আব্দুল কুদ্দুস একজন প্রান্তিক চাষী। তার বাড়ি কালিয়া উপজেলার পদুমা গ্রামে। সব ফসলের পাশাপাশি তিনি বোর ও আমন ধানের চাষ বেশী করে থাকেন। নিজের সামান্য জমিতে মৌসুমী শাক-সবজীর চাষ করেন তিনি। এবছর তিনি সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ২৮ জাতের বোর ধানের চাষ করেছিলেন। ধার দেনা করে নিয়মিত সেচ ও পরিমান মত সার ও কীটনাশক ব্যবহারসহ সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ধানের বাড়ন্তি ও ছিল আশাপ্রদ ও সন্তোষ জনক। আশাছিল বাম্পার ফলন হবে। ধানে গোলা ভরবে, ধারের টাকা শোধ করে ঈদের সময় ছেলে মেয়েদের জন্য সুন্দর সুন্দর কেনাকাটা করে ধুমধামের সাথে ঈদ করবেন। কিন্তু “ আল্লার মার দুনিয়ার বাইর”। প্রচন্ড তাপদাহে বোর ক্ষেতের ফসল ঝলসে ও শুকিয়ে মরে চিটায় পরিনত হওয়ায় তার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গিয়েছে। একটি আনন্দঘন ঈদের স্বপ্ন এখন তাকে দেনা পরিশোধের দুশ্চিতায় কুড়ে কুড়ে খেতে শুরু করেছে। চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের প্রচন্ড তাপদাহে নড়াইলের কালিয়ায় ক্ষেতেই ঝলসে চিটায় পরিনত হয়ে যাচ্ছে চলতি মৌসুমের ২৮ জাতের বোর ধান। মৌসুমের শুরু থেকে সার, কীট নাশক ও সেচ দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা ধান শুকিয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বোর চাষীদের মাথায় হাত পড়েছে। অন্য কোন জাতের ধান ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও ২৮ জাতের ধান বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই জাতের ধানে পাক ধরতে শুরু করার সাথেই শীষের গোড়া কালচে হয়ে শীষ শুকিয়ে সাদা বর্ন ধারন করে গাছ মরে যাচ্ছে। আর শীষ চিটা ধানে ভরে যাচ্ছে। যে কারনে ২৮ জাতের ধান চাষীরা এবছর কি পরিমান ধান ঘরে তুলতে পারবেন তা নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। তবে উপজেলার বিভিন্ন এলকায় কি পরিমান জমির ধান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাৎক্ষনিক ভাবে তার সঠিক পরিমান জানা যায়নি। উপজেলার কলাবাড়িয়া গ্রামের খাইরুল শেখ, ইদ্রিস মল্লিক, টিটুল ফকির, তেবাড়িয়া গ্রামের শহীদুল চোহদ্দী ও মোদাচ্ছের মোল্যাসহ অনেকেই জানিয়েছেন, চলতি বছর ১ বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। যা গত বছরের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ বেশী। বর্তমানে এই জাতের ধান সবে পাকতে শুরু করেছে। ঠিক সেই সময়ই দেখা দিয়েছে দূর্যোগ। শীষের গোড়া শুকিয়ে কালচে বর্ন ধারন করে গাছসহ মরে যাচ্ছে, চিটায় পরিনত হচ্ছে ধান। আর দূর্যোগটি এত দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে যে প্রতিকারের কোন ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেনা চাষিরা। প্রতিদিনই ২৮ জাতের ধানে সেটি ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি আকারে। যে কারনে অনেকেই এই জাতের ধান আগাম কাটতে শুরু করেছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, কালিয়ায় ২৬ হাজার ৪৩৫ হেক্টর আবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। তার মধ্যে ২৬ হাজার ৩৬২ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ফসলের চাষ করে থাকেন চাষীরা। চলতি বছর ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টরে রোর, ১০ হাজার ৭৫০ হেক্টরে আামন, ৩ হাজার ৪৫০ হেক্টরে পাট, ৫৫০ হেক্টরে আখ, ৫৩০ হেক্টরে তিল, ৩৯০ হেক্টরে গম, ৪০ হেক্টরে ভ’ট্টা ও ২০ হেক্টর জমিতে চিনাবাদামের চাষ করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুবির কুমার বিশ^াস বলেছেন, প্রচন্ড তাপদহের কারনে এই জাতের কিছু কিছু ধান ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ব্যহত হবে না। তিনি আরও বলেছেন, দাপদাহ বৃদ্ধির শুরুতেই উপজেলা কৃষি বিভাগ তাপদাহ কালে ফসল রক্ষায় করনীয় সম্পর্কে কৃষকদেরকে সতর্ক করে পরামর্শ দেয়ার কাজ অব্যাহত রেখেছে। যেহেতু এবছর উপজেলায় বোর আবাদ আগাম হয়েছে। তাই এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শুরু হলে ক্ষতির সম্ভাবনাও কম থাকবে।