চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর ৩টায় এই জেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার ও এই মৌসুমের দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া কেউ ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। গত ২ এপ্রিল থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। প্রতিদিনই বাড়ছে তাপমাত্রা। তবে এ সময়ে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, টানা ১২ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে চুয়াডাঙ্গায়। গতকাল বৃহস্পতিবারও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আগামী আরও কয়েকদিন এমন পরিস্থিতি বিরাজ করবে। একইসঙ্গে তাপমাত্রা আরও বাড়বে।
চুয়াডাঙ্গায় আজ বৃহস্পতিবার দেশের ও মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া এখানে টানা ১২ দিনের মতো চলছে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া মাঝারি তাপদাহ আজ রূপ নিয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহে। আর এই টানা তাপদাহে জনজীবন যেমন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, একইসাথে কাহিল হয়ে পড়ছে মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তীব্র গরম আর আগুনঝরা আবহাওয়ায় সড়কে মানুষের সাথে সাথে যানবাহন চলাচল যেমন কমেছে, ঠিক তেমনি রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত। আর এই প্রখর রোদে ঘাম ঝরানো তাপমাত্রার কারণে শ্রমজীবী ও নি¤œ আয়ের মানুষ এখন মারাত্মক বিপাকে।
তীব্র গরমে বয়স্ক, শিশুরা পড়েছে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে। এই তাপমাত্রায় অতিরিক্ত গরমে অসুস্থও হচ্ছেন অনেকে। জরুরি কাজ না থাকলে মানুষজন তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। আর জেলা সদরের হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও বেড়েছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সী রোগীর সংখ্যা। দিনমজুর রবিউল মিয়া বলেন, ‘এত তাপদাহ সহ্য করা কঠিন। জমিতে বেশিক্ষণ কাজ করতে পারলাম না। এখন এই ছায়ায় বসে আছি। আজ কাজ শেষ করতে দেরি হবে।’ রাস্তার পাশে বসে ফল বিক্রেতা ইয়ার আলী বলেন, ‘কোনো বিক্রি নেই। কাছে নিচে শুয়ে-বসে কাটাচ্ছি। এভাবে চললে সংসার চালানোই দায় হয়ে যাবে।’
তরমুজ ও ডাব বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, ‘এত গরম, তারপরও দিনের বেলায় রোজার কারণে তেমন বিক্রি নেই। ইফতারির আগমুহূর্তে বিক্রি বাড়বে। কিন্তু এই তাপদাহে দোকানে বসে থাকায় কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ বেসরকারি চাকরিজীবী শারমীন মালিক জানান, ‘এত তাপমাত্রায় অফিসে এসেছি। তবে ফিল্ডে যেতে পারছি না। সৃষ্টিকর্তা দ্রুত আবহাওয়া স্বাভাবিক করুক, সেই প্রার্থনা করছি।’ চুয়াডাঙ্গা শহরের ব্যবসায়ী সুমন পারভেজ খান বলেন, ‘এই তাপমাত্রায় আমরা নিজেরাই দোকানে বসতে পারছি না, কাস্টমার কেমনে আসবে। ঈদের কেনাকাটায় ভাটা পড়লো।’ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মাসুম আলী জানান, ‘গরমের কারণে দিনের বেলায় তেমন ভাড়া পাচ্ছি না। আর সন্ধ্যার পরও রোজার কারণে ভাড়া নেই। সামনে ঈদ কি যে করবো, ভাবছি।’
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় ৩৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত একটানা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এ জেলায় রেকর্ড করা হচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল ৩৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৪ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৭ এপ্রিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৮ এপ্রিল ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৯ এপ্রিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১০ এপ্রিল ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১১ এপ্রিল অর্থাৎ গত মঙ্গলবার ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওবং গতকাল ১২ এপ্রিল ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আজ ১৩ এপ্রিল দুপুরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, আজ ১৩ এপ্রিল দুপুর ৩টায় দেশের এবং এই মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। এটি এই মৌসুমের এবং দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এছাড়া গত ২ এপ্রিল থেকে আজ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এই চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হলো। আপাতত বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে এই তাপমাত্রা আরো বাড়বে। আর আজ থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে তাপমাত্রা আরো বেড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু কনসালটেন্ট ডা: মাহাবুবুর রহমান মিলন বলেন, গরমের কারণে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। শিশুরা ডায়রিয়া ও টাইফয়েড রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৪৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। আর শিশু ওয়ার্ডে প্রায় ৫৫ জন ভর্তি রয়েছে। শয্যার তুলনায় অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় গরমের ভেতর গাদাগাদি করে মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।
বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। গরমে শিশুদের প্রতি যতœবান হতে হবে পরিবারের সদস্যদের। অতিরিক্ত গরম শিশুরা সহ্য করতে না পারায় সহজে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। টাটকা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।