বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য ও কৃষি বিজ্ঞানী কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের কৃষি খাতকে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে। গতকাল টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি কলেজ মিলনায়তনে কৃষক সমাবেশ ও বিনা ধান ১১ ও ১৭ এর বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এসময় কৃষকদের মাঝে বিনা ধান-১১ এবং বিনা ধান-১৭ জাতের উফশী ও স্বল্পকালীন আমন ধানের বীজ বিতরণ করেন। কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকার সবসময় কৃষকদের পাশে রয়েছে। প্রতিটি ফসলের মৌসুমের শুরুতেই সরকার কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সারসহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ বিতরণ করছে। কৃষকরা প্রতিটি ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের কল্যাণে দেশের কৃষকরা সাবলম্বি হবে। বিনার মহা-পরিচালক ডক্টর মোঃ মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারুনার রশিদ হীরা, উপজেলা ধনবাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি ফারাহ ফাতেহা তাকমিলা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মীর ফারুক আহমাদ ফরিদ, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মনঞ্জুরুল ইসলাম তপন ,সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও আমন্ত্রিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) বিজ্ঞানীরা জানান, এ জাতটি বন্যা সহনশীল। এ ধান ২৫ দিন পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকলেও কোনো ক্ষতি হয় না। আর ফলনও বেশি। আবার উৎপাদন খরচও তুলনামূলক অনেক কম। মাত্র ১০৫ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। ফলে কৃষক বছরে অন্তত তিনটি ফসল করতে পারবেন এসব জমিতে। কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, একই জমি থেকে বছরে তিন ফসল চাষের সুযোগে তারা যেন নতুন করে জেগে উঠেছেন। এখন আর তাদের বন্যায় ধান ডুবে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। পড়তে হবে না আর্থিক ক্ষতিতে। অতীতের সব ক্ষতি এখন পুষিয়ে নেওয়ার পালা। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, দেশে প্রতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা ও বন্যায় প্রায় ২০ লাখ হেক্টর জমির ধান কোনো না কোনোভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাছাড়া জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আকস্মিক বন্যা, অতি বন্যা, জোয়ারের বন্যা, পাহাড়ি ঢলের বন্যার কারণে আবাদি জমি ক্রমাগত কমছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে বিনার বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন জলমগ্নতাসহিষ্ণু ধানের জাত বিনা-১১ ও বিনা ১৭। আমনের এ জাত ২০-২৫ দিন জলমগ্নতা সহ্য করার পরও বন্যা আক্রান্ত জমিতে হেক্টরপ্রতি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ টন এবং বন্যামুক্ত স্বাভাবিক জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টন পর্যন্ত ফলন দিতে সক্ষম। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ও বিনা ধান-১১ ও১৭ জাতটির উদ্ভাবক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, দেশের টেকসই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিনা ধান-১১ বিশেষ ভূমিকা রাখছে এবং ভবিষ্যতে আরও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় জাতের চেয়ে বিনা-১১ চাষে সার, পানিসহ বিভিন্ন খরচ ৫০ শতাংশ কম লাগে। এ কৃষি বিজ্ঞানী বলেন, এ জাতটি আবাদে অনেক বড় সাড়া পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও বিঘাপ্রতি ২৭ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। এ ধানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো পানির নিচে ২৫ দিন থাকলে, এমনকি পানিতে তলিয়ে পচে গেলেও শুকানোর পর ধানের গোড়া থেকে ফের ডগা বা পাতা গজায়। অর্থাৎ নতুন করে ধান রোপণ করতে হয় না। তিনি জানান, দেশে প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বিনা-১১ জাতটি চাষ হয়েছে ছয়-সাত শতাংশ জমিতে। স্বল্প জীবনকাল বিশিষ্ট এসব জাত চাষ করে কৃষক দুই ফসলি জমিকে তিন-চার ফসলি জমিতে রূপান্তর করেছেন। আমাদের দেশে কৃষিতে সবচেয়ে বড় সমস্যা বন্যা ও ঝড়-বৃষ্টি। এ প্রতিকূলতাকে জয় করতে বিনা ধান-১১ অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। কৃষকদের মাঝ থেকেও ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।