যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে মার্কিন বাজারে অর্থের দিক দিয়ে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যেখানে রফতানিতে শীর্ষ দেশ চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ। গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অধীনে অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটেক্সা) পরিসংখ্যানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। চীন থেকে সরে আসা ক্রয়াদেশের ভালো অংশ বাংলাদেশ পাওয়ায় এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরি করায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি দ্বিগুণ হয়েছে বলে মনে করছেন খাত-সংশ্লিষ্টরা। একই সময়ে চীনের রফতানি না বেড়ে কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ, যদিও চীন এখনও সেখানে শীর্ষ রফতানিকারক।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের একটি অংশ চীন থেকে তাদের অর্ডার সরিয়ে বাংলাদেশে এনেছে। আর আমরাও সময় মতো এবং ক্রেতার চাহিদা মতো পণ্য তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষস্থান দখল করা বাংলাদেশের জন্য সহজ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক মালিক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত—পাঁচ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে ১৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ পোশাক আমদানি বাড়িয়েছে। দেশটির পোশাক আমদানির তৃতীয় বৃহত্তম উৎস এখন বাংলাদেশ।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে দেশটি মোট পোশাক আমদানির ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ করেছে বাংলাদেশ থেকে। এ ছাড়া ২০২২ সালে আগের বছরের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ আমদানি বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন মূল্যের পোশাক আমদানি করেছে। ২০২১ সালে এর পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছিল ৫ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। অবশ্য ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানিতে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে চীন। এ সময় চীন থেকে ২১ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম।
ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র যে শীর্ষ ১০টি দেশ থেকে পোশাক আমদানি করেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে করেছে সবচেয়ে বেশি হারে। আলোচ্য সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। একই সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানিকারক চীন ও ভিয়েতনামের রফতানি বেড়েছে যথাক্রমে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও ২৭ শতাংশ হারে। অবশ্য বিশ্বে পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হলেও মার্কিন বাজারে অবস্থান তৃতীয়। শীর্ষ রফতানির বাজার হওয়া সত্ত্বেও রফতানিকারকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রফতানি আরও বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের যেসব ক্রেতা বা ব্র্যান্ড বাংলাদেশমুখী নয় কিংবা খুব সামান্য পরিমাণ আমদানি করে, ওই সব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোয় গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে ফারুক হাসান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের অংশ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে আরও বাড়ানোর বিশাল সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য সহজ করতে বিজিএমইএ আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশনের (এএএফএ) সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে। গত বছর আমরা এএএফএ’র সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিম আমদানিতে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অর্জন করেছে বলে জানান তিনি। ওটেক্সার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৭ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে শীর্ষ রফতানিকারক চীনের রফতানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনামের বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশের পরে দেশটিতে চতুর্থ রফতানিকারক ভারতের রফতানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ২৩ শতাংশ, কম্বোডিয়ার ১০২ শতাংশ, হন্ডুরাসের ২৯ শতাংশ, মেক্সিকোর ১১ শতাংশ এবং পাকিস্তানের বেড়েছে ১১৭ শতাংশ।