চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়ালছড়ি এলাকায় নির্মিত রাবার ড্যামে সুফল পাচ্ছে এলাকাবাসী। বাঁধের কারণে প্রতিবছরের মত এ বছর বোরো মৌসুমের ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষ হয়েছে। পাশাপাশি বাঁধের ওপর নির্মিত সেতুর কারণে অন্তত চারটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। জানা যায়, হারুয়ালছড়ি খালের ২০১১ সালে সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়েছে। দীর্ঘ ৩০ মিটার এই রাবার ড্যাম একই বছরের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিক উদ্ভোধন করা হয়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরীর উদ্যোগে রাবার ড্যামের পানি বন্টন ব্যবস্থাপনা ও কৃষকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার প্রয়োজনে হারুয়ালছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। এরপর থেকে রাবার ড্যামটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে ওই সমিতি। হারুয়ালছড়ি খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি সুত্রে জানা যায়, সমিতির সদস্য সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ৩৬ জন। সমিতির দাপ্তরিক কাজে ৯ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সমিতিতে ১২জন বিশিষ্ট একটি কার্যকরি কমিটিও রয়েছে। যারা কৃষকদের পানিবন্টন, আর্থিক সুযোগ-সুবিধাসহ নানাবিধ দেখবাল করে থাকেন। ২০১১ সালে প্রতিষ্টিত হওয়া এ সমবায় সমিতির সদস্যদের মাঝে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি ৮৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯২ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও এ সমিতির আওতায় ১২শ কানি ফসলি জমি থাকলেও চলতি মৌসুমে চাষাবাদ হয়েছে ৬০০ কানি জমিতে। সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া উজানের পানি কম থাকায় গতবছরের তুলনায় চলতি মৌসুম ২০০ কানি জমিতে চাষাবাদ কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সদস্যরা। স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, রাবার ড্যাম ও সমিতির কল্যানে তারা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ কোন রকম ঝামেলা ছাড়া সঠিকভাবে তারা পানি পেয়ে থাকেন। তবে, আরোও ভালো ড্যানের ব্যবস্থা করা হলে অনাবাদি জমিতেও চাষ করা সম্ভব বলে দাবী করে সরকারি সাহায্য কামণা করেন কৃষকেরা। সমিতির ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আইয়ুব আলী জানান, হারুয়ালছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে সুষ্টু ও সুষম ব্যবস্থাপনায় পানি বন্টন করে থাকি। কৃষকের পানি অপচয়রোধে সমিতির মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনে আরসিসি ড্যান ব্যবস্থা করেছি। দুর্বল কৃষকদের সবল করার প্রক্রিয়ায় সহজ শর্তে দিনে দিনেও ঋনদানের ব্যবস্থা করেছি। যাতে অর্থনৈতিকভাবে তারা স্বচ্ছল থাকে। সরকারি সাহায্য পেলে ভালো ড্যানের ব্যবস্থা করা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী জানান, ‘এসময় আমার ইউনিয়নে শুধু এক সিজনেই চাষাবাদ হতো। বাকী সময় জমিগুলো অনাবাদী হিসেবে পড়ে থাকতো। এখন রাবার ড্যাম নির্মাণ হওয়াতেই বছরে দুইবার চাষাবাদ করে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। সাথে কিছুটা হলেও দেশের খাদ্যসংকট মোকাবেলায় অবদান রাখছে।’ তিনি আরও জানান, ‘পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির ঋণ নিয়ে কৃষক ছাড়াও আতœসামাজিক উন্নয়নে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হচ্ছে।’ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘হারুয়ালছড়ি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি সরকারি সকল নিয়ম মেনে পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিবছর এজিএম হয়। সমিতির উদ্যোগে বড় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। নিয়মিত অডিট হয়। তাদের কার্যক্রম খুবই ভালো।’ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে রাবার ড্যামের পানিসহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় এ বছর বোরো মৌসুমে ২০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এছাড়াও চাষ হয়েছে শাকসবজি ও ফলমূলের। কৃষকদের সুযোগ সুবিধা দেখবাল করার জন্য কয়েকজন মাঠকর্মীও নিয়োজিত আছে বলে জানান কৃষি অফিস। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এ রাবার ড্যাম থেকে সেচ সুবিধা নিতে কৃষকদের দিতে হচ্ছে না অতিরিক্ত কোনো খরচ। এতে আর্থিকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। রাবার ড্যামের ফলে শুকনো মৌসুমে পানির সুবিধা পেয়ে বোরো ধানসহ নানা কৃষিজাত পণ্য কৃষকরা চাষ করতে পারছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।