কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল কর্তৃক কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদে’ কক্সবাজারে ‘সাধারণ আইনজীরা মানববন্ধন করেছে। কক্সবাজার-রামুর সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের অনুসারী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি মামলা রেকর্ড করার আদেশ দেন কক্সবাজারের দায়রা জজ আদালত। সেই মামলা হওয়ায় গেল শনিবার বিচারককে ‘ভাত খেতে’ ও ‘চাকরি করতে দেবেন না’ বলে হুমকি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) সাইমুম সরওয়ার কমল। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি রামু উপজেলা শাখা আয়োজিত শিক্ষক মিলনমেলা, নবীন বরণ, বিদায় ও কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুসে উঠে আইনজীবীরা। এমপি কমলের এমন বক্তব্যের প্রতিবাদে তাঁর বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার দাবি করে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার আদালত চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আইনজীবীরা। জানা যায়, এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল বক্তব্যে বলেন, রামুর একজন শিক্ষক। নাম জসিমউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা হয়েছে। আমি জজ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুত বিচার, ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নেই। জমি নিয়ে গ-গোল। সেখানে কোনো মারামারি হয়নি। কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কোনো সাক্ষী নেই। কিন্তু একজন পেশকার একজন জজকে ম্যানেজ করে একটা দ্রুতবিচার আইনে মামলা নিয়েছে। বক্তব্যে আরো বলেন, ইনশাআল্লাহ আমি বেঁচে থাকতে তাকে (ওই শিক্ষককে) জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয়, তা হলে আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেব না। এই আমার কথা। এরপর তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের বিপদে শিক্ষককে আসতে হবে। একজন শিক্ষকের বিপদে সব শিক্ষককে একসঙ্গে জানাতে হবে। কোনো শিক্ষক যদি কোথাও অসম্মানিত হয়, তা হলে আমার আসনের প্রত্যেকটি স্কুল একসঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে। ‘শিক্ষক সমিতি, প্রতি মাসে আপনারা মিটিং করবেন। আপনাদের সম্মান রক্ষার্থে, জীবন রক্ষার্থে, সম্পদ রক্ষার্থে এই সমিতি কার্যকর ভূমিকা যাতে পালন করে।’ বক্তব্যে যোগ করেন এমপি কমল। এদিকে বিচারককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে এমপির সেই বক্তব্য আদালত অবমাননার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞজনরা। একজন আইন প্রণেতা এমনটি বলতে পারেন না। তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কর্মরত আইনজীবীরা। বক্তব্যে আইনজীবী নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমরা মগের মুল্লুকে বসবাস করছি। বিচারককে ভাত খেতে দেবেন না, চাকরি করতে দেবেন না এ অধিকার আপনাকে সংবিধান বা সরকার আপনাকে দেয়নি। তাই অচিরে ক্ষমা চেয়ে এ বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে আমরা আইনজীবীরা আপনার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবো। আইনজীবী রিদুয়ান আলী বলেন, আমরা আজকে এজলাসে না থেকে রাজপথে নেমে এসেছি। একজন সংসদ সদস্য কিভাবে বলতে পারেন বিচারককে তিনি ভাত খেতে দেবেন না। একটি সভ্য দেশে, সভ্য সমাজে এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য আশা করতে পারে না। আজকে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সেই জায়গায় বিচারকদের বিরুদ্ধে, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে ন্যাক্কারজনক বক্তব্য মেনে নেওয়া যায়না। এ বিষয়ে আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হোক। মানববন্ধনে অন্যানের মধ্যে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আবু তাহের, সিনিয়র আইনজীবী নুরুল ইসলাম নুরু, আইনজীবী নুর মোহাম্মদ মামুন, খোরদেশ আলম গুনু বক্তব্য রাখেন।