ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ এর ইঞ্জিন রুমে জমে থাকা গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের গঠিত তিন সদস্যের এ তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন। প্রতিবেদনে দগ্ধ শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের মতামত নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দফায় তেল অপসারণের জন্য ইঞ্জিন রুমের জেনারেটর চালু করার সঙ্গে সঙ্গে গ্যাসের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি নিয়ে আসা এবং কয়েক দিন নোঙর করে রাখার সময় গ্যাসের সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটির ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজপত্র সঠিক পাওয়া গেছে। বিস্তারিত জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে।
গত ২৫ জুন তেলবাহী সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে এসে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীর তেলের ডিপো-সংলগ্ন এলাকায় নোঙর করে। জাহাজটিতে প্রায় ১১ লাখ লিটার জ্বালানি তেল (পেট্রোল ও ডিজেল) ছিল। এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোয় তেল খালাস করার অপেক্ষায় ছিল। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটিতে ডিপো বন্ধ থাকায় তেল খালাস করা যায়নি।
১ জুলাই দুপুর ২টার দিকে নন্দিনী ২-এর ইঞ্জিনরুমে বিস্ফোরণের পর অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। এতে চারজন মারা যান এবং চারজন দগ্ধ হন। বিস্ফোরণের পর গত রোববার নন্দিনী-২ থেকে ওটি মৃদুলা জাহাজে তেল অপসারণ করা হয়। এরপর সোমবার নন্দিনী-২ থেকে সাগর নন্দিনী-৪ জাহাজে তেল অপসারণের কাজ শুরু হয়। এসময় নন্দিনী ২-তে আবার বিস্ফোরণ ঘটে। আহত হন ১০ পুলিশ সদস্যসহ ১৫ জন।
দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের আগে নন্দিনী-২ জাহাজে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৪৯ লিটার পেট্রোল ও ২৮ হাজার ৪৫৬ লিটার ডিজেল ছিল বলে দাবি পদ্মা অয়েল কর্তৃপক্ষের। বিস্ফোরণের পর তেল থেকে সারা রাত আগুন জ্বলার কারণে অনেক তেল পুড়ে গেছে। বর্তমানে এখন কী পরিমাণ তেল রয়েছে, তা জানাতে পারেনি পদ্মা অয়েল ও সাগর নন্দিনী জাহাজ কর্তৃপক্ষ। পানিমিশ্রিত তেল ব্যবহার উপযোগী আছে কি না, তা জানার জন্য ঢাকায় নমুনা পাঠানো হয়েছে।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি জাহাজে তেল অপসারণ করা হয়েছে। নন্দিনী-২ এ কী পরিমাণ তেল এখনো আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানিমিশ্রিত তেল পরীক্ষা করে জানা যাবে। এ বিষয়ে উদ্ধার কমিটি কাজ করছে।’
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফিরোজ কুতুবী জানান, জাহাজে থাকা অবশিষ্ট তেল অপসারণে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও নির্দেশনা ছাড়া তা এখনই অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজে পানি উঠে যাতে ডুবে না যায়, সে বিষয়ে তৎপরতা অব্যাহত আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজ থেকে পানি ও ফোমমিশ্রিত তেল অপসারণের জন্য আট সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এ কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মামুন শিবলী জানান, তেলমিশ্রিত পানি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। জাহাজটি যাতে ডুবে না যায়, সেজন্য ড্রেজার দিয়ে পেছনের অংশ থেকে পানি অপসারণ করা হচ্ছে। তবে তেলের চেম্বারগুলোর ওপরের অংশ ফাটল থাকলেও নিচের অংশ অক্ষত রয়েছে।
নন্দিনী-২ এর পাশে থাকা তেলবোঝাই নন্দিনী-৪ জাহাজটিও ঝুঁকিতে আছে বলে জানিয়েছেন মামুন শিবলী। তিনি বলেন, নন্দিনী-৪ এ থাকা তেল অপসারণের জন্য নন্দিনী-১ নামে একটি জাহাজ আনা হয়েছে। নন্দিনী-৪ এর সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে বিস্ফোরক দল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পানি ছিটানো হচ্ছে।