টেনিস এলবো মূলত হাতে ব্যথার একটি অবস্থা। যাঁরা হাতের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁদের অনেকেরই এই সমস্যা থাকতে পারে। প্রথমদিকে এই ব্যথাটা অল্প থাকে যেটা সহনীয় মাত্রায় থাকে। কিন্তু যদি এই অবস্থায় বারবার একই ধরনের মুভমেন্ট করা হয়, তাহলে বড় ধরনের টিয়ার হয় এবং তা ক্রনিক ব্যথায় রূপান্তরিত হয়। ‘টেনিস এলবো’ শব্দটা দিয়ে মনে হতে পারে, যাঁরা লং টেনিস খেলেন তাঁদের ক্ষেত্রে হয়। কিন্তু আসলে কথাটি সঠিক নয়।
কারণ: বিভিন্ন কারণে টেনিস এলবো হতে পারে। এলবো মূলত আমাদের হাতের একটি জয়েন্ট এবং এটি হাতের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি জয়েন্ট। যদি কোনো কারণে এই জায়গাটাতে ইনজুরি হয় বা বারবার চাপ লাগে, সে ক্ষেত্রে ছোট্ট টিয়ার হতে পারে। আমাদের মাংসপেশির একটি শেষের দিকের অংশ হচ্ছে টেনডন, যা হাড়ের সঙ্গে মাংসপেশিকে সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। এই টেনডন অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে বলে টেন্ডিনাইটিস। টেনিস এলবোতে মূলত এই টেনডন বা মাংসপেশিতে টিয়ার হয়।
লক্ষণ: * মূল লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা। * অনেক সময় আমাদের কবজির ডান এবং বাঁ পাশে নড়াচড়া করলে ব্যথা বেশি অনুভূত হয়। * কোনো কোনো সময় কনুই ভাঁজ করা বা সোজা করার সময় ব্যথা অনুভূত হয়। * হাত মুষ্টিবদ্ধ করার সময় এই ব্যথা অনুভূত হতে পারে। * সমস্যাটি গভীর হলে অল্প নড়াচড়ায়ই ব্যথা অনুভূত হয়।
কারা ঝুঁকিতে থাকেন? সাধারণত সব বয়সের মানুষেরই টেনিস এলবো হতে পারে। তবে ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মানুষের মধ্যেই এই টেনিস এলবো সমস্যা দেখা দেয়। যাঁদের হাত খুব বেশি নড়াচড়া করতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে এই টেনিস এলবো সমস্যা হতে পারে। শুধু টেনিস খেলায় না, অন্যভাবেও এর ব্যথা হতে পারে। যাঁরা রঙের কাজ, কাঠের কাজ ও অতিরিক্ত কাপড় ধোয়ার কাজ করেন, তাঁরা টেনিস এলবোতে আক্রান্ত হতে পারেন।
চিকিৎসা: ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এক্সারসাইজ করা যেতে পারে। এক্সারসাইজের মাধ্যমে আমাদের জয়েন্টের মুভমেন্ট বা নড়াচড়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ব্যথা হলে প্রথমেই এলবোকে বিশ্রাম দিতে হবে। এলবোতে নড়াচড়া বা মুভমেন্ট হয়, এমন কাজ বন্ধ রাখতে হবে। মূল কারণের চিকিৎসা যদি না করে ব্যথার ওষুধ খেতে থাকেন, তাহলে সেই ব্যথার ওষুধের সাময়িক ব্যথা কমাতে পারে, কিন্তু আপনার ব্যথার মূল কারণ থেকেই যাবে। ব্যথার কারণ শনাক্তে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। বর্তমান সময়ে ইন্টারভেনশনাল চিকিৎসা খুবই জনপ্রিয় ও কার্যকর। পরামর্শ দিয়েছেন: ডা. আহাদ হোসেন,চিফ কনসালট্যান্ট ও ব্যথা বিশেষজ্ঞ,বাংলাদেশ সেন্টার ফর পেইন ম্যানেজমেন্ট, ঢাকা।