নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কাটা উৎসব নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন ঘটা করে এই ধান কাটা উৎসব হয়েছে লোক দেখানো। এ থেকে স্থানীয় চাষিরা কোন সুফল পাননি। তাদের অংশগ্রহণও ছিলনা। হঠাৎ করে এই উৎসব কেন পালন করা হলো তা নিয়েও বিতর্ক চলছে। কর্তৃপক্ষ বলছেন চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতেই এই উৎসবের আয়োজন। কিন্তু এ থেকে চাষিদের কোন কিছু শেখার ছিলনা। গত রোববার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের খোশালপুর মাঠে এই ধান কাটা উৎসবের আয়োজন করা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান আহসান হাবীব ভোদন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান, কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোমরেজ আলী, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খুরশিদুল ইসলাম ধান কাটায় অংশ নেন। ‘উৎসব’ নামকরণ করা হলেও ওইগ্রামের শরিফুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান নামে মাত্র দুইজন কৃষকের জমির সামান্য ধান কাটা হয়। কৃষক শরিফুল ইসলামের গোল্ডেন জাতের ধান বিঘাপ্রতি ৩৩ মণ ও কৃষক মতিয়ার রহমানের ব্রি-৬৬ জাতের ধান বিঘাপ্রতি ২২ মণ ফলন পাওয়া যায় বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়। অন্যান্য বছর কৃষি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কর্তন করে তাদের প্রদর্শনী খেতের। সেখানে দিনব্যাপি কৃষক মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। এলাকার চাষিরা এতে উপস্থিত থেকে প্রদর্শনী খেতের ধান কিভাবে লাগানো, পরিচর্যা করা, সার, কীটনাশক, সেঁচ প্রয়োগ করা হয়েছে এবং কি পরিমাণ ভাল ফলন পাওয়া যাচ্ছে তা দেখে শিখেন। এখানে তাদেরকে নানা বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। কিন্তু এবার কৃষি বিভাগ প্রদর্শনী খেতের ধান না কেটে ব্যক্তিগত কৃষকের খেতের ধান কেন কাটলেন তা নিয়েই মূল বিতর্ক। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার এই উপজেলায় বোরো ধানের মোট ৯৫টি প্রদর্শনী খেত স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, সর্বসাকুল্যে ২০টির বেশি প্রদর্শনী খেত স্থাপন করা হয়নি। যেগুলো হয়েছে সেগুলোরও প্রয়োজনীয় পরিচর্যা না করায় ফলন ভালো হয়নি। এমনকি কোন কোন প্রদর্শনী খেতে পরিচর্যার অভাবে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট চাষিরা প্রাণ পণ চেষ্টা করেও পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে হিমসিম খেয়েছেন। কৃষি বিভাগ তাদেরকে সহযোগীতা দূরের কথা, গত দুবছর তাদেরকে কোন প্রশিক্ষণও দেয়নি। এমনটিই জানালেন উপজেলার ফাজিলপুর গ্রামের প্রদর্শনী খেতের চাষি শম্ভুচরণ। তিনি জানান, কৃষি বিভাগ তাদের ১৫ বিঘা আয়তনের প্রদর্শনী খেতের জন্য যে পরিমাণ কীটনাশক দিয়েছেন তা দিয়ে এক বিঘা জমিতেও প্রয়োগ করা যায়না। বাড়তি কীটনাশক কিনতে হয়েছে তাদের। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোমরেজ আলী এসব অস্বীকার করে জানান, চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতেই ধান কাটা উৎসব পালন করা হয়েছে। প্রদর্শনী খেতে নিয়মানুযায়ী সরকারি বরাদ্দের সার ও কীটনাশক দেয়া হয়েছে। তবে প্রদর্শনী খেতের ধান না কেটে ব্যক্তিগত ধান কেন কাটা হলো তার কোন সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি। তিনি প্রদর্শনী খেতের কৃষকদের তালিকাও দিতে চাননি।