মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় অবাধে চলছে মাটির চুল্লিতে অবৈধ ভাবে গাছের গুড়ি ও কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির কাজ। ঘনবসতি আবাসিক এলাকায় এমন অপরিকল্পিত অবৈধ কয়লার চুল্লি থেকে নির্গত ধোঁয়ায় মারাত্বক হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ও জমির ফসল। বন বিভাগের অনুমতি ছারাই উজার হচ্ছে এলাকার গাছপালা। পরিবেশের ছার পত্র বা নেই কোন সরকারি অনুমোদন। কালো ধোঁয়ার দূষণের ফলে দেখা দিচ্ছে স্বাশ কষ্ট সহ একাধিক ব্যাধি। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাস করছে এলাকাবাসি। কোন প্রতিকার ব্যবস্থা নিচ্ছেন না প্রশাসন। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫কি.মি দুড়ে দিঘুলিয়া ইউনিয়নে নাশুর পুর গ্রামের মৃত আফসারের পুত্র মো.আবুল হোসেনের বাড়ির পাশে থাকা প্রায় ২বিঘা ফসলী জমিতে তৈরী করেছেন কাঠ পুড়ানোর বিশাল মাটির চুল্লি। তার পাশেই এলাকার গাছপালা কেটে কাঠের গুড়ির বিশাল ইস্তুব। ওই চুল্লির আশপাশে নানা প্রজাতির ফসলী জমি, বসত বাড়ি ও রয়েছে গাছপালা। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ৪টি কয়লা তৈরির বিশেষ ধরনের চুল্লি তৈরি করেন আবুল হোসেন। এসব চুল্লিতে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি ও ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয় চুল্লিতে। আগুন জ্বলে উঠার পর সেটিও বন্ধ করে দেয়। প্রায় ১সপ্তাহ পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২০০ থেকে ২৫০ মন কাঠ পোড়ানো হয়। পরে এই কয়লা শীতল করে বিক্রি হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিভিন্ন ইটভাটার মালিকরা এই কয়লার বড় অংশের ক্রেতা বলে জানা গেছে। কাঠ পোড়ানোর সময় নির্গত হয় প্রচুর কালো ধোঁয়া। এতে একদিকে নষ্ট করা হচ্ছে বনজ সম্পদ, ফলজ গাছ অপর দিকে ধোঁয়ার কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত নানা রোগব্যাধি হচ্ছে স্থানীয় লোকজনের। কয়লা তৈরির এই প্রক্রিয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসির। কয়লা ব্যবসায়ী আবুল হোসেনের ম্যানেজার সাবেক ইউপি সদস্য দুলাল মিয়া জানান, মালিকের ব্যাটারী গলিয়ে শিশা তৈরীর কারখানা রয়েছে। সেখানে অনেক কয়লার দরকার হয়। তার প্রযোজন মিটিয়ে বাকী অতিক্তি কয়লা বিক্রি করা হয়। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই ব্যবসা চালাতে হয় তাকে এতে সামান্য ব্যবসা হয়, তাই কোনোমতে টিকে আছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, দিনের বেলায় ওইসব চুল্লিতে কাঠ কিনে পোড়ানো হলেও রাতের আঁধারে চোরাই কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পোড়ানোর সময় বের হওয়া ধোঁয়ায় আশপাশে কালো আচ্ছন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসি। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। প্রভাবশালীদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলছে না। স্থানীয়রা জানান, রাস্তার পাশ দিয়ে চলালের সময় চোখ জ্বালাপোড়া করে। কালো ধোঁয়ায় ফসল ও গাছপালা মরে যাচ্ছে। অসুস্থ হলেও প্রভাবশালীরদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না কেউ। এসব কয়লার চুল্লির ধোঁয়ায় এক কিলোমিটারে মধ্যে কোনো পাখি বাস করছে না। ফলে জীববৈচিত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাটুরিয়া উপজেলা বন কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান বলেন, আমার জানা মতে সাটুরিয়ায় কোন কয়লার কারখানা নেই। এরকম কোন প্রমাণ পেলে আইনগত ব?্যবস্থা নেয়া হবে। কয়লা কারাখানা নির্গত ধোয়ার উচু কোন চিমনী থাকে না বিধায় পরিবেশের জন্যে হুমকীর বিষয়। এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আরা বলেন, অবাধে বৃক্ষ রোধন এবং গাছ কেটে জ্বালানী কাজে ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিষয়টি এলাকার কেউ তাকে অবহিত করেনি। খুজ নিয়ে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।