বয়স তার ১০১ এর কোঠায় পৌঁছালেও আজও যেন তিনি তরুণ। বয়স যে শুধু একটি সংখ্যা মাত্র তা প্রমাণ করে ১০১ বছরেও চিকিৎসা দিচ্ছেন রোগীদের। এজন্য তার নাম উঠেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। ১০১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ‘বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ডাক্তার’ হিসেবে পরিচিত এখন বিশ্বে।
বলছি যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডের ওহাইওর একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ডা. হাওয়ার্ড টাকার কথ। তার মতে, ‘আমি সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন ডাক্তার ও নিউরোলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস বা অনুশীলন করছি। অনেকেই অবাক হয়ে জানতে চান যে, এখনো কীভাবে স্মরণশক্তি ধরে রেখেছি।’
তিনি জানান, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা পরিবর্তিত হতে পারে। মস্তিষ্কের কিছু অংশ সঙ্কুচিত হতে পারে। এক্ষেত্রে নিউরনের মধ্যে যোগাযোগ কম কার্যকর হয়, ফলে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। এর থেকে বাঁচতে মনের উন্নতি সাধনে ব্যায়ামের প্রয়োজন অপরিহার্য। নির্দিষ্ট কিছু ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক ভালো রাখতে পারবেন আপনি। বিশ্বের বয়স্ক এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। আমার কয়েকটি নীতি আছে, যা অনুসরণ করি নিয়মিত।’ ‘তার মধ্যে অন্যতম হলো সামাজিক ও বিনোদনমূলক কার্যকলাপে অংশ নেওয়া।’ মস্তিষ্ক ভালো রাখতে ও স্মরণশক্তি ধরে রাখতে কী করেন ডা. হাওয়ার্ড টাকা, চলুন জেনে নেসওয়া যাক-
নিয়মিত কাজ করা: বিগত ৭ দশক ধরে চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী এই স্নায়ু বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সব সময় কাজের মধ্যে থাকলে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। আর এ কারণে এখনো আমি অবসর গ্রহণ করিনি। অবসর গ্রহণের পর বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই জ্ঞানীয় পতন দেখা দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাকরির জন্য আমাকে বেশ কয়েকটি মেডিকেল বিষয় পর্যালোচনা করতে হয় ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। নিউরোলজির সর্বশেষ অগ্রগতির সঙ্গে আপ টু ডেট থাকার জন্য আমার মস্তিষ্কও ব্যস্ত থাকে।’
কাজ ছাড়াও অন্যান্য বিষয় যা এই চিকিৎসককে মানসিকভাবে উদ্দীপিত রাখে তার মধ্যে রয়েছে- স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করা। এটি তার একটি শখ, যা তাকে নতুনভাবে কাজ করতে আগ্রহী করে তোলে। জানলে অবাক হবেন, এই চিকিৎসক ৬০ বছর বয়সে সারদিন ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর রাতে আইন বিষয়ে পড়েছেন। তিনি জানান, ৬৭ বছর বয়সে ওহিও বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
সামাজিক হওয়া: গবেষণা অনুসারে, শক্তিশালী সামাজিক সম্পর্ক স্মৃতিশক্তি ও জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে। এই চিকিৎসক বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমার সমবয়সী এমনকি অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীরা এরই মধ্যে মারা গেছেন। তবে আমি ভাগ্যবান যে এখনো চিকিৎসক হিসেবে অনুশীলন করছি।
তাই বলে যে আমি একাকিত্বে ভুগছি তা কিন্তু নয়। তরুণ সহকর্মীদের সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক। এমনকি নিজের ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের সঙ্গে সপ্তাহে নিয়ম করে দু’বার দেখা করে, ডিনারে যান ও ঘুরে বেড়ান। এছাড়া বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতেও পছন্দ করেন তিনি।
বিনোদনের জন্য পড়ুন: ডা. হাওয়ার্ড টাকা বলেন, ‘নিউরোলজি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা ধরনের বই পড়ার পাশাপাশি আমি জীবনী ও গোয়েন্দা গল্প পড়তে পছন্দ করি। মনে রাখবেন, একটি ভালো বই, কথাসাহিত্য বা নন-ফিকশনে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে পারলে মস্তিষ্কের অনেক উপকার ঘটে।’
‘মস্তিষ্কে নতুন নতুন তথ্য জমা হতে থাকে। আমি বিশ্বাস করি, বই পড়ার অভ্যাস স্মরণশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত পছন্দের বই পড়ুন।’ সূত্র: সিএনবিসি/টাইমস অব ইন্ডিয়া