সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন

রাসূল সা. – এর অবমাননা : অমার্জনীয় অপরাধ

আব্দুল্লাহ আল মামুন আশরাফী:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩

রাসূলুল্লাহ সা: মানবসভ্যতার অহঙ্কার। রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে গোটা মানবজাতি ঋণী। তিনি পৃথিবীকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও আলোকিত সমাজ উপহার দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মানবজাতির প্রতি এত বড় অনুগ্রহশীল এই মহামানবের প্রতি একশ্রেণীর অমানুষ প্রায়ই অবমাননাকর মন্তব্য করে নিজেদের হীন মানসিকতার জানান দেয়। রাসূলুল্লাহ সা:-এর অতুলনীয় পবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপনের অপচেষ্টা চালায়। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই রাসূলপ্রেমিক মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটে। প্রতিবাদে আসমুদ্রহিমাচল কেঁপে ওঠে। জনপদে জনপদে বিক্ষোভ আর দ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে। ইসলামে রাসূল অবমাননা একটি অমার্জনীয় অপরাধ। কুরআন-সুন্নাহে রাসূল অবমাননার ভয়াবহ শাস্তির নির্দেশনা এসেছে। ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখিরাতে লানত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা আহজাব-৫৭) ‘তারা কি জানে না, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করে, তার জন্য রয়েছে অবশ্যই জাহান্নাম, তাতে সে চিরকাল থাকবে। এটি মহালাঞ্ছনা।’ (সূরা তাওবা-৬৩)
‘আর যে হিদায়াত পাওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথের বিপরীত পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে ফেরাব যেদিকে সে ফিরে এবং তাকে প্রবেশ করাব জাহান্নামে। আর আবাস হিসেবে তা খুবই মন্দ।’ (সূরা নিসা-১১৫) কাব বিন আশরাফ নামের একজন ইহুদি যে ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অত্যন্ত শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে রাসূলুল্লাহ সা:-কে কষ্ট দিত এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যভাবে যুদ্ধের হুমকি দিয়ে বেড়াত। এমনকি মদিনায় ফিরে সাহাবায়ে কেরাম রা:-দের স্ত্রীদের ব্যাপারে বাজে কবিতা বলতে শুরু করে এবং কটূক্তির মাধ্যমে তাঁদের ভীষণ কষ্ট দিতে থাকে।
তার এ দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে রাসূলুল্লাহ সা: কাব বিন আশরাফকে হত্যার নির্দেশ দিলে মুহাম্মদ ইবনে মাসলামাহ রা:-এর নেতৃত্বে কয়েকজন সাহাবি তাকে হত্যা করেন। (আর রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা-২৮৫)
আবু রাফে নামের এক ইহুদিকে রাসূলুল্লাহ সা: এ জন্যই হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে রাসূল সা:-এর বিরুদ্ধে সবসময় কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করত। আল্লামা ইবনে কাসির রহ: ‘আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া’ গ্রন্থে ইমাম বুখারি রহ:-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূল সা: আবু রাফেকে হত্যা করার জন্য বেশ ক’জন আনসারি সাহাবিকে নির্বাচিত করলেন এবং আবদুল্লাহ ইবনে আতিক রা:-কে তাদের দলপতি নিয়োগ করলেন। আবু রাফে রাসূল সা:-কে কষ্ট দিত এবং এ কাজে অন্যদের সাহায্য করত। (বুখারি: ৪০৩৯-৪০৪০ মুজাহিদ রহ: বলেন, ওমর রা:-এর দরবারে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হলো, যে রাসূলুল্লাহ সা:-কে গালি দিয়েছে। ওমর রা: তাকে হত্যা করেন। অতঃপর বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ বা কোনো নবীকে গালি দেবে তোমরা তাকে হত্যা করবে। (আস-সারিমুল মাসলুল-৪/৪১৯)
নবী সা:-এর অবমাননাকারীর শাস্তির ব্যাপারে শরিয়াহর সিদ্ধান্ত-নবী করিম সা:-এর অবমাননাকারীর শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদ-। এ ব্যাপারে উম্মতের ইজমা (ঐকমত্য) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ: উল্লেখ করেন, সব মাজহাবের ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত হলো-নবী করিম সা:-এর অবমাননাকারী কাফির এবং তার শাস্তি একমাত্র মৃত্যুদ-। ওপরে উল্লিখিত আলোচনা থেকে এ কথা স্পষ্ট যে- এক. রাসূলুল্লাহ সা:-এর শানে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, বক্তব্য বা তাঁর প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী এবং ধর্মীয় কোনো বিধান নিয়ে ব্যঙ্গকারী ব্যক্তি উম্মতের সর্বোচ্চ ঐকমত্যে মুরতাদ বলে সাব্যস্ত হবে। দুই. রাসূলুল্লাহ সা:-এর অবমাননাকারীর শাস্তি মৃত্যুদ-। তিন. তবে মৃত্যুদ- দেয়ার দায়িত্ব শাসকদের। চার. শাসকদের জন্য আবশ্যক হলো এ ধরনের লোকদের চিহ্নিত করে আইনের মাধ্যমে তাদের মৃত্যুদ- নিশ্চিত করা। রাসূলুল্লাহ সা:-এর প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমার্জনীয় অপরাধ। রাসূল অবমাননাকারীরা দেশ, সমাজ ও মানবতার শত্রু। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বিশ্বশান্তির পথে এরা অন্তরায়। সামাজিক স্থীতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাসূল অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ নিন্দা, ঘৃণা ও শাস্তি দেয়ার বিকল্প নেই। লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম, টঙ্গী, গাজীপুর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com