্যবস্থাপনা সুন্দরভাবে করা সম্ভব যদি তা পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়। গাড়ি ধোয়ার বিষয়ে যদি বলা হয়, সড়কে কোনও ধরনের গাড়ি ধোয়ার সুযোগ নেই। হয় নিজেস্ব গ্যারেজে গাড়ি ধুতে হবে, না হয় শহরে একটি নির্দিষ্ট স্থান থাকবে, যেখানে গাড়িগুলো ধোয়া ও মেরামতের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে ‘ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘সেই ব্যবস্থাটা আমাদের এখানে নেই। এ ক্ষেত্রে আমি আহ্বান করবো সিটি করপোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়। কেননা রাস্তায় গাড়ি ধোয়া বা মেরামত করলে যেমন দ্রুত রাস্তা নষ্ট হয়, তেমনি জনভোগান্তির সৃষ্টি হয়।’-বাংলাট্রিবিউন