এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন নদীর উপর একের পর এক সেতু নির্মাণ করছে। যার ফলে শুধু দুই পাড়ের মানুষেরই নয়, সেতু সংযোগকারী সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী সকল যানবাহন ও যাত্রীরাই উপকৃত হয়। এবং উন্নয়ন ও গতিশীল হয় সংশ্লিষ্ট এলাকার অর্থনৈতিক গতিধারা। কিন্তু নিজস্ব গাপিলতির কারণে নির্মানাধীন সেতুটির যদি কাজ অসম্পন্ন অবস্থায় পড়ে থাকে অথবা সময় গেলেও যদি কাজ না ফুরায় তাহলে দেখা যায় উল্টোচিত্র। তাতে করে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, চলে আসে বিরক্তবোধ। এমনটিই লক্ষ্য করা গেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় বয়ে যাওয়া ডাকাতিয়া নদীর উপর প্রস্তাবিত ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুর ক্ষেত্রে। গত ৬ বছরেও সেতুটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় দুই পাড়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরজমিনে অনুসন্ধান করে এবং এলাকার সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায় ঠিকাদারের অবহেলার কারণেই সেতুটির নির্মাণকাজের এই অবস্থা। ফরিদগঞ্জ উপজেলা ও চাঁদপুর সদর উপজেলা ঘেঁষে ডাকাতিয়া নদীর উপর ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পুর্ব ইউনিয়নের চররনবলিয়া গ্রাম ও চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ছোট সুন্দর গ্রামের বগার গুদাড়া নামক স্থান দিয়ে ২৭৭ মিটার দীর্ঘ (প্রস্তাবি) ভাষাবীর এম এম ওয়াদুদ সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এবং চাঁদপুর সদর সংসদীয় আসনের এমপি ডা: দীপু মনি ও ফরিদগঞ্জ সংসদীয় আসনের এমপি ড. মোহাম্মদ শামছুল হক ভূঁইয়া সহ যৌথ ভাবে সেতুটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
নদীর উপরে সেতুটির মূলকাজ ৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার প্রথম শ্রেণির ঠিকাদার মেসার্স নবারণ টেড্রার্স লি. সময়মত সম্পন্ন করে। পরে আবার সেতুর দুই পাড়ের এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০২০-২১ অর্থবছরে দ্বিতীয় ধাপের কাজের জন্য ২৮ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৫৪ টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশন ও ইউনুছ আল মামুন (জেবি) কে যৌথ ভাবে কাজ দেওয়া হয়। এবং তারা প্রথম থেকেই ডিলে ঢালা ভাবে কাজ শুরু করেন। এবং নির্মাণকাজের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বরএ শেষ হওয়ার কথা থাকলে অদ্যাবধি কাজ শেষ হয়না। পরবর্তীতে মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। পহেলা মে সরজমিনে সেতুর নির্মাণকাজ এলাকায় গেলে দেখা যায়, সেতুর ফরিদগঞ্জ উপজেলা অংশে এলজিইডি অথবা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন ইঞ্জিনিয়ার না থাকা অবস্থায় ৫/৬ জন শ্রমিক সেতুর ডায়াফাক্টের পিয়ারের ক্যাপের ডালাইয়ের কাজ করছে। এবং ভাইব্রেটর ছাড়াই হেভি পিলারে বাঁশ দিয়ে ডালাই মিলিয়ে নিচ্ছেন। এত বিশাল কাজের পাশে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অথবা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকদের যে কর্মব্যস্ততা থাকার কথা তার কিছুই নজরে পড়েনা। এ সময় সাংবাদিকদের আগমনের কথা জেনে সেতু এলাকার বাচ্চু মিয়া, সাইফুল ইসলাম, আব্দুল সোবহান, মুছাব্বর পাটোয়ারী, সফিক, রফিকুল ইসলাম সহ অনেকে উপস্থিত হয়ে এ প্রতিনিধিকে জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দুটি যে ভাবে কাজ করছে মনে হয় আগামী ৩/৪বছরেও এ সতুন কাজ শেষ হবে না। কাজের ধীরগতি ও শ্রমিক কম দিয়ে কাজ করানোর কারণে ডায়াফাক্টের সমস্ত পিয়ারের ক্যাপের রডে মরিচা ধরছে। বিশাল এই কাজে তাদের নিজস্ব কোন ভাইব্রেটর নেই, ঢালাই শেষে পানি দেওয়ার জন্য কোন মোটর এবং পাইপ নেই। এছাড়া ঢালাই মিলানোর মধ্যে কোনরকম নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না। সিলিকন বালু এবং পাথরগুলো কোনরকম পরিষ্কার না করেই কাজ করছে। ঠিকমত এখানে নির্মাণ সামগ্রীও আনা হয় না বলে তারা জানান। এ সময় এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই সেতুর কাজের অনিয়মের বিষয়ে যদি আমরা সত্য কথা বলি তাহলে আমাদেরকে চাঁদাবাজির মামলার ভয় দেখায়। এ সময় বয়োবৃদ্ধ একজন বলেন, আমি এই ধরনের কাজের সাথে ৩০ বছর জড়িত ছিলাম।
কিন্তু এ ধরনের হেভি সেতুতে এত নি¤œমানের কাজ করা হয় তা আমার জানা ছিল না। এবং প্রতিদিনই তাদের ৫/৭ জন লোক তাদের নিজস্ব নিয়মে কাজ চালিয়ে নেয়। মাঝেমধ্যে এলজিইডির দুএকজন লোক আসলেও কাজের তদারকি না করেই আবার চলে যায়। এসময় উপস্থিত এলজিইডির কার্য সম্পাদনকারী জাহিদুল ইসলাম ও বশির আহমেদ নামের দুজন বলেন, সেতুর পশ্চিম পাড়ের কাজের অনেক অংশ এগিয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই সেতুর কাজ শেষ হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা সঠিক কোন জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সেতুর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ফরিদগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি’র কর্মকর্তা আবরার আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি কাজের অগ্রগতির বিষয়টি এড়িয়ে বলেন, সেতুর কাজ আমরা এ বছরের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছি। এবং এ সেতুটির কাজ শেষ হলে ফরিদগঞ্জ এবং চাঁদপুরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হবে বলে তিনি জানান। চাঁদপুর জেলা এলজিইডির প্রধান কর্মকর্তা মোঃ আহছান কবিরের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সেতুটির কাজ আগামী জুন নাগাদ শেষ হওয়ার কথা। এবং আগামী জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে তার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান। প্রসঙ্গত, চাঁদপুর-হাইমচর আসনের এম পি শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনির পিতা ভাষা সৈনিক মরহুম এম.এ ওয়াদুদের নামানুসারে ব্রিজটির নামকরণ করা হয়।