ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় অবৈধ ইটভাটার ক্ষতিকর ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে দুইশতাধিক কৃষকের অন্তত এক শত একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলার গোয়াতলা ইউনিয়নের ইজারাপাড়া গ্রামে সততা ব্রিকসের পাশে বোরো ধানের জমি পুড়ে সাদা হয়ে আছে। এতে অনেক কৃষক তাদের ফসল নষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফসলের ক্ষতিপূরন ও ইটভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। গোয়াতলা ইউনিয়নের ইজারাপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী বলেন, গত ৩ দিন আগেও আমার ধান ক্ষেত ভালো ছিলো। আমার ৪ একর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এই জমি থেকে আমি লক্ষাধিক টাকার ধান পেতাম। ধান খেত নষ্ট হওয়ায় আমি ক্ষতিপূরণ দাবী করছি ও ইটভাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কৃষক আক্কাস আলী বলেন, আমার সব শেষ হয়ে গেলো, ১৫ কাটা জমির সব পুড়ে সাদা হয়েগেছে। আব্দুল গফুর জানান, তার কোন ছেলে সন্তান নাই, মাত্র দুজন মেয়ে ৯ কাটা জমি ধার-দেনা করে বোরো ধান লাগিয়েছিলেন। এখন তার সব ধান ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এখন কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এমনি আরেকজন কৃষক আকিকুল ইসলাম তিনি জানান, ৮ কাটা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছেন। কিন্তু ইটভাটার ক্ষতিকর ধোয়া ও গ্যাস তার পুরো জমি সাদা হয়ে গেছে। এছাড়াও আবুল হাশেম, ছামছুল হক, আব্দুস শহিদ, এনামুল হক, রমজান আলীসহ আরো ২ শতাধিক কৃষকের সোনার ফসল বোরোধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকদের দাবী পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকার পরও অবৈধ ভাবে ইটভাটা তৈরি করে ফসল নষ্ট ও ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এসব ইটভাটা গড়ে উঠেছে বলেও দাবি তাদের। ইউনিয়নে মোট তিনটি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে এটিআই ব্রিকস নামে ইটভাটাটি বন্ধ থাকলেও সততা ও এমকেবি ব্রিকস ইটভাটা দুটি কোন নিয়মনিতির তোয়াক্কা না করেই দেদারসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইটভাটার লাইসেন্স ও ছাড়পত্র রয়েছে বলে দাবি করেন সততা ব্রিকসের মালিক লুৎফর রহমান খান পলাশ। ফসলি জমি নষ্ট হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কোন গ্যাস ছাড়িনি। তবে কিভাবে কি হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারছি না। তবে ধোবাউড়া উপজেলায় কোন ইটভাটার ছাড়পত্র রয়েছে কিনা এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে রাজি হননি ময়মনসিংহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম তুষার বলেন, কৃষি জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি আমি ইউএনও স্যারের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলবো। গত বছর এই এলাকায় ৫০ একর জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ও ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে একর প্রতি ৪০ হাজার করে টাকা ক্ষতিপূরণ কৃষককে দেওয়া হয়েছিলো। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, ইজারাদাপাড়া গ্রামের সততা ব্রিকসের পাশে বোরোধানের জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার জানা আছে। কৃষি কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে কৃষকের জন্য ক্ষতিপূরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইটভাটার পরিবেশের ছাড়পত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। ইটভাটার ছাড়পত্র রয়েছে কিনা একনো আমার সঠিক জানা নাই।