সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ অপরাহ্ন

হজের মানসিক প্রস্তুতি

মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

মহান রবের প্রতি বান্দার প্রেমের সর্বোত্তম বহিঃপ্রকাশ ঘটে হজের মাধ্যমে। হজভ্রমণের প্রতিক্ষণে আছে আল্লাহর অপূর্ব নিদর্শন। প্রতিদানে আল্লাহর পক্ষ থেকে আছে ক্ষমার ঘোষণা। তাই প্রতিবছর লাখ লাখ মুসলমানের ‘লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হয় মক্কা ও মদিনা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দিন, তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে ও সব ধরনের দুর্বল উটে করে দূর-দূরান্তের পথ অতিক্রম করে।’ (সুরা হজ, আয়াত : ২৭)
হজের মানসিক প্রস্তুতি যেভাবে নেবেন: হজযাত্রার আগেই অন্তরে এই সৌভাগ্য লাভের উপলব্ধি থাকা উচিত। আর এ কথা মনে রাখতে হবে, এটি সাধারণ কোনো ভ্রমণ নয়; বরং তা মহান রবের প্রেমে ভরপুর অন্তরের মিলনমেলা। তাই এই ভ্রমণের সব দুঃখ ও কষ্টকে সৌভাগ্যের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বারবার কাবাঘরের অতিথি করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো তাহলে আমি আরো বাড়িয়ে দেব।’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৭)
পাপমুক্তির ঘোষণা : কেউ রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে হজ পালন করলে মহান আল্লাহ তার অতীত জীবনের সব গুনাহ মাফ করবেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ করেছে, অতঃপর অশ্লীল কাজ ও পাপকাজ থেকে বিরত থেকেছে, সে এমন শিশুর মতো ফিরে আসবে, যেন তার মা এই মুহূর্তে প্রসব করেছে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৫২১)
পরকালে জান্নাত লাভ : কোরআন ও হাদিসে হজের বর্ণনায় সব ধরনের পাপাচার ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আর পরকালে এর প্রতিদান শুধু জান্নাত। নবীজি (সা.) বলেন, ‘এক ওমরাহ পরবর্তী ওমরাহ পর্যন্ত সব পাপ মুছে দেয়। আর কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া কিছু নয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩)
সদাচারের নির্দেশনা : হজযাত্রায় নানা দেশের মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়। মুখের ভাষা, সামাজিক অবস্থান ও গায়ের রং ভিন্ন হলেও সবার পরনে শুভ্র সেলাইহীন কাপড়। অনেক মতপার্থক্য থাকলেও সবাই এখন আল্লাহর ঘরের অতিথি। তাই সবার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করা হজযাত্রীদের প্রধান কর্তব্য। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজ নির্দিষ্ট কয়েক মাসে, কেউ তাতে হজের ইচ্ছা করলে সে স্ত্রী সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ ও কলহ-বিবাদ করতে পারবে না, তোমরা যেসব ভালো কাজ করো আল্লাহ তা জানেন…।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৭)

কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির প্রত্যাশা : আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে সব আমল করা কর্তব্য। হজ পার্থিব খ্যাতি, সামাজিক মর্যাদা লাভের জন্য করা অনুচিত। আনাস বিন মালিক (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) (উটের) পুরনো জিনে বসে হজ করেছেন। আর এর ওপরে ছিল চার দিরহাম বা তারও কম দামের একটি কাপড়। অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, ‘হে আল্লাহ, আপনি এই হজ কবুল করুন। এতে লৌকিকতা ও প্রচারণার কিছু নেই।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯০)
হজবিষয়ক জ্ঞানচর্চা : হজের অনেক বিধি-নিষেধ আছে। সাধারণত এসব বিষয় আলোচিত হয় না। তাই সফরের আগেই হজবিষয়ক সব বিষয় জানা থাকা উচিত। হজের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। বিদায় হজের সময় মহানবী (সা.) সাহাবিদের হজ বিষয়ে সব কিছু জানতে বলেছেন। জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে কোরবানির দিন তার বাহনে চড়ে প্রস্তর নিক্ষেপ করতে দেখেছি। তখন রাসুল (সা.) বলছিলেন, ‘তোমরা হজের বিধান সম্পর্কে জেনে নাও। কেননা আমি জানি না, এই হজের পর আমি আর হজ করতে পারব কি না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১২৯৭)
তাই হজের বিষয়গুলো অভিজ্ঞ আলেমদের থেকে জানা প্রয়োজন। বিশেষত যেসব কারণে হজের বিধান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং জরিমানা দিতে হয় সেসব বিষয়ে বিস্তারিত জানা উচিত। পাশাপাশি নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হজের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। যেন সুস্থভাবে হজের পুরো কার্যক্রম পালন করা যায়। তা ছাড়া হজভ্রমণের আগে অসিয়ত লিখে যাওয়া ও সঙ্গী নির্বাচনে সচেতন হওয়া উচিত।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com