শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ। আমাদের জাতীয় জীবনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়া মার্চ মাসের প্রথম দিন আজ। মার্চ মাস শুরু হলেই আমাদের ধমনিতে জাগে নতুন করে রক্ত প্রবাহ। কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণের মাস মার্চ। এ মাস আমাদের জাতীয় জীবনে অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাঙালির সহস্র বছরের ইতিহাস উজ্জ্বল হয়েছে এ মাসে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেয়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল বীর বাঙালি। এবারের মার্চ মাস ভিন্ন আঙ্গিকে এসেছে। আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূরণ হবে এ মাসেই। এ মাসেই বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের বজ্র নির্ঘোষ ধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। আবার এ মাসের ১৭ তারিখ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মে ছিলেন তিনি। বাঙালি জাতির স্বপ্নসাধের যৌক্তিক পরিণতি পেয়েছিল এ মাসে। মার্চ মাস তাই আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়। মার্চ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর মাস। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘটনা হচ্ছে ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এ মাসে এই ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির কয়েক হাজার বছরের সামাজিক-রাজনৈতিক স্বপ্নসাধ পূরণ হয়।
স্বাধীনতাকামী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল তখন পুরো পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশ। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকশ্রেণীর উন্নাসিকতা ও হঠকারিতা, শোষণ, বৈষম্য আর অবহেলার বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের মার্চে এই জনপদে জেগে উঠেছিল বি ত জনতা। আলাদা করে, নিজের মতো করে বাঁচার স্বপ্নে বিভোর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এ মাসেই ঝাঁপিয়ে পড়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী লড়াই। আর এর পথ ধরেই ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। ইতিহাসের পাতায় অগ্নিঝরা মার্চ তাই শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবাদ জানানোর মাস হিসেবে পরিচিত।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রহর গুনছিল, তখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান আকস্মিকভাবে আজকের এই দিনে জাতীয় পরিষদের পূর্বনির্ধারিত ৩ মার্চের অধিবেশন বাতিল করেন। রেডিওতে এ খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে ফুঁসে ওঠে পূর্ব বাংলার মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন অসহযোগ আন্দোলনের। তার পাশে এসে দাঁড়ান মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশের স্কুল-কলেজ, মাদরাসা-বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, কলকারখানা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। অচল হয়ে পড়ে দেশ। স্বাধীনতা আদায়ের দৃঢ় সঙ্কল্পে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দিন দিন তীব্র হয়ে ওঠে। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে যে আর একত্রে থাকা যাবে না, সেই সন্দেহ বদ্ধমূল হয় অনেকের মনে। ফলে তখন অনেকেই চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস মার্চ এবার এসেছে ভিন্ন বার্তা নিয়ে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শপথে নিয়ে।