গত বছরের মে মাসের পর থেকে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে মাঠে বিএনপি। বিশেষ করে জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে অতীতের চেয়ে মাঠের রাজনীতিতে বেশি সরব বিএনপি। একইসঙ্গে ভোটাধিকার হরণসহ দলীয় নেতাকর্মীদের দমন-পীড়ন ইস্যুও রয়েছে সঙ্গে। সারাদেশে বিএনপি এসব ইস্যুতে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, এমনকি ইউনিট ও হাটবাজারেও কর্মসূচি পালন করেছে।
দলটির গত বছরের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচির মধ্যে ছিল ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির ১৬ দিনের কর্মসূচি। এছাড়া ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়ে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে বিএনপি ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ করে। এসব সমাবেশের বেশিরভাগেই নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। আলোচনার কেন্দ্রে ছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ।
ঈদুল ফিতরের পর বিএনপিতে বিভাগীয় লংমার্চ কর্মসূচির আলোচনা থাকলেও সেখান থেকে সরে এসেছে দলটি। আগামী ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে আগের মতো সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। যদিও দলটির নেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, সরকার পতনের এক দফার চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে এসে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সাম্প্রতিক কর্মসূচি গতানুগতিক না বলে তারা বলছেন, যেকোনো সময় কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হতে পারে।
নয়াপল্টনে সমাবেশ করাকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ ও নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকশ’নেতাকর্মী গ্রেফতারসহ নানা ঘটনার জন্ম হয় ওই সমাবেশকে ঘিরে। অবশেষে ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ থেকে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবি ঘোষণা করে বিএনপি। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশের পর দলটি জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কয়েক দফায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। রমজানেও মাঠের কর্মসূচিতে জোরালোভাবে রাজপথে ছিল বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ঈদুল আজহার পরে দল চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যেতে চায়। ততক্ষণ যেন কর্মসূচির ধারাবাহিকতা নষ্ট না হয় এবং নেতাকর্মীরা চাঙ্গা থাকে সে কারণে আপাতত সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালিত হবে। তবে এসব কর্মসূচিতে সরকারের আচরণে যেকোনো সময় ধরন পরিবর্তন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আমাদের ঢাকা মহানগরের সমাবেশ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। ধীরে ধীরে আমরা চূড়ান্ত কর্মসূচির দিকে যাবো। চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে আগামীতে কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধসহ যেকোনো কর্মসূচি আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ১৪৪ দিনের লাগাতার হরতালের কথা নিশ্চয়ই দেশবাসীর মনে আছে, এই স্বৈরাচার সরকার হটাতে আমরা ওই ধরনের কর্মসূচিতে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে বিএনপি আন্দোলন-সংগ্রামে আছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ও আগামী নির্বাচনের দাবিতে দল এখন আন্দোলনে। দেশপ্রেমিক সব শক্তি বর্তমান সরকারের পতনের একদফার বিকল্প দেখছে না। এই দাবিতে আগামীতে প্রয়োজনীয় সব কর্মসূচিও দেওয়া হবে।