শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে ভারতীয় সাপ্তাহিকের প্রতিবেদন খণ্ডন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের নিউ ইয়র্ক পুলিশের ইন্সপেক্টর পদে পদোন্নতি পেয়েছেন সিলেটের আব্দুল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের সাথে মির্জা ফখরুলের বৈঠক বিভাজিত হওয়ায় আমাদের শিক্ষা বিশ্বমানের হয়নি : মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন হোয়াইট হাউসের কাছে বিমান দুর্ঘটনায় ষড়যন্ত্র দেখছেন ট্রাম্প শ্রমিক ঘাটতি পূরণে ইন্টার্নশিপ কতটা সহায়ক হতে পারে? হরতাল হবে না, মানুষ আওয়ামী লীগের শাস্তির অপেক্ষা করছে: রিজভী আ’লীগের প্রতি আচরণ তেমন হওয়া উচিত, গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হলে যেমন আমাদের সাথে করা হতো: হাসনাত আব্দুল্লাহ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে তিন বিষয়কে গুরুত্ব দেবে ইসি নাইম শেখের সেঞ্চুরি, খুলনার রান পাহাড়

শ্রমিক ঘাটতি পূরণে ইন্টার্নশিপ কতটা সহায়ক হতে পারে?

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫

মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে নতুন নীতি 
মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ১:৩ ইন্টার্নশিপ নীতির আওতায় কোম্পানিগুলোকে প্রতি এক জন বিদেশি কর্মী নিয়োগের বিপরীতে তিন জন স্থানীয় ইন্টার্ন নিয়োগ করতে হবে। মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ আগামী মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। লক্ষ্য হচ্ছে বিদেশি শ্রমিকের উপর নির্ভরতা কমানো এবং স্থানীয় তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা। তবে এই নীতি কি শ্রম বাজারের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে, নাকি এটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে?
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে, দি এজ মালয়েশিয়াসহ দেশটির বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাক্টরিং, কনস্ট্রাকশন এবং সার্ভিস সেক্টরে। অন্যদিকে, দেশীয় কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন গ্র্যাজুয়েটরা চাকরি খুঁজতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, স্থানীয়দের অনীহা এবং বিদেশি শ্রমিক আনার জন্য নানাবিধ শর্তের কারণে দক্ষ কর্মী পাওয়া কঠিন। এই পরিস্থিতিতে, এ ইন্টার্নশিপ নীতি মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে কি না বলে প্রশ্ন করেছিলাম গ্লোবাল লেবার অর্গানাইজেশন (জিএলও) এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান এবং মালয়েশিয়ার ইনস্টিটিউট অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স (আইডিইএএস) এর সিনিয়র ফেলো প্রফেসর নিয়াজ আসাদুল্লাহকে। যিনি গত ২৮ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার আলোচিত টিভি নিউজ চ্যানেল, অ্যাস্ট্রো আওয়ানির ‘আওয়ানি টু নাইট’ অধিবেশনে বিস্তারিত কথা বলেছেন। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার নতুন ১:৩ ইন্টার্নশিপ নীতি একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা দেশটির শ্রম বাজারের দুইটি প্রধান সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। একদিকে, দেশটিতে লক্ষ লক্ষ বিদেশি কর্মী কাজ করছে, অন্যদিকে অনেক স্থানীয় তরুণ চাকরি পেতে হিমশিম খাচ্ছে। নতুন এই নীতির মাধ্যমে সরকার একটি সুবিবেচিত ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইছে। একদিকে, বাড়তে থাকা রাজনৈতিক চাপ সরকারকে বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে, বিশেষ করে যখন অনেক স্থানীয় তরুণ বেকার রয়েছে। অন্যদিকে, মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছে।
এই পরিস্থিতির আলোকে ১:৩ ইন্টার্নশিপ নীতি আসলে একটি বাস্তবমুখী সমঝোতা—যা তরুণ চাকরিপ্রার্থীদের ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে। এই নীতির ইতিবাচক দিক হচ্ছে, উদ্যোগটি মালয়েশিয়ার প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বৃহত্তর লক্ষ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবে, যা তাদের একাডেমিক শিক্ষা ও বাস্তব কাজের মধ্যে ব্যবধান কমাতে সাহায্য করবে। বিদেশি কর্মীদের সাথে কাজ করার ফলে তরুণরা বাস্তব কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, যা তাদের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে এই নীতি স্থানীয় যুবকদের দক্ষ করে গড়ে তুলে বিদেশি শ্রমিকদের উপযুক্ত বিকল্প হিসেবে তৈরি করার মাধ্যমে বিদেশি পেশাদারদের ওপর নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। মোটের ওপর, এই নীতিটি মালয়েশিয়ার তরুণদের চাকরির সুযোগ এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। তবে এই নীতির বাস্তবায়নে বেশ চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে মনে করছেন গ্লোবাল লেবার অর্গানাইজেশন (জিএলও) এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ প্রধান। তিনি এ বিষয়ে জানিয়েছেন, এই নীতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফল হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। সাথে সাথে মালয়েশিয়ার বেশিরভাগ ব্যবসা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই), যারা সীমিত বাজেট এবং জনশক্তির ওপর নির্ভরশীল। ফলে একসঙ্গে তিনজন ইন্টার্ন পরিচালনা করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। এছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান দিতে সক্ষম নাও হতে পারে, যার ফলে ইন্টার্নশিপের মান নিশ্চিত করা কঠিন হবে।
এছাড়া এই বিশেষজ্ঞ এ নীতির সফল বাস্তবায়নের জন্য কিছু শর্তের কথাও বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারকে স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রদান করতে হবে, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো জানে কীভাবে এই নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সাথে সাথে নিয়োগকর্তাদের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক ও নীতি-ভিত্তিক প্রণোদনা থাকতে হবে, যাতে তারা ইন্টার্ন নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের জন্য উৎসাহিত হয়। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে যথাযথ সহায়তা দিতে হবে, যাতে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত না হয় এবং ইন্টার্নশিপ কার্যকর হয়। এত কিছুর মধ্যেও প্রফেসর নিয়াজ আসাদুল্লাহ তার সর্বশেষ ভাবনায় জানিয়েছেন, এই নীতির সফলতা নির্ভর করবে সরকারের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ওপর। যদি সঠিক পরিকল্পনা, দিকনির্দেশনা ও আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়, তাহলে এটি মালয়েশিয়ার শ্রম বাজারের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু যদি এটি ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বোঝা হয়ে ওঠে, তাহলে এর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।( জাগোনিউজের সৌজন্যে,মালয়েশিয়া থেকে আরিফুল ইসলাম)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com