শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ফরিদপুরে পেঁয়াজবীজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা বগুড়ার শেরপুরে সোয়াবের ইফতার মাহফিল মেলান্দহে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারিতদের সংবাদ সম্মেলন ৯৭ বছর ধরে ২৪ ঘণ্টা কবরের পাশে কোরআন তেলাওয়াত বন্ধ হয়নি যুদ্ধের সময়ও পাঁচবিবি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে ঘুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও ঘেরাও করেছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত, রোগীরা ভোগান্তিতে কেসিসির উদ্যোগে নগরীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ উলিপুরে চরাঞ্চলে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকেরা দাগনভূঞায় যত্রতত্র অটোরিক্সা ও সিএনজি স্ট্যান্ড যানজট ভোগান্তিতে পৌরবাসী দৌলতখানে ইলিশের অভয়াশ্রম রক্ষায় টাস্কফোর্স কমিটির সভা

দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত

মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিশ্বমানবতার জন্য চরম এক অভিশাপ। তাই ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ইসলাম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আর্থিক সাহায্যের বিধান রেখেছে। সম্পদ যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না থাকে, সে জন্য এতে দরিদ্রের একটা নির্দিষ্ট প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে। একটি সুখী, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ গঠনে ধনাঢ্য মুসলমানদের অবশ্যই তাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। ফলে অসহায় ও দুস্থ মানবতার কল্যাণই হবে না; বরং সমাজে আয়বণ্টনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হ্রাস পাবে। পবিত্র কোরআনে ধনসম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে ঘোষণা হয়েছে, ‘যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত: ৭)
দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলাম অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। অর্থবিত্তের মাধ্যমেই সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান বৃদ্ধি পায়। ইসলামি বিধানে সমাজের দরিদ্র জনসাধারণের আর্থিক প্রয়োজনের ব্যাপকতার প্রতি লক্ষ রেখে তৃতীয় হিজরিতে ধনীদের ওপর জাকাত ফরজ করা হয়েছে। সমাজে ধনসম্পদের আবর্তন ও বিস্তার সাধন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণের মহান উদ্দেশ্যেই জাকাতব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার সমস্যা সমাধান জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য। জাকাত বণ্টনের খাতগুলো এ লক্ষ্যেই নিবেদিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সাদকা বা জাকাত তো কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত, জাকাত আদায়কারী কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্তাকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্ত ব্যক্তিদের, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য; এটা আল্লাহর বিধান।’ (সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ৬০) দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের মতো আর কোনো অর্থব্যবস্থাই সমাজের সার্বিক হিত সাধন করতে পারে না। ইসলামি সমাজে তাই জাকাত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ বণ্টনব্যবস্থা। জাকাত ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম ফরজ আর্থিক ইবাদত। জাকাত হতদরিদ্র, অভাবী ও অক্ষম জনগোষ্ঠীকে সামাজিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। নবী করিম (সা.) তাঁর জীবনব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত আরবদের তিনি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী জাতি হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর প্রবর্তিত অর্থব্যবস্থার মূল লক্ষ্য ছিল সমাজে সুষম, ভারসাম্যপূর্ণ ও কার্যকরী জাকাতব্যবস্থা প্রচলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন। জাকাত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জাকাত ইসলামের সেতু।’ (মুসলিম) ধনী লোকেরা তাদের ধনসম্পদের ৪০ ভাগের এক অংশ অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে জাকাত বিতরণ করলে গরিব লোকেরা দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর কশাঘাত থেকে মুক্তি পায়। ইসলামি বিধান অনুসারে জাকাত প্রদানের ফলে সমাজের ঋণগ্রস্ত গরিব-দুঃখী, অনাথ, বিধবা, বৃদ্ধ, রুগ্ণ, পঙ্গু ও অক্ষম ব্যক্তিরা মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অভাব মোচন করতে পারে। জাকাতের অর্থ অভাবী মানুষের হাতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বণ্টিত হয়ে তাদের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হয়। ধনী লোকেরা যদি ঠিকমতো জাকাত আদায় করে, তাহলে সমাজে কোনো অন্নহীন, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীন, শিক্ষাহীন দরিদ্র লোক থাকতে পারে না। জাকাতের সুষ্ঠু উশুল ও সুষম বণ্টনের মাধ্যমেই মুসলিম সমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব। যেমনভাবে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক।’ (সূরা আল-জারিআত, আয়াত: ১৯) জাকাতের মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখা হয়। ইসলামে সম্পদ বণ্টনব্যবস্থায় ধনীরা তাদের সম্পদের কিছু অংশ জাকাত দিলে গরিবদের সম্পদ কিছুটা বেড়ে যায় এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়। জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা মহানবী (সা.)-এর আদর্শ মদিনা রাষ্ট্র, খোলাফায়ে রাশেদিনের শাসনামলে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচন করে মুসলিম উম্মাহকে সমকালীন বিশ্বে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত জাতিতে পরিণত করেছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় আল্লাহর কাছে দারিদ্র্য থেকে মুক্তির প্রার্থনা করতেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করতেন। তিনি মানুষকে উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের ওপর সাদকা (জাকাত) অপরিহার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) জাকাতের মাধ্যমে ইসলাম সমাজকে দারিদ্র্য থেকে উদ্ধার করতে চায়। কিন্তু দেশে যেভাবে জাকাত আদায় ও বণ্টন করা হয়, এতে জাকাতগ্রহীতা স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে কোনো ধরনের পেশা বা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারে না। দেশের আদায়যোগ্য জাকাতের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও অধিক হতে পারে; যা দ্বারা প্রতিবছর দুই লাখ লোকের পুনর্বাসন সম্ভব। পরিকল্পিতভাবে কাজ করলে এভাবে ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দেশের দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। তাই সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের বিধান অনুযায়ী জাকাত আদায় ও তার যথাযথ বণ্টনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানুষের স্থায়ী কল্যাণের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক, গবেষক ও কলাম লেখক।dr.munimkhan@yahoo.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com