বাংলাদেশ ক্রিকেটে অতীত হলো আরো একটি অধ্যায়। শেষ হলো ‘অধিনায়ক’ তামিমের গল্প। দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হয়েই নেতৃত্ব ছাড়লেন চট্টগ্রামের এই ক্রিকেটার। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাতে অনেকটা আকস্মিকভাবেই শেষ হলো তার নেতৃত্বের তিন বছরের যাত্রা।
মাশরাফিকে যে কাঁধে করে বিদায় জানিয়েছিলেন তামিম। সেই কাঁধেই ২০২০ সালের ৮ মার্চে বর্তায় ওয়ানডের দায়িত্ব। নেতৃত্বও পেয়েছিলেন বিস্ময়করভাবেই। ঘরোয়া ক্রিকেটেও অধিনায়কত্ব করার তেমন অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও দীর্ঘ মেয়াদি নেতৃত্ব পান তিনি। মাত্র ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে দলের হাল ধরেছিলেন তামিম। সেই চার ম্যাচে সাফল্যের খাতা ছিল ০। তিন ওয়ানডে আর ১ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে হারের স্বাদ পান প্রতিটিতেই। তবুও তার ওপর আশা রাখে বিসিবি, ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত দায়িত্ব দেয়া হয় তার কাঁধে। তবে নিরাশ করেননি তামিম, অনভিজ্ঞতা থেকেও দূর্দান্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে যেখানে বড় রাঘববোয়ালরাও খাবি খায়, সেখানে বাংলাদেশ দল তার নেতৃত্বেই সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়! অবশ্য আছে তিক্ততাও, সিরিজ হারতে হয় জিম্বাবুয়ের কাছে।
তামিম বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন ৩৭টি ম্যাচে, যেখানে বাংলাদেশ দল জয়ের দেখা পেয়েছে ২১টিতে। শতাংশ অনুপাতে ৫৬.৭৫ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছে ১৪ ম্যাচে।
সর্বশেষ গত ৫ জুলাই আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ম্যাচে দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই ম্যাচটা বড় ব্যবধানে হেরেও যায় স্বাগতিকরা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে হঠাৎ অবসর নিয়ে বসেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দলে ফিরলেও নেতৃত্বে আর কখনোই দেখা যাবে না তামিমকে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেই নেতৃত্ব ছেড়েছেন তামিম: গত মাসের শুরুর দিকে হুট করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম ইকবাল। বিদায় বলতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওয়ানডে অধিনায়ক। তামিমের সিদ্ধান্তটা ছিল অভিমানে, তা স্পষ্টই বোঝা যায়। সেটা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় হয় তখন। ঘটনার পরের দিন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার মধ্যস্থতায় তামিমকে গণভবনে ডাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই অবসর প্রত্যাহার করে নেন তামিম। এই ঘটনার মাস না পেরোতেই গতকাল নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন তামিম। এবার আর আবেগী নয়, গুরুত্বপূর্ণ সবার সঙ্গে কথা বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার। কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও। বুঝিয়ে বলেছেন পুরো পরিস্থিতি। গত রাতের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘আজকে (কালকে) আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছিল জালাল ভাই (ক্রিকেট অপস প্রধান জালাল ইউনুস) ও (নাজমুল হাসান) পাপন ভাইয়ের সঙ্গে। আমার সবকিছু নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। আর আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিজের থেকে ওনাদের বলেছি যে আজ (কাল) থেকে আমি ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি।’ তামিম যোগ করেন, ‘আমার চোট একটা কারণ। যে ইনজেকশনটা নিয়েছি ওটা হিট অ্যান্ড মিসের মতো। আমার কাছে দল আগে। দলের কথা চিন্তা করে আমার নেতৃত্ব ছাড়াটা সবচেয়ে ভালো বিষয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি। উনি বুঝেছেন।’
নেতৃত্ব ছাড়লেও খেলা চালিয়ে যেতে চান তামিম। এশিয়া কাপে না খেললেও তাকে দেখা যেতে পারে বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। তামিম বলেন, ‘মূল বিষয় হলো, দলের ভালোর জন্য আমি নেতৃত্ব ছাড়ছি এবং একজন ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে চাই।’